অবৈধভাবে বালি উত্তোলনে হুমকিতে বেড়িবাঁধ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি সিলেট

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার বড়নয়াগাং নদীর ভাঙন রোধ বন্যার পানি থেকে জনবসতি এবং কৃষিজমি রক্ষায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে অবাধে বালি উত্তোলনের কারণে বেড়িবাঁধই এখন ভাঙনের হুমকিতে। ভাঙন বন্ধে উচ্চ আদালতও নদী থেকে বালি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।  তবে এসব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বড়নয়াগাং নদীর খেয়াঘাট এলাকার দুই পাড় কেটে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছেন শ্রমিকরা। নদীর তীরের পাশে ৩০-৪০ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্ত করেও বালি উত্তোলন করা হচ্ছে।  উত্তোলিত বালি নদীর পাশেই মজুদ করা হচ্ছে। সেখান থেকে ট্রাক পিকআপে বালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তীর থেকে বালি উত্তোলনের ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে পাউবোর বেড়িবাঁধে। অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধে ভাঙন রোধে সম্প্রতি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।

নদী থেকে বালি উত্তোলনের জন্য কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তবে বালি উত্তোলন বন্ধে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।

স্থানীয় বাসিন্দা সাজিদুর রহমান বলেন, অবৈধ অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলনের ফলে পাউবোর সারী-গোয়াইন প্রকল্পের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে আগামী বর্ষায় নদীভাঙনের শিকার হওয়ার আতঙ্কে আছে এলাকার লোকজন।

তিনি বলেন, ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। বালি উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদও করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, এভাবে বালি উত্তোলনের ফলে বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে লক্ষ্মীপ্রসাদ হাওড়, রুপচেং, ফেরিঘাট, লামনী গ্রাম, ভিত্রিখেল, ভিত্রিখেল ববরবন্দসহ ১০-১৫টি গ্রামের বসতবাড়ি ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে।

এর আগে ১৯৮৮ সালের পাহাড়ি ঢল আকস্মিক বন্যায় বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে ওই সব এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে যায়। দেখা দেয় ব্যাপক ভাঙন। এরপর একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই নদী থেকে বালি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত।

এলাকার লোকজন জানায়, স্থানীয় প্রভাবশালী ছিফত উল্লাহ, মো. রফিক আহমদ, মো. আমিন আহমদ, ফয়জুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, রুহুল আমিন, কবির আহমদ, শেখর বাবু, আলমাছ উদ্দিন, মিসিরাই মিয়া, বতাই মিয়া, কুটি মিয়া, মিজানুর রহমান, বশির আহমদের নেতৃত্বে নদীর পাড় কেটে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে।

তবে নদীর তীর কেটে বালি উত্তোলনে সম্পৃক্ত থাকার কথা অস্বীকার করে ছিফত উল্লাহ মিসিরাই মিয়া বলেন, অন্যরা নদীর তীর কেটে বালি উত্তোলন করেছে। আমরা ইজারা নিয়েই বড়নয়াগাং নদী থেকে বালি উত্তোলন করছি। তবে -সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তারা।

বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুসিকান্ত হাজং জানান, বড়গাং নদী থেকে বালি উত্তোলনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে আমরাও বালি উত্তোলনের জন্য নদী কাউকে ইজারা দিইনি। যারাই বালি উত্তোলন করছেন, তারা অবৈধভাবে কাজটি করছেন। ব্যাপারে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন