জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বান্দরবান

তিনটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের দুটিই অচল

বণিক বার্তা প্রতিনিধি বান্দরবান

পার্বত্য এলাকায় নিরাপদ পানি সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০১৪-১৫ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুই বছর মেয়াদে বান্দরবান পৌরসভায় তিনটি মিনি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ছয়টি গভীর নলকূপ স্থাপন করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) কিন্তু চার বছর আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও শুরু থেকেই অচল একটিসহ দুটি মিনি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট মানুষের কোনো কাজে আসছে না। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় বান্দরবান ফায়ার সার্ভিসের নামে বরাদ্দকৃত একটি গভীর নলকূপ অন্যত্র স্থাপন করায় সেটিরও সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।

ডিপিএইচই অফিস সূত্র জানায়, বান্দরবানে ২০১৪-১৫ ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদে তিনটি মিনি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ছয়টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। প্রতিটি প্লান্ট স্থাপন করতে ব্যয় হয় ৩০ লাখ ৬৮ হাজার ৫০১ টাকা প্রতিটি গভীর নলকূপ স্থাপন ব্যয় হয় ২০ লাখ ২৪ হাজার ৮৬৫ টাকা। মোট কোটি ১৩ লাখ ৫৪ হাজার ৬৯৩ টাকা ব্যয়ে বান্দরবান পৌরসভায় করা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রতন সেন তঞ্চঙ্গ্যা। কিন্তু কাজ বাস্তবায়ন করে শহীদ নেজাম নামে অন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ক্যচিংঘাটা নতুনপাড়া, উজানীপাড়া ইসলামপুরে একটি করে মিনি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হয়। এছাড়া বান্দরবান ফায়ার সার্ভিস, জেলখানা, কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পুলিশ সদর সার্কেল একটি করে বালাঘাটা পুলিশ লাইনে দুটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষের এক বছর পর নিয়ম অনুযায়ী জামানতের টাকা ঠিকাদারকে ফেরত দেয়া হয়েছে। তবে জামানতের টাকা প্রদানের আগে স্থাপিত সব মিনি ট্রিটমেন্ট প্লাট পরিদর্শন করেছেন কিনা তা জানা নেই সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের।

ডিপিএইচইর প্রাক্কলনকারী খোরশেদ জানান, নির্মাণের পর থেকে মিনি ট্রিটমেন্ট প্লান্টগুলোর জীবনকাল ৪০ বছর গভীর নলকূপগুলোর ২০ বছর করে ধরা হয়।

সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, মিনি ট্রিটমেন্ট প্লান্টগুলোর মধ্যে ক্যচিংঘাটা নতুনপাড়ারটি সচল রয়েছে। এলাকাবাসী প্লান্টের সুফল ভোগ করছেন। তবে উজানীপাড়ায় ডিপিএইচইর পাম্প হাউজে করা প্লান্টটি স্থাপনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সচল হয়নি। দীর্ঘদিন অব্যবহূত থাকায় আরসিসি দিয়ে করা প্লান্টটির মূল রিজার্ভারের অভ্যন্তরে বিভাজিত বিভিন্ন আকৃতির সব ট্যাংকগুলোয় দূষিত পানি, ছত্রাক, আগাছায় ভরে গেছে। অন্যদিকে মুসলিমপাড়ায় স্থাপিত পানিবিহীন প্লান্টটিতে পানি পরিশোধনের জন্য দেয়া পাথরের কংক্রিটের ওপর নানা আগাছা জন্মেছে। এদিকে বরাদ্দ হওয়া ছয়টি নলকূপের মধ্যে মধ্যে পাঁচটি নির্ধারিত স্থানে স্থাপন করা হলেও ফায়ার সার্ভিস ভিটায় স্থাপন দেখানো গভীর নলকূপটির খোঁজ মেলেনি।

স্থানীয়রা জানান, মুসলিমপাড়ার প্লান্টটি প্রথমে কয়েক মাস সচল ছিল। এর পর থেকে তিন বছরের বেশি সময় ধরে অকেজো অবস্থায় রয়েছে। পানি পরিশোধনের জন্য করা বিভাজিত ট্যাংকের একটিতে বসানো অন্য একটি মোটরের সাহায্যে পাড়ার উপরের অন্য একটি রিজার্ভার ট্যাংকে পানি তোলা হয়। সেখান থেকে এলাকার ৮০-৮৫ পরিবারের মাঝে পানি সরবরাহ করা হয়। তবে পানি পান করা যায় না।

প্লান্টটি পাশেই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ডিপিএইচইর স্টাফ অনিল বড়ুয়া। তিনি বলেন, প্লান্টটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব মৃদুল কান্তি দে নামে এলাকার এক দোকানদারকে দেয়া আছে।

মৃদুল জানান, বিভাজিত ট্যাংকগুলোর একটিতে বসানো মোটরের সাহায্যে পাহাড়ের উপরে অন্য একটি ট্যাংকে পানি তোলার দায়িত্ব পালন করছি। প্লান্টটির নির্মাণকারী ঠিকাদারের সাব-কন্ট্রাক্টর আশরাফ এলাকাবাসীর সামনে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু উপরের ট্যাংক থেকে এলাকায় সরবরাহ করা সাঙ্গু নদের অপরিশোধিত পানি ঘোলা হওয়ায় শুধু গোসল করা কাপড়, হাঁড়ি-পাতিল ধোয়া যায়। তাই পান অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য বাধ্য হয়ে নিজেদের যৌথ উদ্যোগে করা রিংওয়েল থেকেই পানি ব্যবহার করছেন এলাকাবাসী।

এদিকে উজানীপাড়ার ওয়াটার পাম্প হাউজে স্থাপিত প্লান্টটি সরেজমিন পরিদর্শনকালে ডিপিএইচইর স্টাফ সুরুজ মিয়া বলেন, প্লান্টটির ট্যাংক নির্মাণের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো কাজে আসেনি।

প্লান্টের নিকটবর্তী বাসিন্দা সুয়ালক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রিনিক্ষ্যং মৌজার হেডম্যান রাংলাই ম্রো বলেন, নির্মাণের পর থেকে বৃষ্টির পানি ভরে বিভাজিত ট্যাংক থেকে বছরজুড়ে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। এছাড়া ট্যাকে জমে থাকা পচা পানি এখন মশা উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

এদিকে ২০১৪-১৫ বা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কোনো গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়নি বলে দাবি করেছেন ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের বান্দরবানের সহকারী পরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, অফিশিয়াল রেকর্ডপত্রে ধরনের পানি প্রযুক্তি স্থাপন সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস কম্পাউন্ডে ডিপিএইচইর স্থাপন করা গভীর নলকূপটিও দৃশ্যমান নয় বলে জানান তিনি।

এসব বিষয়ে ঠিকাদার রতন সেন তঞ্চঙ্গ্যা বণিক বার্তাকে বলেন, আমার লাইসেন্স ব্যবহার করে কে বা কারা কাজ করেছে তা মনে নেই।

অন্যের লাইসেন্সে ঠিকাদারি কাজ করা প্রসঙ্গে মো. শহীদ নেজাম বলেন, আয়কর দিতে হয় না, তাই পাহাড়ি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ করি। আয় করে অনেক টাকা আসে। ফায়ার সার্ভিসের নামে বরাদ্দ হওয়া একটি গভীর নলকূপ ওই এলাকার এক প্রভাবশালীর জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। নলকূপ মিনি ট্রিটমেন্ট প্লান্টগুলো সচল বলে দাবি করেন তিনি।

উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মঞ্জেল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের নামে বরাদ্দ পাওয়া নলকূপটি ফায়ার সার্ভিস এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের নতুন বাড়িতে স্থাপন করা আছে। এখন পর্যন্ত সব প্রযুক্তি সচল রয়েছে।

এসব বিষয়ে ডিপিএইচইর বান্দরবান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সোহরাব হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের গভীর নলকূপটি ফায়ার সার্ভিস এলাকাতেই আছে। যাতে কোনো বিচ্যুতি না ঘটে, সেজন্য মিনি ট্রিটমেন্ট প্লান্টসহ গভীর নলকূপগুলো নির্মাণের সময় সর্বোচ্চ কারিগরি দিক অনুসরণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন প্লাটগুলো বন্ধ আছে কিনা তা আমি বলতে পারব না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন