পাহাড়ের প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ‘মিশ্র ফল বাগান প্রকল্প’। একসময়ের পরিত্যক্ত ও অনাবাদি পাহাড়ের ঢালু জমিতে গড়ে উঠেছে দুই সহস্রাধিক মিশ্র ফলের বাগান। এতে একসময়ের অনাবাদি জমি এখন ফলে ভরে উঠছে। এ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থানের। বাগানের উৎপাদিত বিভিন্ন ফল-ফসল বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে শুরু হয় মিশ্র ফল বাগান প্রকল্প। এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।
মৃদুল কান্তি ত্রিপুরা এ প্রকল্পে একজন সুবিধাভোগী। তার পরিত্যক্ত দেড় একর উঁচু টিলা ভূমিতে সৃজিত বাগানে লাগানো হয়েছে মাল্টা, লিচু পেঁপের পাশাপাশি আম্রপালি আমের চারা। খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের ছয় মাইল এলাকায় বাগানটিতে চলতি মৌসুমে প্রচুর আম্রপালিসহ বিভিন্ন প্রজাতির আম ধরেছে। ১০০ আমের চারার এ বাগানে ফলন হয়েছে ১৫ মণেরও বেশি।
মৃদুল কান্তি ত্রিপুরা জানান, এ মিশ্র ফল বাগানটিই একমাত্র সম্বল তার। এবার আমের ফলন ভালো হওয়ায় লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। একই ভাবে চলতি বছর মাল্টা, পেঁপে ও লিচু বিক্রি করে বাগান থেকে তিনি আয় করেছেন প্রায় ২ লাখ টাকা, যা দিয়ে তার সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের পড়া লেখার খরচ জোগাচ্ছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মিশ্র ফল চাষ প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক মদন চাকমা বলেন, প্রকল্পের আওতায় প্রান্তিক চাষীদের বিনা মূল্যে বিভিন্ন ফলের চারা, প্রশিক্ষণ, সার বিতরণসহ উপকারভোগীদের বাগান নিয়মিত মনিটরিং ও তদারকি করছি আমরা।
পাহাড়ে মিশ্র ফল বাগান প্রকল্পের এ উদ্যোগকে প্রশংসনীয় উল্লেখ করে খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মর্ত্তুজ আলী বলেন, এর সঙ্গে কৃষি বিভাগকে সম্পৃক্ত করা গেলে আরো বেশি সুফল ভোগ করবেন কৃষকরা।
প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ে সমতল জমির অভাবে এখানে ফসল আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ খুবই সীমিত। কিন্তু ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান ও আবহাওয়া বিবেচনায় এখানকার অনাবাদি ও পরিত্যক্ত টিলা ভূমিতে ফলদ বাগান ব্যাপক সম্ভাবনাময়। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় ‘মিশ্র ফল চাষ প্রকল্প’
বাস্তবায়ন করে আসছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খাগড়াছড়ি জেলায় ১ হাজার ৮২৫টি ও অন্য দুই জেলায় ৩ হাজার ১২৫টি মিশ্র ফল বাগান সৃজন করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বণিক বার্তাকে বলেন, মিশ্র ফল বাগান প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো পাঁচ হাজার দরিদ্র কৃষক পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এছাড়া উদ্যান উন্নয়ন, প্রক্রিয়াজাত ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পাঁচ হাজার কৃষকের দক্ষতা উন্নয়ন, কৃষকদের ফল বাগান সৃজনে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা, কৃষকের নার্সারি ব্যবসা উন্নয়নে সহযোগিতা করা এবং ১২৫টি মার্কেট শেড নির্মাণ ও পানির উৎস উন্নয়নের মাধ্যমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা।
বর্তমানে পার্বত্য এলাকার মোট ভূমির প্রায় ২২ শতাংশ উদ্যান ফসলের আওতায় আনার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য শতভাগ বাস্তবায়িত হলে এ এলাকার প্রান্তিক কৃষকরা আর্থিকভাবে পরিপূর্ণ স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন বলে মনে করছেন উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।
