অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আগে ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে

বণিক বার্তা ডেস্ক

ক্লেমেন ফুয়েস্ট, জার্মানির একজন শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ। সম্প্রতি সরকার এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে তিনি একটি সাক্ষাত্কার দিয়েছেন ডার স্পিয়েগেলকে সেটিরই চুম্বকাংশ এখানে তুলে ধরা হলো।

ডার স্পিয়েগেল: বর্তমান সময়ে রাষ্ট্র মানুষের প্রতিদিনকার জীবনে এবং অর্থনীতিতে নজিরবিহীনভাবে হস্তক্ষেপ করছে। মানুষের আচরণের নিয়ম ঠিক করা, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার প্রোগ্রাম এবং ভর্তুকি। এসব কি জরুরি ছিল?

ফুয়েস্ট: করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে সরকারগুলো সঠিকভাবেই কাজ করেছে। ধরনের সংকটে মার্কেট সঠিকভাবে কাজ করে না, তাই রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করা উচিত। তবে সংকটের তীব্রতা কেটে যাওয়ার পর রাজনীতিবিদদের জন্য জরুরি অবস্থা থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজে পাওয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা যেন রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিতে আটকে না যাই।

স্পিয়েগেল: আপনি কি কোনো বিপদ দেখছেন?

ফুয়েস্ট: হ্যাঁ। আমি মনে করি, সরকারি ব্যয় নিয়ে অনেক বেশি আলোচনার তুলনায় বেসরকারি খাতের প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা নিয়ে খুব কমই আলোচনা হচ্ছে। আমাদের সমৃদ্ধি রাষ্ট্র দ্বারা উৎপাদিত হয় না, বরং উদ্যোক্তা শ্রমিকদের দ্বারা হয়। অর্থনৈতিক সংকটের পর অর্থনীতি যখন দ্রুত পুনরুদ্ধার হতে শুরু করবে তখন বিষয়গুলো খুব একটা সহজ হবে না।

স্পিয়েগেল: যখন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে সরকার অর্থনীতির বড় একটি অংশ থামিয়ে দেয়। লকডাউন কি অতিরিক্ত ছিল?

ফুয়েস্ট: না। স্প্যানিশ ফ্লুর মতো অতীতের মহামারীগুলো বলছে, রোগের সঙ্গে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে লড়ার জন্য অর্থনৈতিক ক্ষতি সামান্য বিষয়। ভাইরাসের বিস্তৃতি যতই বাড়তে থাকবে, মানুষ নিজে নিজেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমিয়ে আনবে। সংক্রমণের ভয়ে তারা ভোগ উৎপাদন দুটোই কম করবে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আগে অবশ্যই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। করোনার সংকটে স্বাস্থ্য অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে যে দ্বন্দ্বের কথা প্রায়ই আলোচনা হচ্ছে, তার কিন্তু কোনো অস্তিত্ব নেই।

স্পিয়েগেল: তবু অনেক কোম্পানি বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছে এবং এখন তাদের রাষ্ট্র দ্বারা উদ্ধার করতে হবে হয় ঋণ দিয়ে অথবা সরাসরি ইকুইটি ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে। আমরা কি একধরনের করোনা সমাজতন্ত্রের মুখোমুখি?

ফুয়েস্ট: আমি আশা করি না। রাষ্ট্রের জন্য যেটা সঠিক হতে পারে তা হলো কোনো কোম্পানিতে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তাকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচানো। কিন্তু তখন সরকারের উচিত শর্তারোপ করা যে কোম্পানিগুলো সাময়িকভাবে লভ্যাংশ প্রদান করতে পারবে না। যেমন রাষ্ট্রের জন্য এটা ভুল হবে যে অপারেশনাল বিজনেসের হস্তক্ষেপ করা।

স্পিয়েগেল: কিন্তু রাষ্ট্র এখন সহ-মালিক। উদাহরণস্বরূপ পরিবেশবান্ধব উৎপাদন পদ্ধতির জন্য এর চাপ তৈরি করা কি দায়িত্ব নয়?

ফুয়েস্ট: না। রাষ্ট্র যদি পরিবেশ রক্ষা করতে চায়, তাহলে তার এই শর্ত সব কোম্পানির জন্য প্রয়োগ করা উচিত, কেবল তারা যেগুলোর মালিক তাতে আরোপ করলে হবে না।

স্পিয়েগেল: লুফথানসা রাষ্ট্র থেকে প্রায় বিলিয়ন ইউরো গ্রহণ করেছে এবং একই সময়ে তারা ২২ হাজার লোককে চাকরি থেকে ছাঁটাই করতে চাইল। সরকারের উচিত না এমন কিছু প্রতিরোধ করা?

ফুয়েস্ট: রাষ্ট্রের উচিত নয় চাকরির নিশ্চয়তা দেয়া যদি ব্যবসার মডেল আর কাজ না করে। এখানে ইঙ্গিত আছে যে মানুষ সংকটের পর খুব বেশি বিমান ভ্রমণ করবে না। লুফথানসাকে সেজন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, সেটা চাকরি থেকে লোকজন ছাঁটাই করে হলেও।

স্পিয়েগেল: রাষ্ট্র ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার জন্য কিউরভ্যাকে বিনিয়োগ করেছে। এর কোনো

অর্থ হয়?

ফুয়েস্ট: না। কিউরভ্যাক একটি সচ্ছল কোম্পানি। আর এখানে দেউলিয়াত্ব কিংবা অধিগ্রহণের কোনো হুমকিও নেই। 

স্পিয়েগেল: ফেডারেল অর্থমন্ত্রী পিটার অ্যাল্টমায়ার করোনা ভ্যাকসিন সুরক্ষিত করতে চান এবং তিনি চান হাই-টেক কোম্পানিগুলো যেন জার্মানিতে থাকে। সে সঙ্গে তিনি চান বিদেশী ক্রেতারা যেন কিনতে না পারেন। এসব কারণ কি যথেষ্ট নয়?

ফুয়েস্ট: জার্মান সরকার আইন জোরদার করছে বিদেশী দখল যাতে ঠেকানো যায়। যখন প্রয়োজন হবে তখন এটা ব্যবহার করা যাবে।  যদি রাষ্ট্র ভ্যাকসিন সরবরাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন বোধ করে, তবে তারা প্রাসঙ্গিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে পারে। এখানে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকা ঠিক না, কারণ এতে প্রতিযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

স্পিয়েগেল: জার্মান সরকার চায় না মেডিকেল উপকরণের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল হতে এবং নিশ্চিত করতে চায় বেশির ভাগ উৎপাদন যেন জার্মানিতেই হয়। এটা কি বুদ্ধিমানের কাজ?

ফুয়েস্ট: আপনার উচিত হবে ঘরোয়া উৎপাদনের সঙ্গে সাপ্লাই সিকিউরিটিকে যুক্ত করা। এমনকি জার্মানিতেও, একটি মহামারী বিস্ফোরিত হতে পারে কিংবা অন্য কোনো কারণে উৎপাদন থেমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে ঘরোয়া উৎপাদন কোনো কাজে আসে না। তাই এটা ভালো যে বিভিন্ন দেশ থেকে সাপ্লাই অব্যাহত থাকা।

স্পিয়েগেল: সংকটের কারণে বিশ্ববাণিজ্য দুর্বল হয়ে পড়েছে। সাপ্লাই চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সুরক্ষাবাদ বাড়ছে। অর্থনীতিকে জাতীয়ভাবে আরো কেন্দ্রীভূত করা কি বোধগম্য নয়?

ফুয়েস্ট: উল্টোটা। সমাধান বর্তমানে বিশ্বায়নের মাঝেই বেশি রয়েছে, কম নয়।

স্পিয়েগেল: সংকটকালে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেকার ভাতা বাড়ানো। এই সিদ্ধান্ত কি ভুল?

ফুয়েস্ট: নাহ। এই চিন্তা ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা প্রদান করবে এবং গ্রাহক ব্যয়কে উৎসাহিত করবে। তবে সংকট যতই স্থায়ী হবে, অবকাঠামোগত পরিবর্তনও তত বেশি আনতে হবে।

স্পিয়েগেল: সরকার কী করতে পারে?

ফুয়েস্ট: তারা ট্রেনিং করাতে পারে এবং নতুন কোম্পানি তৈরি করতে পারে। এটা সংস্থাগুলোর আমলাতন্ত্র এবং করের বোঝাও হ্রাস করতে পারে।

স্পিয়েগেল: করোনাভাইরাস কি বৈষম্য বৃদ্ধি করবে?

ফুয়েস্ট: এটা প্রত্যাশিত যে সংকট গতিশীল কাঠামোগত পরিবর্তন উচ্চ নিম্ন দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকদের মধ্যে আগের চেয়ে বেশি আয় বিভাজনের কারণ হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন