লক্ষ্মীপুরে মেঘনার জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত ১১ হাজার হেক্টর ফসলি জমি

বণিক বার্তা প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুর

মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর, রায়পুর সদরসহ চার উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হঠাৎ নদীর পানি পাঁচ-ছয় ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসলসহ গবাদি পশু, মুরগির পোলট্রি খামার শতাধিক মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত বুধবার বিকালে হঠাৎ মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে এমন ক্ষতির শিকার হন উপকূলের বাসিন্দারা।

গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন শেষে তালিকা করে আর্থিক সহায়তার জন্য রামগতি, কমলনগর, রায়পুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করেছেন।

সূত্রে জানা যায়, জেলার রায়পুর থেকে সদর কমলনগর হয়ে রামগতি উপজেলা পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার নদীর তীর এলাকা। মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বেড়িবাঁধ। তাই অরক্ষিত হয়ে পড়ে এসব এলাকা। গত বুধবার বিকালে মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট বেড়ে যায়। সময় তীব্র বাতাস স্রোতে নদীর পানি হু-হু করে ঢুকে পড়ে উপকূল এলাকায়। মুহূর্তেই বিস্তীর্ণ জনপদ পানির স্রোতে ভেসে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা সদরের করাতিরহাট, চর রমণীমোহন, ভূঁইয়ার হাট, চর মেঘা, রায়পুরের চর আবাবিল, খাসের হাট, চরলক্ষ্মী, চরবংশী, চর ভৈরবী, হাজীমারা, চর কাচিয়া, জালিয়ার চর, কুচিয়া মোড়া, চর ঘাশিয়া, টুনুর চর, কমলনগরের চর ফলকন, চর কালকিনী, চর লরেন্স, নবীগঞ্জ, নাছিরগঞ্জ রামগতি উপজেলার চর আবদুল্লাহ, চর গজারিয়া, চর গাজী, চর আলগী, বড়খেরী, তেলীর চর, আলেকজান্ডার, বালুর চর, সুজন গ্রাম, জনতা বাজার, সেবা গ্রামসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। নদীর তীর থেকে এসব এলাকার প্রায় চার কিলোমিটার পর্যন্ত জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। এতে দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

এদিকে রায়পুর উপজেলায় কয়েকটি মৎস্য ঘেরের প্রায় অর্ধকোটি টাকার মাছ জোয়ারে ভেসে গেছে। উপজেলার চর আবাবিলসহ কয়েকটি গ্রামের অন্তত তিন হাজার পানের বরজ পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষীরা।

অন্যদিকে কমলনগরের চর লরেন্স ইউনিয়নের তাজ পোলট্রি খামারের সাড়ে পাঁচ হাজার মুরগি জোয়ারের পানিতে ডুবে মারা গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে মুরগির খাবার। এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি খামারি মো. ওসমানের।

জেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে লক্ষ্মীপুর জেলার চারটি উপজেলা আউশ, রোপা আমন, বোনা আমন শাকসবজিসহ ১১ হাজার হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এতে রোপা আমনের ৩৭৫ হেক্টর জমির বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবারক হোসেন জানান, জোয়ারের পানিতে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ২৫ হাজার পরিবারের ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মোমিন বলেন, মেঘনার হঠাৎ জোয়ারে ছয়টি ইউনিয়ন রামগতি পৌরসভার আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি, গবাদি পশু ফসলি জমিসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ১০ হাজার পরিবারের মধ্যে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তাদের তাত্ক্ষণিক কিছু শুকনো খাবার দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসকের কাছে ত্রাণের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।

এদিকে গতকাল বিকাল থেকে মেঘনার জোয়ারে প্লাবিত এলাকাগুলোর পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাস্টার নুরুল আমিন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন