টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে যমুনা নদীতে পানি বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে।
পানি বাড়ার কারণে তলিয়ে গেছে চরের কয়েক শতাধিক বাদামের ক্ষেত।
এতে চরম লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষীরা।
অনেকে লোকসান কমাতে তলিয়ে যাওয়া ক্ষেত থেকে বাদাম তোলারও চেষ্টা করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে পাবনা জেলার চরপেঁচাকোলা, চরআড়ালিয়া, সাঁড়াশিয়া, চরসাফুলা, চরনাগদা, চরঢালা, চরকল্যাণপুর, পূর্বশ্রীকণ্ঠদিয়া, পদ্মারচর, চরযমুনা, বাইরচর, শ্রীপুর, খিদ্রদাশুরিয়া, মুরাদপুর, বরাংগাল, ঘোড়জান চরের দেড় হাজার বিঘা জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। সম্প্রতি টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে চরাঞ্চলের কয়েকশ বিঘা জমির বাদাম তলিয়ে যায়।
বেড়া উপজেলার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, চলতি বছর বাদামের ভালো ফলনের সম্ভাবনা ছিল।
কিন্তু অকাল বন্যায় সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে কৃষকদের।
লোকসান কমাতে কৃষকরা পানিতে ডুব দিয়ে জমি থেকে বাদাম তুলছেন।
সেই বাদাম যমুনার পশ্চিম পাড়ে নামানো হচ্ছে।
পরিবারের সবাই মিলে গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়ে স্তূপ করে রাখছেন।
কৃষকরা জানান, জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে পরবর্তী প্রায় এক মাস চরের বালিমিশ্রিত জমিতে বাদাম আবাদ করা হয়।
আর সেই বাদাম জমি থেকে তোলা শুরু হয় মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে।
সাধারণত জুনের শেষ সপ্তাহের মধ্যে সব বাদাম কৃষকের ঘরে উঠে যায়।
তবে এবার টানা বৃষ্টি আর উজানি ঢল তা হতে দেয়নি।
কৃষকরা জানান, তারা রোজার ঈদের পর জমি থেকে বাদাম তোলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
ওই সময় শ্রমিক সংকটও ছিল।
কিন্তু হঠাৎ করে উঠতি বাদাম তলিয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।
তাই বাধ্য হয়ে অনেক স্থানেই চাষীরা পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে ডুবে যাওয়া বাদাম তুলছেন।
কিন্তু এভাবে বাদাম তোলার পর অর্ধেক ফলনও পাওয়া যাচ্ছে না।
এর ওপর বেশির ভাগ ডুবে যাওয়া জমি থেকে বাদাম তোলা সম্ভবও হচ্ছে না।
কাজিরহাট ঘাটের লঞ্চচালক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, কাজিরহাট লঞ্চঘাটের আশপাশে বাদামের অনেক জমি রয়েছে।
এসব জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের দুরবস্থা দেখে আমরা লঞ্চের কর্মীরা মিলে ক’দিনে প্রচুর বাদাম তুলে দিয়েছি।
ডিউটির চাপ কম থাকায় আমরা কৃষকদের সাহায্য করতে পেরেছি।
রূপপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বর ঠান্টু শেখ জানান, গত বছরের তুলনায় এবার বাদামের ভালো ফলন হয়েছিল।
কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের পর যমুনায় পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় শত শত বিঘা জমির বাদাম তলিয়ে গেছে।
অন্যান্য চরের চেয়ে কাজিরহাট এলাকা নিচু হওয়ায় এখানকার বাদামচাষীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আজহার আলী বললেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় অতিবৃষ্টির কারণে প্রথমে বাদাম ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে আবার টানা বৃষ্টি ও উজানি ঢলের কারণে যমুনা চরের অনেক বাদাম ক্ষেত তলিয়ে যায়।
তলিয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
শিগগিরই জমির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।