নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে কাপ্তাই হ্রদে

প্রান্ত রনি রাঙ্গামাটি

তিন মাস ১০ দিন নিষেধাজ্ঞার পর গতকাল মধ্যরাত থেকে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু হয়েছে সকাল থেকেই বিএফডিসির চারটি (রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই, মারিশ্যা মহালছড়ি) বিপণন কেন্দ্রে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে মাছ নিয়ে আসছেন জেলেরা

এদিকে দীর্ঘদিন পর মাছ আহরণ শুরু হওয়ায় খাতসংশ্লিষ্টদের মাঝেও দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য কাজে ফিরেছেন শ্রমিক-কর্মচারী, ব্যবসায়ী চালু হয়েছে বিএফডিসির তিনটি বরফকলও

জেলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অন্য বছরের তুলনায় বছর প্রথম দিনে অনেক বেশি মাছ আহরণ করা হয়েছে আহরিত মাছের মধ্যে ছোট মাছের আধিক্য বেশি এছাড়া বছর প্রথম দিকেই অতিরিক্ত মাছ আহরণের অন্যতম কারণ হলো কাপ্তাই হ্রদে পানিস্বল্পতা হ্রদে পানি কম থাকায় মাছ ধরা পড়ছে বেশি

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) সূত্র জানায়, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করাসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশে মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতি বছরের মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় বছরের আগস্ট থেকে শুরু হয় নতুন মৌসুম আগস্ট থেকে পরবর্তী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত নয় মাসকে মৌসুম ধরা হয় তবে বছর কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকায় অন্যান্য বছরের চেয়ে ১০ দিন পর অর্থাৎ ১১ আগস্ট থেকে মাছ আহরণ শুরু হয়েছে

বিএফডিসির রাঙ্গামাটি বিপণন কেন্দ্রে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, তিন মাস ১০ দিন মাছ ধরা বন্ধ ছিল তাই কাজকর্মও ছিল না এখানকার অনেকেই কাপ্তাই হ্রদে ওপর নির্ভরশীল অনেকেরই আয়-রোজগারের জায়গা বিএফডিসি এখন আবার মাছ ধরা শুরু হলো

কয়েকজন পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় হ্রদে বছর পানির পরিমাণ অনেক কম কারণে প্রথম দিনে অনেক মাছ ধরা পড়েছে, যা অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে অনেক ভালো কিন্তু এখন যদি কম পানিতে সব মাছ ধরা পড়ে যায় তবে মৌসুমের শেষ সময়ে হ্রদে মাছ আহরণ হবে না

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লে. কমান্ডার মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, প্রতি বছরই কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করাসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশে মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় তবে হ্রদে পানি কম থাকায় আমরা পানির অপেক্ষায় ১০ দিন পর আহরণ চালু করেছি ২০১৯-২০ অর্থবছরে কাপ্তাই হ্রদ হতে ১২ হাজার ৬৯৫ টন মাছ আহরিত হয়েছে; এর বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা চলতি বছরে এর চেয়ে ভালো হবে বলে প্রত্যাশা এছাড়া বছর আমরা কাপ্তাই হ্রদে ৪৩ টন কার্পজাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করেছি, যা বিগত সময়ের চেয়ে রেকর্ড পরিমাণ বেশি

তিনি আরো বলেন, গত বছর যখন হ্রদে মাছ আহরণ শুরু হয়; তখন হ্রদে পানির পরিমাপ ছিল ১০৫ এমএসএল চলতি বছর পর্যন্ত পানির পরিমাপ ৯৫ এমএসএল হ্রদে পানির জন্য বৃষ্টির অপেক্ষায় ১০ দিন দেরি হয়েছে স্বল্প পানির মধ্যে মাছ আহরণ শুরু করলে মাছ তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে এতে করে প্রাকৃতিক প্রজননে ব্যাঘাত ঘটলে শেষ সময়ে মাছ কমও থাকতে পারে হ্রদে; এটি অবশ্যই শঙ্কার বিষয় আবার তিন মাস হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় জেলেসহ শ্রমিক-ব্যবসায়ীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন জেলেদের তিন মাসের খাদ্যশস্য দেয়া হলেও বাড়তি সময়ের জন্য দেয়ার ব্যবস্থা নেই তাই নানা দিক বিবেচনায় আমরা স্বল্প পানির মাঝে ১০ দিন দেরি করে আহরণ শুরু করেছি বৃষ্টিপাতের ওপর এখন সব কিছুই নির্ভর করছে

উল্লেখ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলাধার রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বদ্ধজলাশয়গুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ কাপ্তাই হ্রদের আয়তন প্রায় ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর, যা বাংলাদেশের পুকুরগুলোর মোট জলাশয়ের প্রায় ৩২ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ মোট জলাশয়ের প্রায় ১৯ শতাংশ ১৯৬১ সালে রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে হ্রদের সৃষ্টি হলেও এটি রাঙ্গামাটিতে মৎস্য উৎপাদন স্থানীয় জনসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন