কভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা গ্রুপের বৈঠক

নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা হ্রাসে উদ্বেগ সংশ্লিষ্টদের

জেসমিন মলি

দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ক্রমেই কমছে। কভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা গ্রুপের সাম্প্রতিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বৈঠকে মানুষের মধ্যে করোনাভীতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থাহীনতা, বন্যা, ফি জমা দেয়ায় জটিলতা, ফল পাওয়ায় ভোগান্তি, একই ব্যক্তির একাধিকবার নমুনা পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত করা ইত্যাদি বিষয়কে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত কভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা গ্রুপের তৃতীয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম। বৈঠকে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সভাপতি। বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি জানান, মানুষের মধ্যে এখন করোনাভীতি কিছুটা কমে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া দুইবার টেস্ট করার বিষয়টিকেও এখন নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে ফি আরোপ করার বিষয়টিও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।

সভার আলোচনায় আরো উঠে আসে, এছাড়া ফি জমা দেয়ার ক্ষেত্রে জটিলতাও নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ বলে বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে।

আলোচনায় সভাপতি বলেন, শিশু, নারী, অসুস্থ রোগী বৃদ্ধদের বুথে নিয়ে নমুনা দিয়ে আসার বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে বাসায় এনে টেস্ট করাতে হলেনগদেরমাধ্যমে ফি জমা দিতে হচ্ছে। কিন্তু নগদের এজেন্ট স্বল্পতা রয়েছে এবং সব এজেন্টের মাধ্যমেও ফি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ যাতে সেবা সহজে পেতে পারেন, সেজন্যনগদছাড়াও আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিকাশ টেলিটকের মতো অন্য যেসব সহজ নন-ব্যাংকিং পদ্ধতি রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমেও ফি জমা দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে জনগণ নমুনা পরীক্ষার ব্যাপারে উৎসাহী এবং বিষয়টি সহজ করা সম্ভব হবে।

বৈঠকে নগদের পাশাপাশি বিকাশ টেলিটকের মাধ্যমে টেস্টিং ফি জমা নেয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। বিষয়ে হাসপাতাল উইং থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে বলেও বৈঠকে জানানো হয়।

এছাড়া সরকারিভাবে ফি নির্ধারণের ঘোষণার পর থেকেই করোনা টেস্টের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে বলে সভায় অভিমত দেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রসঙ্গত, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তে ব্যয়বহুল আরটি-পিসিআর পরীক্ষা বিনা মূল্যে করানোর সুযোগের অপব্যবহার বন্ধ করতে নমুনা পরীক্ষার ওপর ফি নির্ধারণ করেছিল সরকার। নিয়ে গত ২৮ জুন এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বুথ থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষায় ফি ২০০ টাকা, বাসা থেকে সংগৃহীত নমুনার জন্য ৫০০ টাকা হাসপাতালে ভর্তি রোগীর নমুনা পরীক্ষার জন্য ২০০ টাকা হারে ফি নির্ধারণের কথা জানানো হয়।

এছাড়া চলমান বন্যা, নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে ভোগান্তি, পরীক্ষার ফল পেতে দেরি হওয়া, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার প্রতি আস্থাহীনতা আক্রান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্তের কারণেও দেশে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা কমেছে বলে বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে নমুনা পরীক্ষায় মানুষের আগ্রহ কমার বিষয়টি স্বীকার করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের মুখপাত্র সহকারী পরিচালক আয়েশা আকতার। নমুনা পরীক্ষার ফি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতেই করোনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন