কভিড-১৯

৫ কোটি মানুষের খাদ্য সংকট ও আমাদের বিকল্প ভাবনা

আসাদ ইসলাম, ফিরোজ আহমেদ

কভিড-১৯ বা নভেল করোনাভাইরাসের আঘাতে সৃষ্ট সংকটে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি এরই মধ্যে বিশাল আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ কভিড-১৯ সংকট নিয়ে বাংলাদেশের কার্যক্রম পরিকল্পনা থেকে আগামী দিনে দেশের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে একটি বিষয় এখনই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে আমাদের দেশ একটি জাতীয় ক্রান্তিকালে প্রবেশ করছে, যা থেকে সহসা উত্তরণের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও খুব একটা লক্ষণীয় নয়। দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লাখ লাখ দরিদ্র মানুষ নতুন এক ধরনের অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছে, যা তারা আগে কখনো দেখেনি। তাদের কাছে লকডাউনের মানে হলো, তাদের জন্য কোনো কাজের ব্যবস্থা নেই এবং খাবারের জোগাড় নেই। যেহেতু লকডাউন অনেকদিন চলমান, সে কারণে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে অনেকেই তাদের পরিবারের সবার জন্য তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারছেন না। কারণ এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহে অনেক সংগ্রাম করতে হয়, তার ওপর শাঁখের আঁটি নভেল করোনাভাইরাস তাদের অস্তিত্ব সংকটের সংগ্রামে নতুন এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে। স্বাধীনতা-উত্তর গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ কখনো মাত্রার সংকটের মুখোমুখি হয়নি।

আমরা লক্ষ করছি যে সরকার সীমিত পরিসরে হলেও বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে এই আপত্কালে সহায়তা হিসেবে জরুরি খাদ্য বা নগদ অর্থ বিতরণের মতো কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া ব্যবসায়ী, কৃষক দরিদ্র মানুষের জন্য ১০০ হাজার কোটি টাকার অধিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সেসব নিয়ে বিশদ পর্যালোচনা আজকের আলোচ্য বিষয় নয়, আমাদের এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারীতে দেশের দরিদ্র মানুষকে বাঁচাতে বিকল্প পথগুলো নিয়ে আলোচনা করা। আমাদের মতে, মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত কীভাবে বিশাল এক দরিদ্র জনগোষ্ঠী, যারা এরই মধ্যে খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে অথবা আসছে দিনগুলোয় বা দু-এক সপ্তাহের মধ্যে খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে, তাদের জন্য বেঁচে থাকার মতো ন্যূনতম খাদ্যসহায়তা প্রদান করা। আমরা একটি সহজ প্রক্রিয়ায় কভিড-১৯ নামক মহামারীতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর সৃষ্ট খারাপ পরিস্থিতি কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, তা দেখাতে চেষ্টা করেছি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, দেশের ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যদিও বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বাংলাদেশে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের জন্য প্রযোজ্য দারিদ্র্যসীমার বিবেচনায় প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। যেহেতু দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি থাকা লোকেরাও ঝুঁকিপূর্ণ এবং উভয়ই খাদ্যনিরাপত্তার অভাবে ভুগছে, তাই আমাদের ধারণা প্রায় ৩০ শতাংশ বা পাঁচ কোটি মানুষ এখন তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। বিদ্যমান লকডাউন কতদিন অব্যাহত থাকবে তা অনিশ্চিত হলেও এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে আগামী মাসগুলোয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের মন্দা দেখা দিতে যাচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতি বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। কারণ অল্প কয়েক মাসের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বা রোগের নির্ভরযোগ্য কোনো চিকিৎসা আসার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। 

আগামী ছয় মাস থেকে বারো মাস দেশের জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ এই পাঁচ কোটি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মধ্যে আছে। তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য তিনবেলা খাবার কীভাবে জোগাড় করবে এর কোনো সদুত্তর নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, প্রতিটি পরিবারে প্রায় পাঁচজন লোক বাস করে। সে হিসাবে বর্তমানে পরিস্থিতিতে প্রায় এক কোটি পরিবার, যারা এই দুর্যোগকালে চরম খাদ্যকষ্টে আছে, তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যসহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা এখন এই এক কোটি পরিবারের জন্য কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছি, যাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, যারা তাদের পরিবারের প্রতিদিনের ন্যূনতম খাবারের জন্য সংগ্রাম করছে, তারা যেন কোনোভাবে পরিবারের সবার জন্য তিনবেলা অন্ন জোগাড় করতে পারে।

দেশের দরিদ্র এই এক কোটি পরিবারের ন্যূনতম খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের প্রস্তাবনা হলো, পরিবারগুলোকে প্রতি মাসে হাজার টাকা সরবরাহ করা উচিত, যাতে তারা এই আপত্কালে তাদের পরিবারের সদস্যদের বেঁচে থাকার মতো প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারে। প্রতি পরিবারের জন্য প্রস্তাবিত খরচের হিসাব আমাদের আগে সংগৃহীত বড় পরিসরের পরিবার জরিপের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নিয়েছি, যা সাম্প্রতিক বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকার ওপর ব্র্যাক পিপিআরসির পরিচালিত জরিপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সে হিসাবে বাংলাদেশের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই এক কোটি পরিবার, যারা বর্তমানে আনাহারী বা আগামী দিনগুলোয় চরম খাদ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে, তাদের এক মাসের খাবার নিশ্চিত করতে হাজার কোটি টাকার সংস্থান করা। একইভাবে কার্যক্রম আগামী এক বছরের জন্য চালিয়ে যেতে প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। দেশের খাদ্য সংকটে থাকা পাঁচ কোটি মানুষকে এক বছরের জন্য প্রস্তাবিত আমাদের প্যাকেজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এপ্রিল ঘোষিত প্রায় ৭২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সমান, যা মূলত দেশের বৃহৎ শিল্প সার্ভিস সেক্টর, ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) মাঝারি শিল্প এবং রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আগামী এক বছরের খাবারের সংস্থান করতে প্রায় একই পরিমাণ অর্থসহায়তার প্যাকেজ দরকার। যদি আমরা এখন পর্যন্ত সরকার ঘোষিত মোট প্যাকেজগুলো দেখি, যা প্রায় লাখ কোটি টাকার বেশি, তবে একই পরিমাণ অর্থ দিয়ে এই খাদ্য সংকটে থাকা দরিদ্রতম পাঁচ কোটি লোককে ১৮ মাস ধরে খাওয়ানো যেতে পারে।

আমরা যদি ধরেও নিই যে এসব দরিদ্র পরিবারের জন্য কোনো ধরনের সরকারি ভর্তুকি নেই বা তারা সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি নগদ অর্থ পাবে না, তাতেও কি এই দরিদ্রতম ৩০ শতাংশ ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠী বা এক কোটি পরিবার, যারা খাবারের কষ্টে আছে, তাদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব অথবা তাদের জন্য ন্যূনতম খাদ্যের সংস্থান করা সম্ভব, যাতে তারা এই মহামারী কাটিয়ে উঠতে পারে? প্রশ্নের সহজ উত্তরহ্যাঁ।

এখানে আমরা বলার চেষ্টা করব কীভাবে সম্ভব? আমরা বিভিন্ন দৃশ্যকল্পে বিকল্প পরিস্থিতির সমন্বয়ে আমাদের প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করছি, যার মধ্য থেকে যেকোনো একটি অথবা পরিস্থিতি বিবেচনায় বিকল্প প্রস্তাবনার সমন্বয়ে সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। বিস্তারিত হিসাব নিচে সারণিতে দেখানো হয়েছে (বোঝার সুবিধার জন্য প্রদত্ত সংখ্যাগুলো পূর্ণ সংখ্যায় দেয়া হয়েছে) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্যসূত্রে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় প্রায় হাজার মার্কিন ডলারসহ (যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় লাখ ৭০ হাজার টাকা) দেশের জিডিপি ছিল ৩২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার (৩২০ বিলিয়ন ডলার বা ২৭২০ হাজার কোটি টাকা) আমরা যদি দরিদ্রতম ৩০ শতাংশ মানুষ, যাদের মুহূর্তে খাদ্য বা নগদ সহায়তা প্রয়োজন তাদের বাদ দিয়ে হিসাব করি, তাহলে অবশিষ্ট প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ, দেশের মোট জাতীয় আয়ে যাদের অবদান ৮৫ শতাংশের বেশি। এই লকডাউনের সময় ওইসব লোক, যাদের আয় দরিদ্র ৩০ শতাংশ লোকের ওপরে এবং মধ্যম আয়ের কাছাকাছি (যারা মধ্যবিত্ত পরিবার হিসেবে বিবেচিত হয়; মাঝের ৩০-৬০ শতাংশ মানুষ), তারাও এই মহামারীতে অর্থনৈতিক কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছে। কিন্তু তারা সময়ে চরম খাদ্যনিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে তা মনে হয় না (তারা দিনে তিনবার তাদের খাবারের সংস্থান করতে সক্ষম হবে)

তবে আমরা মনে করি, আয়ের স্তর বিবেচনায় জনসংখ্যার শীর্ষ ৪০ শতাংশ মানুষ এই দরিদ্র ৩০ শতাংশ মানুষের খাদ্য সরবরাহ ঠিক রাখতে সহায়তা করতে পারবে। এই শীর্ষ ৪০ শতাংশ মানুষ দেশের জিডিপির ৬২ শতাংশ বা মোট ৩২০ বিলিয়ন ডলার জিডিপির মধ্যে ২০০ বিলিয়ন ডলার তাদের দখলে। দেশের দরিদ্রতম পাঁচ কোটি মানুষের পরবর্তী ছয় মাসের খাদ্য সুরক্ষার জন্য আমাদের ৩৬ হাজার কোটি টাকা বা দশমিক বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এর অর্থ হলো, যেসব ব্যক্তি শীর্ষ ৪০ শতাংশ আয়ের স্তরে রয়েছে, গত বছরের তুলনায় তাদের আয়ের মাত্র শতাংশ খাদ্যকষ্টে থাকা মানুষের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী বা ধনী মানুষের বার্ষিক আয় অনেক বেশি (হিসাব অনুযায়ী শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীদের বছরে গড় আয় লাখ ৫৫ হাজার টাকা), তাই মানুষের বিপদে দরিদ্র মানুষের পাশে থাকার মতো আর্থিক ক্ষমতাও তাদের বেশি। সেজন্য আমরা সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষকে তাদের বার্ষিক আয়ের শুধু দশমিক ২৫ (১০ হাজার টাকা) শতাংশ অনুদান হিসেবে দেয়ার জন্য প্রস্তাব করছি এবং তাদের পূর্ববর্তী ৩০ শতাংশ মানুষ, যারা কম ধনী কিন্তু আর্থিকভাবে সচ্ছল (১০ শতাংশ উচ্চবিত্ত মানুষের বছরে গড় আয় লাখ ৪৮ হাজার টাকা এবং ২০ শতাংশ উচ্চমধ্যবিত্ত মানুষের গড় আয় লাখ ৮২ হাজার টাকা), যাদেরকে উচ্চবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তারা তাদের আয়ের শতাংশ অনুদান হিসেবে প্রদান করবে (সারণির দৃশ্যকল্প দেখুন) দৃশ্যকল্প - সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষকে তাদের অবদান প্রায় দ্বিগুণ করতে হবে ( শতাংশ, ১৮২০০ টাকা ছয় মাসের জন্য) এবং তাদের পূর্ববর্তী ১০ শতাংশ মানুষ (উচ্চবিত্ত ১০ শতাংশ মানুষ) আগের মতোই তাদের আয়ের শতাংশ প্রদান করলে প্রয়োজনীয় একই পরিমাণ অর্থের সংস্থান করা সম্ভব হবে (দৃশ্যকল্প -এর সমান বা কাছাকাছি) তৃতীয় দৃশ্যকল্পে আমরা প্রস্তাব করছি যে শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী, যাদের বছরের গড় আয় লাখ ৫৫ টাকা, শুধু তারা আবদান রাখবে এবং তাদের আয়ের শুধু শতাংশ (২২৭৫০ টাকা) দরিদ্রতম পাঁচ কোটি মানুষের খাদ্য সরবরাহ ঠিক রাখতে সহায়তা করবে। প্রতিটি দৃশ্যকল্পে প্রায় সমান পরিমাণ অর্থসংস্থানের হিসাব আছে, যা দিয়ে এই আপত্কালীন পরিস্থিতিতে দরিদ্রতম এক কোটি পরিবার বা পাঁচ কোটি মানুষের জন্য আগামী ছয় মাসের খাবার জোগাড় করা সম্ভব। যদি এই চলমান সংকট দীর্ঘ সময়ব্যাপী বা ছয় মাসের অধিক সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে আমাদের প্রস্তাবিত বিকল্প দৃশ্যকল্পের মধ্যে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধনের দরকার হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি বেশিদিন ধরে সংকট চলতে থাকে তাহলে দেশের আয়ের স্তরে সবচেয়ে ওপরে থাকা শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী ব্যক্তি, যাদের বছরে গড় আয় সাড়ে লাখ টাকারও অধিক, তারা যদি তাদের আয়ের মাত্র ১০ শতাংশ ত্যাগ করে তাহলে তা দিয়ে আমাদের প্রস্তাবিত এক কোটি খাদ্য সংকটে থাকা পরিবারকে এক বছরের অধিক সময়ব্যাপী তাদের দরকারি ন্যূনতম খাবারের নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব।

কেউ ভাবতে পারেন যে এটি একটি বড় ত্যাগ! কিন্তু যে কেউ একটি অবস্থা কল্পনা করতে পারেন, আমরা অধিকাংশই আমাদের জীবদ্দশায় এমন কোনো না কোনো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি, যেখানে আমাদের আয়ের ১০ শতাংশের অধিক চলে গেছে। যেমন সন্তানের বিবাহ অথবা পরিবারের সদস্যের অসুস্থতা। কভিড-১৯ বা নভেল করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক সংকট, সুতরাং এখানে আমাদের নৈতিক কর্তব্য আছে এবং আমাদের মধ্যে যাদের সাহায্য করার মতো সক্ষমতা আছে, সংকটে সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে তাদের ওপর বাধ্যবাধকতা একটু বেশি আছে। আমরা বিশ্বাস করি, সংকটে সরকার যেমন ঝুঁকির মধ্যে থাকা নাগরিকদের রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে, আমরা নাগরিকরাও এই দুর্যোগে একসঙ্গে দাঁড়াতে পারি এবং আমাদের সমাজ গঠনে অবদান রাখতে পারি।  আমরা যদি আমাদের স্বাধীনতার জন্য অনেক বড় ত্যাগ স্বীকার করতে পারি তাহলে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের এত বড় সংকট, যে ধরনের সংকট আমরা এর আগে কখনই অতিক্রম করিনি, সেটি উত্তরণে কেন আমাদের আয়ের এই সামান্য অংশ ত্যাগ করতে পারব না? আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা নভেল করোনাভাইরাসের আঘাতে জর্জরিত দরিদ্র এক কোটি পরিবারের বাঁচার সম্বল হবে এবং এই সংকট উত্তরণে ভূমিকা রাখবে।

 

আসাদ ইসলাম: অর্থনীতির অধ্যাপক পরিচালক, সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ইকনোমিকস অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি, মোনাশ ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া

ফিরোজ আহমেদ: সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন