প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস : বেনাপোলে সতর্কতা, অরক্ষিত হিলি

বণিক বার্তা প্রতিনিধি যশোর ও হিলি

চীনে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনে চেকপোস্ট সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এ পথ দিয়ে ভারত থেকে আগত বিদেশী নাগরিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল ও হিলি দেশের অন্যতম প্রধান দুই স্থলবন্দর। এ দুই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানির পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ ভারতে আসা-যাওয়া করে। এরই মধ্যে ভারতের মুম্বাই, কেরালা, বেঙ্গালুরুসহ বিভিন্ন স্থানে চীন থেকে আগত কিছু ব্যক্তির মাঝে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি সীমান্ত না থাকলেও ভারত থেকেই এ ভাইরাস ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনে চেকপোস্ট সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্র জানায়, গতকাল ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পথে এক আইরিশ, চারজন অস্ট্রেলিয়ান, দুজন কানাডিয়ান ও একজন মার্কিনসহ আট বিদেশীর করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরীক্ষা করা হয়। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে একটি নতুন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ভাইরাসটি সার্স ভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগেশনে কর্মরত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ বলেন, চীনে করোনাভাইরাস ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই মারা গেছেন। বাংলাদেশে এ ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য দেশের সব ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে চিঠি দিয়ে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বাংলাদেশে আসা বিদেশীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। তাদের ভাইরাসের লক্ষণ সম্পর্কেও সচেতন করছি।

তিনি বলেন, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথা, ঠাণ্ডা কাশি, শরীর ব্যথা অনুভবসহ নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ রোগের কোনো ওষুধ নেই। নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোরশেদ আলম বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো পাসপোর্টযাত্রী যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারেন, সেজন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগিতা করছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। বিশেষ করে বিদেশী নাগরিকরা এ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করলে স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করছি আমরা।

তবে করোনাভাইরাস ঠেকাতে এখনো হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরেজমিন হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ঘুরে দেখা গেছে, পাসপোর্টধারীরা আগের মতোই কোনো ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করছেন। এমনকি স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো কর্মীরও দেখা মেলেনি।

হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ওসি রফিকুজ্জামান বলেন, হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ মানুষ ভারতে আসা-যাওয়া করে। সাধারণত চীনা নাগরিকরা এ পথ দিয়ে যাতায়াত করে না। করোনাভাইরাস নিয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। এখানে কোনো স্বাস্থ্যকর্মীও এখানে নিযুক্ত নয়।

এ ব্যাপারে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রতাপ নন্দী জানান, কোনো ধরনের নির্দেশনা না পাওয়ায় হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে আমরা জেলা সিভিল সার্জনকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তবে হিলিসহ বাকি কিছু রুটে ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা এ সপ্তাহের মধ্যে দেয়া হবে। নির্দেশনা পেলে আমরা হিলিতেও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যক্রম চালু করতে পারব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন