বাংলাদেশকে কেউই পেছনে টেনে নিতে পারবে না : প্রধানমন্ত্রী

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ যেকোনো দেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। এখন আমাদের আর কেউই পেছনে টেনে নিতে পারবে না। ইতালির রোমে স্থানীয় সময় বুধবার রাতে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি কথা বলেন। খবর বাসস।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ কোঁতের আমন্ত্রণে দেশটিতে চারদিনের সফরে আছেন শেখ হাসিনা। সফররত প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে রোমের পার্কে দ্য প্রিন্সিপি গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড স্পায় সংবর্ধনার আয়োজন করে আওয়ামী লীগের ইতালি শাখা।

সংবর্ধনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের শতকরা ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। এখন আর দাতারা আমাদের ভিক্ষা দিতে আসে না। বরং তারা আমাদের তাদের উন্নয়ন সহযোগী অভিহিত করে সহযোগিতা দিতে আসে। কারণ কারো কাছে আমরা ভিক্ষা চাই না।

নিজস্ব অর্থায়নে সরকারের পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাংক সরকারকে বদনাম দিতে চেয়েছিল। আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করি যে আমরা নিজস্ব অর্থায়নেই সেতু নির্মাণ করব এবং এখন আমরা নিজস্ব অর্থেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কাজেই আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যখনই আমরা ক্ষমতায় আসি না কেন আমরা দেশটাকে এমনভাবে গড়ে তুলব, যাতে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চলতে পারে। আমরা এখন দাবি করতেই পারি, বিশ্বে আমরা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে সেই পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।

অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যান। আমাদের সরকার সেখান থেকে দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের অবস্থান ধরে রাখতে হবে, তাহলেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারব। লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে তিনটি মাপকাঠি রয়েছে, তা আমরা এরই মধ্যে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না, আমরা এগিয়ে যাব।

শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫- জাতির পিতাকে হত্যার পর যারাই সক্ষমতায় এসেছিল, তারা নিজেদের ভাগ্যবদলে ব্যস্ত ছিল; জনগণের জন্য কিছু করেনি। সে সময় বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস দুর্ভিক্ষের দেশ হিসেবে এবং বিশ্বে বাংলাদেশকে অবহেলার চোখে দেখা হতো, যা আমাদের জন্য লজ্জার বেদনাদায়ক ছিল।

দীর্ঘ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে হাত দেয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অতিদারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশে এবং দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক শতাংশে নামিয়ে এনেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা বছরের মধ্যে হারকে আরো - শতাংশ নামিয়ে আনতে সক্ষম হব। এজন্য বেশকিছু বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দেশে আর কেউ দরিদ্র থাকবে না এবং কেউ আমাদের সহানুভূতির চোখে দেখবে না। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

প্রবাসী বাংলাদেশীদের কল্যাণে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে, যাতে বিদেশ গমনেচ্ছুদের এজন্য ঘর-বাড়ি, ভিটে-মাটি বিক্রি করতে না হয়।

তিনি আরো বলেন, সরকার সারা দেশে হাজার ৮০০টি ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তুলেছে, যার মাধ্যমে বিদেশ গমনেচ্ছুরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে তাদের নাম নিবন্ধন করতে পারে। আমরা যাতে প্রত্যেক উপজেলা থেকে এক হাজারজনকে বিদেশে পাঠাতে পারি, সেজন্য উদ্যোগ নিয়েছি, আমরা তাদের জন্য স্মার্ট কার্ড দিচ্ছি।

তার সরকারের এর আগে প্রদান করা মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন -পাসপোর্টের যুগ চলছে এবং আমরা এরই মধ্যে পাসপোর্ট প্রদানের কর্মসূচি শুরু করেছি, যাতে কেউ জালিয়াতির শিকার হতে না পারে।

বিমানবন্দরে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেজন্যই ব্যবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আরো উন্নত যাত্রীসেবা প্রদানের জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করছি।

বিমানের ফ্লাইট চালুর বিষয়ে ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়ে ইতালি সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। আমি ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপন করব।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের ইতালি শাখার সভাপতি হাজি মোহাম্মাদ ইদ্রিস ফারাজি সাধারণ সম্পাদক হাসান ইকবাল এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষে হোসনে আরা বেগম বক্তব্য রাখেন। ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুস সোবহান সিকদার যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন