করোনা নিয়ন্ত্রণের সুফল পাচ্ছে চীনের অর্থনীতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে করোনা নিয়ন্ত্রণের সুফলকে সবচেয়ে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে চীন। জি-২০ভুক্ত দেশগুলোর (বিশ্বের বৃহৎ ২০ অর্থনীতির দেশগুলোর আন্তর্জাতিক ফোরাম) মধ্যে চীনই সবার আগে কভিড-১৯-এর সংক্রমণজনিত মন্দা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। অন্য সব দেশের আগে চীনে সংক্রমণ ছড়ালেও বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) মধ্যেই আর্থিক পুনরুদ্ধারের পথে সচল হয়ে উঠতে পেরেছে দেশটি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপসহ যেসব দেশে চীনের পরে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, স্থবিরতা প্রতিকূলতার ধারা কাটিয়ে এখনো অগ্রগতির ধারায় ফিরতে পারেনি সেগুলোর অর্থনীতি। খবর ব্লুমবার্গ।

চীনের উহানে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথম কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে। অর্থনীতিতে করোনাজনিত ক্ষতি কাটিয়ে পুনরুদ্ধারের পথে দেশটির সাম্প্রতিক উত্তরণের পেছনে মহামারী নিয়ন্ত্রণে সফলতাই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদরা।

ম্যাকেঞ্জির এক সাম্প্রতিক ব্রিফিংয়ে বলা হয়, যেসব দেশ করোনার সংক্রমণ সাফল্যের সঙ্গে কমিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে, সেগুলো নিজের অর্থনীতি পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রেও সফল হয়েছে।  এসব দেশের জন্য ভাইরাসটির সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণের পেছনে দুটি বিষয় কাজ করেছেপ্রথমত, তারা বুঝতে পেরেছে কী করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, তা ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।

প্রতিষ্ঠানটির মূল্যায়ন সব দেশের জন্য সমানভাবে না খাটলেও চীনের ক্ষেত্রে অক্ষরে অক্ষরে ঠিক। ব্লুমবার্গ জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) রেকর্ড সংকোচনের মধ্যেও নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশ বুদ্ধিদীপ্তভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে চীন। গত ছয় মাসে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে চীনে সংক্রমণ শনাক্ত করোনাজনিত মৃত্যুর হার ছিল সবচেয়ে কম। অন্যদিকে একই সময়ে অর্থনৈতিক জায়ান্ট দেশগুলোয় চীনের চেয়ে কম হারে কর্মসংস্থান কমেছে শুধু জাপানে। জি-২০ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে চলতি বছর জিডিপি শিল্পোৎপাদনে প্রবৃদ্ধি অর্জনের শক্তিমত্তাও এখন শুধু চীনেরই আছে।

যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনীতিতে স্বল্প প্রবৃদ্ধি বা শূন্য প্রবৃদ্ধির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, সেখানে টানা ৩৩তম বছরের মতো সম্প্রসারণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে চীনের অর্থনীতি। মোট বৈশ্বিক জিডিপিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যুক্তরাষ্ট্রের অবদান ৪২ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মধ্যে পরিচালিত ব্লুমবার্গের এক জরিপে পাওয়া পূর্বাভাস বলছে, চলতি বছর ইইউর অর্থনীতিতে সংকোচন হবে শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে সংকুচিত হতে পারে দশমিক শতাংশ হারে।

চীনের অর্থনীতি যে সম্প্রসারণের দিকে এগোচ্ছে, দেশটির রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান চায়না এভারগ্রিন গ্রুপের বর্তমান ব্যবসায়িক পরিস্থিতির দিকে নজর দিলেই তার কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বৈশ্বিক আবাসন খাতের সবচেয়ে বেশি দেনাগ্রস্ত কোম্পানি হিসেবে কুখ্যাতি রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। প্রতিষ্ঠানটির মোট দায়ের পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ। মার্চের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারমূল্য অব্যাহত আকারে বেড়েছে। বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরাও এখন গোটা চীনে স্থাবর সম্পদ কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানটির ওপর বেশ আস্থাশীল।

অর্থনীতির ব্যাপ্তি যেমনই হোক না কেন, অন্য কোনো দেশের অর্থনীতিতে চীনের মতো এতটা ভালো স্বাস্থ্যের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। জি-২০ ফোরামের দেশগুলোর মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণের দিক থেকে চীনের পরই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি জার্মানি। দেশগুলোর অর্থনীতি এখনো খুব একটা আশাজাগানিয়া পারফরম্যান্স দেখাতে পারছে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় জার্মানির কথা। ব্লুমবার্গের জরিপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর শতাংশ হারে সংকুচিত হবে জার্মানির অর্থনীতি। পরবর্তী দুই বছরে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার আটকে থাকতে পারে দশমিক শতাংশের আশপাশে, যা সময় জি-২০ দেশগুলোর সম্ভাব্য গড় প্রবৃদ্ধি শতাংশের চেয়েও কম।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃতের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে চীনের অংশ মাত্র দশমিক শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরুতে জনগণকে মাস্ক পরায় নিরুৎসাহিত করেছিলেন এবং দাবি করছিলেন, ভাইরাসটি একসময় নিজ থেকেই উধাও হয়ে যাবে; সেখানে মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ট্রাম্প নিজেও। মোট বৈশ্বিক মৃত্যুর প্রায় ২১ শতাংশই ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬৪৪ জনের, যা চীনের চেয়ে প্রায় ২১৫ গুণ বেশি। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনার দিক থেকে জি-২০ভুক্ত অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কর্মসংস্থান কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ, যেখানে জি-২০ দেশগুলোয় এর গড় হার সাড়ে শতাংশ।

ব্লুমবার্গ সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, গত প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মার্কিন শিল্পোৎপাদন কমেছে ১৪ শতাংশ। চলতি বছর দেশটিতে শিল্পোৎপাদন কমবে সাড়ে শতাংশ। আগামী বছর দশমিক শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের আগে চলতি বছর দেশটির জিডিপি সংকুচিত হতে পারে দশমিক শতাংশ।  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন