দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন

পরিযায়ী পাখির দেখা নেই বরিশালে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি বরিশাল

শীত এলেই পরিযায়ী পাখিতে ভরে যেত বরিশালের দুর্গাসাগর দীঘি। কিন্তু এবার পৌষ মাস শেষ হতে চললেও পাখিশূন্য জেলার অন্যতম প্রধান পর্যটন স্পট। একই অবস্থা সারসী দীঘি, তালতলী, পদ্মা দীঘি, দপদপিয়া, লাহারহাটসহ পরিযায়ী পাখির আশ্রয়স্থল বলে পরিচিত এলাকাগুলোয়। পাখি না আসায় পর্যটকদের পাশাপাশি মনঃক্ষুণ্ন স্থানীয় বাসিন্দারাও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষণ জয়বায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিযায়ী পাখির আগমন কমে গেছে।

জানা গেছে, দুর্গাসাগর দীঘির অবস্থান নগরী থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা এলাকায়। মাধবপাশা ছিল চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের সর্বশেষ রাজধানী। ১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের রাজা শিব নারায়ণ তার স্ত্রী দুর্গা রানীর নামে খনন করেন বিশাল জলাধার। যার নাম দেয়া হয় দুর্গাসাগর। ১৯৯৬ সালে প্রায় ৪৬ একরের দীঘিকেদুর্গাসাগর দীঘি উন্নয়ন পাখির অভয়ারণ্য প্রকল্পে আওতায় এনে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে দীঘির তত্ত্বাবধানে রয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। দীঘির মাঝে জঙ্গলপূর্ণ একটি দ্বীপ আছে। সাধারণত শীতকালে দ্বীপেই আশ্রয় নিত অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। তবে এবারের চিত্র পুরো উল্টো। শীত মৌসুম মাঝামাঝি পর্যায়ে চলে এলেও দেখা মিলছে না পরিযায়ী পাখির।

স্থানীয়রা জানান, একসময় শীত মৌসুমজুড়েই দুর্গাসাগর দীঘি মুখরিত থাকত হাজারো পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে। কিন্তু ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানার পর থেকেই দুর্গাসাগরে পাখির আগমন কমে যায়। এবার জানুয়ারির শুরুতে শতাধিক পরিযায়ী পাখির ঝাঁক দুর্গাসাগরে নেমেছিল। কিন্তু মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরই পাখিগুলো উড়ে চলে যায়। এরপর মাঝে মধ্যে চার-পাঁচটি করে পাখি এলেও তা বেশিক্ষণ থাকছে না। পাখি দেখতে না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করছেন ঘুরতে আসা পর্যটকরা।

দুর্গাসাগরে ঘুরতে আসা কেএম শোয়েব জুয়েল নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমি ঢাকা থেকে এখানে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। শুনেছি দুর্গাসাগরে অনেক পরিযায়ী পাখি আসে। তাই সন্তানদেরও নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখি দীঘি পাখিশূন্য। জানলে হয়তো এত কষ্ট করে আসতাম না।

আরেক পর্যটক শাহাদাত হোসেন বলেন, অনেক আগে একবার এখানে এসেছিলাম। তখন অনেক পাখি এসেছিল। কিন্তু এবার একটিও দেখতে পাব না, তা কল্পনাও করিনি। পাখিছাড়া দীঘি প্রাণহীন মনে হচ্ছে।

পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, শীতে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ বরফে ঢাকা পড়ে। তখন ওই দেশগুলো থেকে বিভিন্ন পাখি নাতিশীতোঞ্চ জলবায়ুর দেশে আশ্রয় নেয়। কারণে শীত মৌসুমে আমাদের দেশেও বিভিন্ন পরিযায়ী পাখি আসে। বরিশালে দুর্গাসাগর, সারসী দীঘি, তালতলী, পদ্মা দীঘি, দপদপিয়া, লাহারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে আগে অতিথি পাখি আসত। তবে নিরাপদ আশ্রয়স্থল না থাকার কারণেই অতিথি পাখিদের আগমন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। কিছু পাখি এলেও খাদ্য (মাছ) স্বল্পতার কারণে হয়তো আবার চলে গেছে। দুর্গাসাগরের মতো জেলার অন্যান্য পর্যটন স্পটও এবার পাখিশূন্য।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক . হাসিনুর রহমান বলেন, এক দশক ধরেই দুর্গাসাগরসহ বরিশালের আশপাশে অতিথি পাখির আগমন কমে এসেছে। এর প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার পরিবেশ না পাওয়ায় হয়তো পাখি এসেও চলে যাচ্ছে। আবার শব্দদূষণ খাদ্য সংকটেও পাখির আগমন কমে গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন