সংকটে আসামের চা শিল্প

উৎপাদন কমছে এক-চতুর্থাংশ ক্ষতি ১২০০ কোটি রুপির

বণিক বার্তা ডেস্ক

একদিকে নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর ধাক্কা, অন্যদিকে ভয়াবহ বন্যা দুইয়ের জের ধরে চরম সংকটে পড়েছে আসামের চা শিল্প। করোনার কারণে টানা লকডাউন শ্রমিক সংকটে বছরের শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যটিতে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ কমে এসেছে। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন শিল্পসংশ্লিষ্টরা। সব মিলিয়ে করোনা বন্যায় আসামের চা শিল্পে এবার লোকসানের পরিমাণ হাজার ২০০ কোটি রুপি (ভারতীয় মুদ্রা) ছাড়াতে পারে। খবর ইন্ডিয়া টুডে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

আসামের চা শিল্পের বয়স প্রায় ১৮০ বছর। রাজ্যটিতে ৮০৩টি রেজিস্টার্ড চা বাগান আরো ১০ হাজারের মতো ছোট ছোট চা বাগান রয়েছে। দুটো বিশ্বযুদ্ধ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, অর্থনৈতিক মন্দা, ভয়ংকর ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা পার করে এসেছে শিল্প। তবে আগে কখনই এত বড় উৎপাদন হ্রাস লোকসানের মুখে পড়তে হয়নি আসামের চা শিল্পসংশ্লিষ্টদের।

টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) আসামের বাগানগুলোয় সব মিলিয়ে ২২ কোটি ২৩ লাখ ৭০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার কেজি কম। ২০১৯ সালের জানুয়ারি-জুলাই সময়ে আসামে সব মিলিয়ে ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। আর ২০১৯ সালে রাজ্যে সব মিলিয়ে ৭১ কোটি ৬৪ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে।

আগস্টে আসামে চায়ের পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনের হিসাব এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে টি বোর্ড অব ইন্ডিয়া বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে আসামে পানীয় পণ্যটির সম্মিলিত উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বা এক-চতুর্থাংশ কমেছে। ফলে গত বছরের মতো এবার আসামে ৭০ কোটি কেজির বেশি চা উৎপাদন হবে না। লোকসান হবে শিল্পসংশ্লিষ্টদের। আর্থিকভাবে লোকসানের সম্ভাব্য পরিমাণ হাজার ২০০ কোটি রুপি ছাড়াবে।

মার্চ-এপ্রিল আসামের বাগানগুলোয় মৌসুমের প্রথম পর্যায়ের চা পাতা সংগ্রহের সময়। চলতি বছর সময়টায় টানা লকডাউন চলেছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ছুটিতে ছিলেন শ্রমিকরা। অনেক কারখানার কার্যক্রম হয় বন্ধ ছিল, নয়তো সীমিত করা হয়েছিল। ফলে ওই সময় প্রথম পর্যায়ের চা পাতা সংগ্রহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

ওই সময় করোনা সংক্রমণের লাগাম টানতে চায়ের নিলাম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় খাতসংশ্লিষ্টরা। ২৩ এপ্রিল থেকে সরকারি অনুমতি সাপেক্ষে গুয়াহাটি টি অকশনের কার্যক্রম ফের চালু হয়। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত আসামে সাকল্যে কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে টি বোর্ড অব ইন্ডিয়া। গত বছরের একই সময়ে আসামে সব মিলিয়ে ১৯ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা বিক্রি হয়েছিল।

বিষয়ে টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (টিএআই) আসাম শাখার সেক্রেটারি দীপাঞ্জন ডেকা বলেন, লকডাউনের সময় শ্রমিক সংকটে বাগানগুলো থেকে প্রথম পর্যায়ের চা পাতা সংগ্রহ কার্যক্রম কার্যত স্থবির ছিল। এটা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলেছে আসামের চা শিল্পসংশ্লিষ্টদের। ধাক্কা না সামলাতেই বন্যার কারণে চা শিল্পের চ্যালেঞ্জ আরো বেড়েছে। সব মিলিয়ে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন কমেছে এক-চতুর্থাংশ।

তিনি আরো বলেন, বছরের মাঝামাঝি সময়ে ধারণা করা হচ্ছিল এবার আসামে চা উৎপাদন ৪৫-৫০ শতাংশ কমতে পারে। তবে ক্ষুদ্র উৎপাদনকারী ছোট ছোট বাগানের অল্প পরিসরে উৎপাদন কার্যক্রম চলমান থাকায় এর পরিমাণ ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তা না হলে সম্ভাব্য আর্থিক লোকসানের পরিমাণ হাজার ২০০ কোটির রুপির চেয়ে অনেক বেশি হতো।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন