রাজধানীর কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা আনাস ভূঁইয়া। জ্বর-সর্দিসহ উপসর্গ নিয়ে রাজধানীর দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মোট চারবার নমুনা দিয়ে এসেছেন তিনি। নমুনা পরীক্ষার ফলাফল হাতে পাননি ২৬ দিনেও। এ সময়ের পুরোটাই টানা আইসোলেশনে থেকেছেন তিনি। চিকিৎসা নিয়েছেন বাসায় থেকেই। ২৬ দিন আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হওয়ার পর এরই মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। যদিও এখনো নমুনা পরীক্ষার কোনো পজিটিভ বা নেগেটিভ সনদ হাতে পাননি তিনি।
মহামারীর মধ্যেই দেশের স্বাস্থ্য খাতের নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার তথ্য সামনে আসছে প্রতিনিয়ত। ফলে গোটা বিষয় নিয়ে একধরনের আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এমনকি আগ্রহ কমছে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রেও। ফাঁকাই পড়ে থাকছে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালগুলোর শয্যা ও আইসিইউ বেড।
দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গঠিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রের তথ্য বলছে, সারা দেশে কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর প্রায় ৭২ শতাংশ শয্যাই এখন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। একই সঙ্গে হাসপাতালগুলোর খালি পড়ে আছে অর্ধেকেরও বেশি আইসিইউ বেড।
সমন্বিত নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সারা দেশের হাসপাতালগুলোর মোট ১৪ হাজার ৬৬৪টি কভিড-১৯ শয্যায় রোগী ভর্তি আছে ১ হাজার ১৬৭ জন। ফাঁকা পড়ে রয়েছে ১০ হাজার ৪৯৭টি শয্যা, যা মোট শয্যার ৭১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এছাড়া ৩৭৪টি আইসিইউ বেডে এখন রোগী ভর্তি আছে ১৮৬ জন। সে হিসেবে আইসিইউ বেড খালি পড়ে আছে অর্ধেকেরও বেশি ১৮৮টি।
এর মধ্যে শুধু রাজধানী ঢাকায়ই ফাঁকা পড়ে আছে দুই-তৃতীয়াংশ করোনা শয্যা। রাজধানী ঢাকায় ৬ হাজার ৩০৪টি করোনা শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৫১। অর্থাৎ শুধু ঢাকা মহানগরীতেই করোনা শয্যা ফাঁকা পড়ে রয়েছে ৪ হাজার ২৫৪টি।
শয্যা ফাঁকা পড়ে থাকলেও দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনেও গতকাল সকাল পর্যন্ত দেশে নতুন করে ৩ হাজার ৯৯ জন নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে দেশে মোট সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৯৪-তে।
ঢাকার মতো প্রায় একই চিত্র দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরীতেও। এখানকার মোট ৬৫৭টি কভিড-১৯ শয্যার অর্ধেকের বেশিই ফাঁকা। রোগী ভর্তি আছেন মাত্র ৩১১ জন। চট্টগ্রামেও আইসিইউ বেড খালি পড়ে রয়েছে অর্ধেকের বেশি। মহানগরীর মোট ৩৯টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ২০টিই ফাঁকা। সারা দেশের অন্য জেলাগুলোয় রোগীদের আগ্রহ আরো কম। দেশের অন্য সব কভিড-১৯ হাসপাতালে মোট ৭ হাজার ৭০২টি শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে মাত্র ১ হাজার ৮০৫ জন। এসব হাসপাতালের ৫ হাজার ৮৯৭টি শয্যা খালি পড়ে আছে, যা মোট শয্যার ৭৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা কম হওয়ার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রেজা বণিক বার্তাকে বলেন, আগে রাজধানীতে কয়েকটি হাসপাতালে কভিড-১৯-এর চিকিৎসা দেয়া হতো। এখন সরকারি-বেসরকারিভাবে আরো বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এ সেবার সঙ্গে জড়িত হওয়ায় রোগী ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া সারা দেশেই এখন সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যাও কমেছে, ফলে রোগীদের হাসপাতালে আসার প্রবণতাও কমেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশে গতকাল সকাল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আরো ৩৯ জনের। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ৩৯১-এ।
তিনি আরো জানান, এ ২৪ ঘণ্টায় মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১২ হাজার ৩৫৮টি। আগের নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয়েছে ১২ হাজার ৪২৩টি। পরীক্ষা বিবেচনায় এ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫২ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ ও ৯ জন নারী। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছেন ৩৪ জন এবং বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ, ময়মনসিংহ বিভাগের এক, রংপুর বিভাগের দুই, সিলেট বিভাগের দুই, খুলনা বিভাগের সাত ও বরিশাল বিভাগের তিনজন বাসিন্দা।