১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় যশোর। এর পাঁচদিন পর টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিজয় সমাবেশ। এ সমাবেশে উপস্থিত হয়ে দেশ পুনর্গঠনের ডাক দিয়েছিলেন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য মাইলফলক হয়ে আছে তার এ ভাষণ ও বিজয় সমাবেশ।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ৬ ডিসেম্বর বিকালে যশোর শহর ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পরে মিত্র ও মুক্তিবাহিনী সেনানিবাসে প্রবেশ করে দখল নেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই বিভিন্ন স্থানে মানুষের ঢল নামে। মুক্তির আনন্দ ও স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে যশোর শহর। এ বিজয়ের সুবাদে ১১ ডিসেম্বর তাজউদ্দীন আহমদ পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে যশোরে আসেন। পরে তিনি ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম টাউন হল ময়দানে আয়োজিত বিজয় সমাবেশে যোগ দেন।
এ জনসভায় সমবেত জনতার উদ্দেশে দেশ পুনর্গঠনের ডাক দিয়ে তাজউদ্দীন বলেছিলেন, ‘আর ধ্বংস নয়, যুদ্ধ নয়। এ মুহূর্তে কাজ হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা’।
জনসভায় তাজউদ্দীন আহমদ যশোরের তত্কালীন ডিসি ওয়ালি উল ইসলাম ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন ঘোষালকে এই বলে নির্দেশনা দেন যে, আইন-শৃঙ্খলায় যেন কোনো অবনতি না হয়। জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। অপরাধী যে-ই হোক, তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করবেন।
তাজউদ্দীন আহমদ আরো বলেছিলেন, স্বাধীন এ দেশে ধর্ম নিয়ে আর রাজনীতি চলবে না। আর তাই জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
যশোরের মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম জানান, এ জনসভার খবর সংগ্রহের জন্য লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক পিটার গিল, নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সিডনি এসএইচ সশানবার্গসহ বহু বিদেশী সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।