ফ্লাইট বন্ধে সিঙ্গাপুরে আটকা প্রবাসী বাংলাদেশী

মনজুরুল ইসলাম

সিঙ্গাপুরে এখন পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত ৩০ জন প্রবাসী বাংলাদেশী শনাক্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে গতকাল নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১০ বাংলাদেশী। অবস্থায় আবারো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সিঙ্গাপুর প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে। এরই মধ্যে ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন না করে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তাদের অনেকেই। তবে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় তারা চাইলেও দেশে আসার উপায় পাচ্ছেন না। অবস্থা আরো অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের।

এমনই একজন সিরাজগঞ্জ থেকে যাওয়া ইয়াসিন আলি। গতকাল তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, প্রায় আড়াই বছর ধরে তিনি সিঙ্গাপুরের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে যখন প্রথম করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশী পাওয়া গেল, তখন অনেকেই দেশে ফিরে গিয়েছেন। তবে দ্রুত পরিস্থিতি ভালো হবে ভেবে আমি থেকে যাই। কিন্তু এখন সারা দুনিয়াতেই করোনা ছড়িয়ে গেছে। সিঙ্গাপুরেও প্রতিদিন আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই। তিনি বলেন, কোম্পানির ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করতে চাইছে না। এমন হলে তো দেশে ফিরতেই হবে। কারণ চাকরি না থাকলে কীভাবে থাকব। দূতাবাস একটি তালিকা করছে শুনেছি। আশা করছি দেশে ফিরতে পারব।

জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করেন। ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার আগেই তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘমেয়াদি ছুটি নিয়ে দেশে চলে এসেছেন। যারা এখনো আছেন তাদের অনেকের ওয়ার্ক পাসের মেয়াদ শেষ কিন্তু কোম্পানি ওয়ার্ক পাস আর নবায়ন করছে না। কিছু প্রবাসী শ্রমিক আছেন, যারা আতঙ্কের কারণে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। যদিও দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আটকা পড়ে গেছেন তারা।

সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, আটকা পড়া বাংলাদেশী শ্রমিকরা প্রতিনিয়তই দেশে ফেরার আবেদন জানাচ্ছেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে এরই মধ্যে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের তালিকা করার উদ্যোগ নিয়েছে হাইকমিশন। বিষয়ে গত মঙ্গলবার একটি নোটিসও জারি করেছে হাইকমিশন।

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর মো. তৌফিক-উর রহমান স্বাক্ষরিত ওই নোটিসে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের বিমান চলাচল সাময়িক বন্ধ আছে। এতে সিঙ্গাপুরে কিছুসংখ্যক বাংলাদেশী আটকা পড়েছেন বা দেশে পৌঁছতে পারছেন না। এজন্য অনেকে হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছেন। বিষয়টি সরকারের বিবেচনার্থে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণের জন্য আটকে পড়া/দেশে ফিরতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সংখ্যা জানা প্রয়োজন। অবস্থায় আগ্রহী নাগরিকদের তাদের বর্তমান ঠিকানা, স্থানীয় মোবাইল নম্বর পাসপোর্ট-সংক্রান্ত তথ্যাদি উল্লেখপূর্বক হাইকমিশনের -মেইলে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে নতুন করে আরো ছয় বাংলাদেশী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। নিয়ে সিঙ্গাপুরে মোট ২০ জন বাংলাদেশী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। এর মধ্যে চারজন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেছেন। ১৬ জন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

উল্লেখ্য, অবকাঠামো খাতই সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে রেখেছে। আর এজন্য দেশটিকে প্রচুর বিদেশী শ্রমিকের ওপর নির্ভর করতে হয়। দেশটির জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের ২০১৯ সালের জুনের এক হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার চীন থেকে লাখ ৭০০ শ্রমিক দেশটির নির্মাণ শিল্পে নিয়োজিত। যদিও সিঙ্গাপুরে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে নির্মাণ মেরিন সেক্টরসহ অনেক কোম্পানি থেকে অভিবাসী শ্রমিকরা চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশভারত, মিয়ানমার চীনের শ্রমিকরাও। করোনা আতঙ্কে যাদের অনেকেই দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন।

জনশক্তি কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৪৯ হাজার ৮২৯ বাংলাদেশী বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে সিঙ্গাপুর গিয়েছেন। এছাড়া ২০১৮ সালে ৪১ হাজার ৩৯৩ জন, ২০১৭ সালে ৪০ হাজার ৪০১, ২০১৬ সালে ৫৪ হাজার ৭৩০ ২০১৫ সালে ৫৫ হাজার ৫২৩ জন বাংলাদেশী শ্রমিক দেশটিতে পাড়ি জমান।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন