করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর রাস্তায় ট্রাফিক ও মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। এতে বসন্তের এ সময়ে সাদা-মুকুটযুক্ত পুরুষ চড়ুই পাখিরাও পরিবেশের সঙ্গে মিল রেখে ধীরে ধীরে গান গাওয়া শুরু করে। যদিও শান্ত পরিবেশ থাকায় গানগুলো আরো শ্রবণযোগ্য হয়ে উঠেছে। সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষকদের মতে, শহর কোলাহলপূর্ণ থাকায় পাখিরাও তাদের গানের স্বরের ব্যান্ডউইথ বৃদ্ধি করেছিল এবং কোলাহল কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারাও ধীরে গান গাওয়া শুরু করে। গানের মাধ্যমে পুরুষগুলো নারী চড়ুইদের কাছে নিজেদের আকর্ষণীয় করে তোলে।
মহামারীর কারণে মার্চের মাঝামাঝি স্কুল, দোকান, রেস্তোরাঁ ও কাজের জায়গাগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সান ফ্রান্সিসকোর ট্রাফিক, নির্মাণ ও লোকজনের গুঞ্জন কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। আপেক্ষিক শান্ত পরিবেশে নগরবাসী পাখিদের কোলাহল লক্ষ করা শুরু করে।
গবেষণাটি করেছেন টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী যোগাযোগ গবেষক এলিজাবেথ ডেরিবেরি ও তার সহকর্মীরা। ডেরিবেরি বেশ কয়েক বছর ধরে সান ফ্রান্সিসকোজুড়ে গোলমাল শহুরে পরিবেশে এবং শান্ত গ্রামীণ পরিবেশে সাদা-মুকুটযুক্ত পুরুষ চড়ুইয়ের গানের তুলনা ও অধ্যয়ন করছেন। নারী চড়ুই খুব কম গান গায়।
গায়কপাখিদের যোগাযোগ নিয়ে গবেষণা করা ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের জেফ পোডোস বলেছেন, গবেষকরা একটি নিখুঁত অবস্থানে ছিলেন। কারণ তাদের কাছে মহামারীর আগের সময়ের পরিমাণগত ডাটা ছিল। মহামারীর মাঝে তারা দুর্দান্ত এ সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে।
এটি একটি অনন্য সুযোগ হতে পারে। তবে ডেরিবেরি প্রাথমিকভাবে বিষয়টিতে মনোযোগ দিতে পারেননি। তিনি বলেন, একটা দুই বছর বয়সী ও একটা আট বছর বয়সী সন্তানদের নিয়ে আমি বাড়িতে ছিলাম এবং কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। এর মধ্যে শিশুদের ভার্চুয়াল স্কুল সামাল দিতে হয়েছে। আমি মনে করি, আমরা সবাই এ লকডাউনের কারণে ধাক্কা খেয়েছি। সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট ব্রিজের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েলাম। ওহ, এটা সত্যিই ফাঁকা। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে ঘটেছিল। এক বছর আগে যেখানে শব্দের মাত্রাগুলো রেকর্ড করা হয়েছিল, ঠিক সেখানেই আমরা আবার রেকর্ড করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
দলটি প্রথম নিশ্চিত হয়েছিল যে শহরে শব্দ প্রকৃতপক্ষে কমেছে। তাদের রেকর্ডে দেখা গেছে, ব্যাকগ্রাউন্ড শব্দ গড়ে ৭ ডেসিবল হ্রাস পেয়েছে, যা গ্রামাঞ্চলের মতো ছিল। পূর্ববর্তী গবেষণায় দলটি খুঁজে পেয়েছিল শহরের পাখিগুলো গ্রামীণ পাখিদের তুলনায় জোরে ও উচ্চতর ফ্রিকোয়েন্সিতে গান গায়। আর লকডাউনে দলটি খুঁজে পেয়েছে, শহরের পাখিগুলোও খুব শান্ত হয়েছিল এবং ধীরে গান গাইছে।
দ্য সায়েন্টিস্ট