পর্যটন মৌসুমে ভাইরাসের হানা, চীনা অর্থনীতিতে বড় ধাক্কার শঙ্কা

বণিক বার্তা অনলাইন

চীনের রহস্যময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে ইউরোপ এবং আমেরিকাতেও এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় হুবেই প্রদেশের উহানসহ মোট ১৩টি শহরের প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দিয়েছে চীনা প্রশাসন। অর্থাৎ বাইরের কেউ ভেতরে ঢুকবে না, শহরের ভেতরে থাকা কেউ বের হবে না। এর মধ্যে কিছু শহরে সিনেমা হল, রেস্তোরাঁ, কারাওকে বারের মতো বিনোদন কেন্দ্রগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারণ করোনাভাইরাস শ্বাস-প্রশ্বাস, হাঁচি, কাশির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।

এ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে চীনের ভ্রমণ ও পর্যটন খাত। আজ (২৫ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে চীনের নতুন চান্দ্রবছর। এ ছুটিতে অন্তত ৪০ কোটি চীনা দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে ভ্রমণ করেন। ফলে এ মৌসুমে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স, হোটেল এবং পর্যটন এলাকাগুলোতে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কিন্তু করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ১৩টি শহরের সঙ্গে বাইরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে সরকার। ফলে প্রচুর মানুষ উড়োজাহাজের টিকিট ও হোটেল বুকিং বাতিল করছে। খুবই নিরস একই সঙ্গে আতঙ্গের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করছে চীনারা।

তবে অধিকাংশ এয়ারলাইন্স ভাড়ার টাকা ফেরত দেয়া ও প্রয়োজনে কোনো ফি ছাড়াই পুনরায় বুক করার সুযোগ দিচ্ছে। বড় হোটেলগুলোতে প্রচুর সিট খালি থাকছে। চীনের বেসামরিক উড়োজাহাজ কর্তৃপক্ষ বাতিল টিকিটের টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়ার পর দেশটির তিনটি প্রধান এয়ারলাইন: চায়না সাদার্ন এয়ারলাইন্স, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স এবং চায়না এয়ারের শেয়ার দর পড়ে গেছে। চলতি সপ্তাহে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের শেয়ারদর ১৩ শতাংশ কমে গেছে।

চীনের বৃহত্তম অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ট্রিপ ডট কম এরই মধ্যে হোটেল বুক, গাড়ি ভাড়া এবং পর্যটন এলাকার টিকিট বুকিং বাতিলে ফি মওকুফ ঘোষণা করেছে।

এদিকে হোটেল কোম্পানিগুলোও উহানসহ চীনের বিভিন্ন শহরে ভ্রমণেচ্ছুদের হোটেল বুকিং বাতিল করলে টাকা ফেরত দিচ্ছে। ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলস গ্রুপ এবং হায়াত নতুন চান্দ্র বছর বরণ মৌসুমে চীনের কেউ হোটেল বুকিং বাতিল বা তারিখ পরিবর্তন করতে চাইলে তা বিনাখরচে করে দিচ্ছে। চীনে ইন্টার কন্টিনেন্টালের ৪৪৩টি হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে উহানেই আছে ৪টি।

চীনের ক্যাসিনোগুলোও ব্যবসা মন্দার মুখে পড়েছে। তাদের শেয়ার দর কমে গেছে। বিশেষ করে ম্যাকাউ দ্বীপের ক্যাসিনো ব্যবসায় ধস নেমেছে। চীনের এ প্রদেশে লাস ভেগাস স্যান্ডস এবং  উইন রিসোর্টের মতো প্রতিষ্ঠানের ক্যাসিনো ব্যবসা রয়েছে।

এছাড়া নতুন চান্দ্রবর্ষ উপলক্ষে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা অন্তত সাতটি চলচ্চিত্রের কপাল পুড়েছে। এসব চলচ্চিত্রের মুক্তি স্থগিত রাখা হয়েছে। অনেকে এরই মধ্যে ইউটিউবে ও বিভিন্ন স্ট্রিমিং সাইটে চলচ্চিত্র মুক্তি দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

চীনের অর্থনীতিতে ক্রমেই একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব উৎস হয়ে উঠছে পর্যটন। বর্তমানে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রায় ১১ শতাংশ অবদান রাখে এ খাত। তাছাড়া পর্যটন খাতে এরই মধ্যে প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং এটি দিন দিন বাড়ছে।

২০১৮ সালে ৬ কোটি ২৯ লাখ পর্যটক চীন ভ্রমণ করেছে। এ দেশটি এখন পর্যটক আকর্ষণের দিক থেকে বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে উঠে গেছে। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম র‌্যাংকিং অনুযায়ী, পর্যটনে জনপ্রিয়তার দিকে থেকে চীনের চেয়ে এগিয়ে আছে শুধু ফ্রান্স, স্পেন এবং যুক্তরাষ্ট্র।

করোনা ভাইরাস আতঙ্কের কারণে চীনের বাইরে বিলাসপণ্যের ব্রান্ডগুলোও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চীনা পর্যটকরা ঘরে বসে থাকলে তাদের বেচাকেনা লাটে ওঠার জোগার হবে। কারণ বর্তমানে এসব পণ্যের সবচেয়ে বড় ভোক্তা হয়ে উঠেছে চীনা তরুণরা। বারবারি, লুইস ভিটন এবং হার্মিসের মতো ব্রান্ডের মালিক প্রতিষ্ঠান এলভিএমএইচের বাজারমূল্য এরই মধ্যে কমে গেছে।

সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন