মৌসুমে এবার চাঙ্গা রাঙ্গামাটির পর্যটন ব্যবসা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি রাঙ্গামাটি

গত কয়েক বছর পাহাড়ে অস্থিরতাসহ নানা কারণে রাঙ্গামাটিতে কম ছিল পর্যটকের সংখ্যা। তবে এবার সে চিত্র পাল্টে গেছে। মৌসুমের শুরু থেকেই পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে রাঙ্গামাটি। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরাও। বিশেষ করে হোটেল-মোটেল, কটেজ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ট্যুরিস্ট বোট চালক, রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের নজর কাড়ছে স্থানীয় তাঁত শিল্পও।

দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা রাঙ্গামাটি। মূলত শীত মৌসুমে এ জেলায় পর্যটকের আনাগোনা বাড়ে। এ সময়টাকে স্থানীয়রাপর্যটন মৌসুম বলে থাকেন। বছরের নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে এ মৌসুম।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা সকাল থেকে ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, ডিসি বাংলোতে ভিড় করছেন। অনেকে আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে কাপ্তাই হ্রদ, আরণ্যক, চাকমা রাজার বাড়ি, আসাম বস্তি, কাপ্তাই-রাঙ্গামাটি শহরের বরগাঙ ও বেরাইন্যা দেখায় ব্যস্ত।

পর্যটক পলাশ মজুমদার ও শুভ দেবনাথ বলেন, প্রতি বছরই এ মৌসুমে আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর চেষ্টা করি। এ বছর বন্ধুরা মিলে পরিকল্পনা করলাম পাহাড়ে ঘুরব। রাঙ্গামাটি শহর এলাকায় ঘুরে খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেকে এসেছি। পাহাড়ের সৌন্দর্যে আমরা মুগ্ধ। তবে একটা বিষয় লক্ষ করলাম, পর্যটকরা সেখানে-যেখানে ময়লা ও পলিথিন ফেলছেন। এ ব্যাপারটি আমাদের ভালো লাগেনি। আমরা সবাই একটু সচেতন হলেই প্রকৃতিকে সুন্দর রাখতে পারি।

রাঙ্গামাটি টেক্সটাইল মার্কেটের বিক্রেতারা জানান, শীতকাল হওয়ায় পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ স্থানীয় তাঁতে তৈরি চাদরের প্রতি। এছাড়া যারা পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন, তারা অনেকেই পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক কিনছেন। সব মিলিয়ে জমে উঠেছে স্থানীয় তাঁত শিল্পের পণ্য বেচাকেনা।

কাপ্তাই হ্রদে ইঞ্জিনচালিত ট্যুরিস্ট বোট চালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, সারা বছরের তুলনায় এ মৌসুমে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ে। এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় পর্যটক অনেকটা বেড়েছে। তবে সব পর্যটক হ্রদে তেমন একটা ঘুরে বেড়ান না। তবুও ট্যুরিস্ট বোট ভালোই ভাড়া হচ্ছে।

রাঙ্গামাটি পর্যটন বোট ঘাটের ম্যানেজার রমজান আলী জানান, সারা বছর পর্যটকদের সমাগম কম থাকায় ট্যুরিস্ট বোটও কম ভাড়া হয়। আমরা মূলত পর্যটন মৌসুমের দিকেই চেয়ে থাকি। এ সময়ে পর্যাপ্ত বোট ভাড়া হওয়ায় এ খাতের সঙ্গে জড়িতদের পরিবারেরও আর্থিক সচ্ছলতা ফেরে।

আবাসিক হোটেল মতি মহলের স্বত্বাধিকারী মো. শফিউল আজম জানান, এ বছর পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা বেশি অন্যবারের তুলনায়। তবে বেশির ভাগই পর্যটক সকালে এসে বিকালে চলে যান। যার কারণে হোটেলে-মোটেলে একটু চাপ কম পড়ে। তবে পর্যটকদের কাছে রাঙ্গামাটির আকর্ষণ আরো ফুটিয়ে তোলা না গেলে বর্তমানের ধারাবাহিকতাও থাকবে না। রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, গত ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। আমাদের এখন প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজারের মতো ঝুলন্ত সেতুতে প্রবেশের টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

রাঙ্গামাটি জেলা হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দীন সেলিম বলেন, গত কয়েক বছর রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের আগমন কমে গিয়েছিল। তবে এবার ভালো সাড়া পাচ্ছি। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পর্যটন খাতকে আরো উন্নত করতে হবে।

তিনি বলেন, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পর্যটন শিল্পে আমাদের পরে কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন এ দুই জেলায় আমাদের চেয়ে পর্যটকদের পদচারণা বেশি। তারা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পর্যটকদের কেবল কারসহ অন্যান্য আকর্ষণীয় কেন্দ্র গড়ে তুলেছে, এক্ষেত্রে আমরা অনেকটা পিছিয়ে। তাই রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডকে রাঙ্গামাটির সম্ভাবনাময় এ শিল্পের দিকে সুনজর দিতে হবে।

এদিকে পাহাড়ের পর্যটনে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থা। ১২ জানুয়ারি থেকে রাঙ্গামাটি শহর থেকে বরকল উপজেলার দুর্গম ঠেগামুখ পর্যন্ত নৌপথে লঞ্চ চলাচল চালু হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থা, রাঙ্গামাটি জোনের চেয়ারম্যান মো. মঈন উদ্দীন সেলিম বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদনক্রমে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ১২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে রাঙ্গামাটি থেকে ঠেগামুখ পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল চালু হলো। এ সার্ভিস পেতে যদিও একটু সময় লাগবে। আমরা আশাবাদী, ঠেগামুখ পরিচিতি পেলে এটা সাজেকের চেয়েও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশ পরিদর্শক মাকসুদ আহাম্মদ জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা শহরের পর্যটক স্পটগুলোর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। এছাড়া ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা কাপ্তাই হ্রদে স্পিডবোটের মাধ্যমে নৌ-টহল অব্যাহত রেখেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন