ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্বাভাবিক বেড়েছে চীনাবাদামের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চীনাবাদামের দাম বেড়েছে ৭৫০ টাকা। শীত মৌসুমে বাদামের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি চরাঞ্চলে ফলন কম হওয়ায় পণ্যটির দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তারা জানিয়েছেন, এবারের শীত মৌসুমে ভোগ্যপণ্যের বাজারে বাদামের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু উৎপাদন মৌসুম হলেও এক মাস ধরে পাইকারি বাজারে বাদামের সরবরাহ আগের যেকোনো বছরের তুলনায় অনেক কম। ফলে সরবরাহ সংকটের কারণে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।
খাতুনগঞ্জের আড়ত ও দোকানগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে মণপ্রতি খোসাছাড়া চীনাবাদাম বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৪৫০ থেকে ৪ হাজার ৪৭০ টাকায়। যেখানে দুই সপ্তাহ আগেও এটি বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৭২০ টাকায়। সেই হিসাবে মণে বাদামের দাম ৭৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
অন্যদিকে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত খোসাযুক্ত দেশী বাদাম বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ২ হাজার ৯৮৫ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মণে প্রায় ৯০০ টাকা বেড়ে এখন এ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ৯২০ টাকা দরে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স রাঙ্গুনিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবুল হোসেন বলেন, দু-তিন মাস ধরে পাইকারি বাজারে বাদামের দাম ছিল নিম্নমুখী। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের পর থেকে দাম কমে প্রতি কেজি বাদাম বিক্রি হয় ৯৫-৯৮ টাকা দরে। গত দুই সপ্তাহ থেকে পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করে। সর্বশেষ গেল সপ্তাহে অস্বাভাবিক বেড়ে বর্তমানে একই মানের বাদাম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। সেই হিসেবে পণ্যটির দাম কেজিতে ২০-২২ টাকা বেড়েছে। একই সময়ে কেজিতে প্রায় ২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বর্তমানে খোসাযুক্ত দেশী বাদাম বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা দরে, যা ১৫ দিন আগে ৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতো।
দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে খাতুনগঞ্জের পাইকারি মসলা পণ্য ব্যবসায়ী রাফিজ আহমেদ বলেন, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, হাতিয়া, নোয়াখালী, পঞ্চগড়সহ দেশের চরাঞ্চলগুলোয় এবার বাদামের ফলন কম হয়েছে। এতে মোকামগুলোয় বাদামের সরবরাহ অনেক কম। অথচ অন্যান্য বছর এই সময়ে বাদামের সরবরাহ থাকত সবচেয়ে বেশি। দেশীয় বাদামের সরবরাহ সংকটের ফলে বাজারে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। নতুন মৌসুমের বাদাম না আসা পর্যন্ত আগামী দু-তিন মাস বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে বলে মনে করছেন পাইকারি বাদাম ব্যবসায়ীরা।
এদিকে দেশীয় বাদামের সরবরাহ সংকট ও দাম বৃদ্ধির সুযোগে এক মাস ধরে চীন থেকে বাদাম আমদানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত এক মাসে চীন থেকে প্রচুর বাদাম আমদানি হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। অথচ অন্যান্য বছর বিদেশ থেকে বাদাম আমদানির পরিমাণ ছিল খুবই কম।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর শীত মৌসুম থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত দেশের চরাঞ্চল থেকে বাদাম বাজারে আসে। এ সময় বাদামের দাম অনেক কম থাকে। পরে মোকাম থেকে পণ্যটির সরবরাহ যত কমে, দাম তত বাড়তে থাকে। কিন্তু এবারে মৌসুম শুরু হলেও মোকাম থেকে বাজারে সরবরাহ খুবই কম। ফলে মৌসুমেও পণ্যটির দাম না কমে বরং ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, হাতিয়া, নোয়াখালী, পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে খাতুনগঞ্জের বাজারে আসে বাদাম। প্রতি বছর দেশের ১০টি অঞ্চলে ৮৫-৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টন বাদাম উৎপাদন হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলে বাদামের চাষ হয় বেশি।