কভিড-১৯-এর ডাটা-কাণ্ডে বদলে যাচ্ছে গবেষণা রিভিউ প্রক্রিয়া

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯-সংক্রান্ত একটি হাই-প্রোফাইল পেপার প্রত্যাখ্যানের পর দ্য ল্যানসেটের সম্পাদকরা গবেষক সম্প্রদায়কে নিশ্চিত করেছেন যে তারা তাদের শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। জার্নালটি হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ঝুঁকি নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে, যা মূলত একটি অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধ, যেটি বৈজ্ঞানিক রাজনৈতিক বিতর্কের মাঝেও কভিড-১৯-এর চিকিৎসার জন্য প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু জুনে গবেষকরা এটুকু প্রমাণ করতে পারেননি যে রোগীদের ডাটার অস্তিত্ব রয়েছে। ফলে সম্প্রতি এটি নীতিমালা ঘোষণা করেছে, যা তাত্ক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে।

পিয়ার রিভিউতে মহামারীর প্রভাব সম্পর্কিত একটি এডিটোরিয়ালে এডিটররা সম্মিলিতভাবে লিখেছেন, আমরা শিখতে চাই কীভাবে ঝুঁকি হ্রাস করা যায় এবং পদ্ধতিতে উন্নতি সাধন করা যায়।

মে মাসে প্রকাশিত এবং এখন প্রত্যাহার করা গবেষণাটির ভিত্তি ছিল শিকাগোভিত্তিক সুরগিস্পেরের ডাটা। যা বিশ্বজুড়ে শত শত হাসপাতাল থেকে রোগীর তথ্য সংগ্রহ বিশ্লেষণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু গবেষণাপত্রের মূল দাবি ছিল, অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধটি কভিড-১৯- আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু পর্যবেক্ষকরা প্রশ্ন তুলেছেন গবেষণার বৃহৎ নমুনার আকার এবং রোগীর ডেমোগ্রাফিক ডোজিংয়ের বিস্তারিত বিবরণ সম্পর্কে। দ্য ল্যানসেট গবেষণাপত্রটি প্রত্যাহার করে নেয় যখন সুরগিস্পেরের স্বাধীন অডিটের জন্য ডাটা প্রদান করতে অস্বীকার করে। একই দিন দি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন (এনইজেএম) আরো একটি গবেষণা প্রত্যাহার করে নেয়, যেখানে সুরগিস্পেরের ডাটা ব্যবহার করা হয়, যেখানে দেখা গিয়েছিল রক্তচাপের নির্দিষ্ট ওষুধ কভিড-১৯-এর কারণে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায় না।

দ্য ল্যানসেটের নতুন মানদণ্ড এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যেন পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার ফাঁকগুলো বন্ধ করে দেয়া যায়, যে পথের মাধ্যমে সুরগিস্পেরের ফলগুলো উপলব্ধ হয়েছিল। গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল মাত্র চারজন গবেষকের মাত্র একজনের (সুরগিস্পেরের প্রতিষ্ঠাতা স্বপন দেশাই) প্রাথমিক ডাটায় প্রবেশাধিকার থাকার পরও। যেখানে তার সহগবেষক হাভার্ড ইউনিভার্সিটির কার্ডিওলজিস্ট মানদ্বীপ মেহরা, ইউনিভার্সিটি হসপিটাল জুরিখের ফ্রাঙ্ক রুশিটজকা এবং ইউনিভার্সিটি অব উটাহর সহযোগী ফ্যাকাল্টি মেম্বার অমিত প্যাটেল জুনে ঘোষণা করে বলেছিলেন যে তাদের ডাটার সত্যতার পক্ষে আর কোনো আস্থা নেই।

দ্য ল্যানসেটের এখন গবেষক প্রয়োজন, যেখানে একজনের বেশি প্রবেশযোগ্যতা পাবেন গবেষণার তথ্যকে প্রত্যয়িত যাচাই করার জন্য।

একাডেমিক ল্যাব কমার্শিয়াল কোম্পানিগুলোর মধ্যকার সহযোগিতায় একজন একাডেমিক গবেষককে অবশ্যই প্রত্যয়িত করতে হবে যে তারা ডাটাগুলো দেখেছেন। জার্নালে সব গবেষণাপত্রের লেখকরা কী ডাটা ভাগাভাগি করবেন, প্রবেশের মানদণ্ড কী হবে এবং কীভাবে তারা এগুলো উপলব্ধ করবেন তার বিশদের জন্য গবেষকদের প্রয়োজন হবে। মানদণ্ড এর আগে প্রয়োগ করা হতো কেবল ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের রিপোর্টগুলোর জন্য, সুরগিস্পেরের মতো পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোর জন্য নয়।

এনইজেএম নিজেদের পিয়ার পরিবর্তন করা নিয়ে একই ধরনের বক্তব্য দেয়নি। কিন্তু এর সম্পাদকরা দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন যে জার্নালে বড় হাসপাতালগুলোর মতো পর্যালোচকদের ব্যবহার করা প্রয়োজন ছিল।

যেকোনো গবেষণা যা কিনা বৃহৎ পরিসরে রোগীদের ডাটা সেটকে অন্তর্ভুক্ত করবে, ল্যানসেট বলেছে, তারা নিশ্চিত করবে যে অন্তত একজন পর্যালোচক এর সামর্থ্য সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে মন্তব্য করবে। এটি বিজ্ঞানী ডাটা বিজ্ঞান উভয়ের বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করবে। পাশাপাশি এটি পর্যবেক্ষকদের নির্দিষ্টভাবে জিজ্ঞাসা করবে, তাদের গবেষণার সত্যতা কিংবা পাবলিকেশনের নৈতিকতার সম্পর্কে তারা উদ্বিগ্ন কিনা। তবে সুইডেনভিত্তিক গবেষক লনি বেসানকোন এটুকুই যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন।

সায়েন্সম্যাগ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন