ফ্রান্সে দুই দশকের বৃহত্তম শ্রমিক ধর্মঘটের নেপথ্যে

বণিক বার্তা ডেস্ক

১৯৯৫ সালে পেনশন সংস্কারকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সে দেখা দিয়েছিল স্মরণকালের বৃহত্তম সাধারণ ধর্মঘট। ঠিক দুই দশক পর একই বিষয়কে কেন্দ্র করে দেশটিতে শুরু হয়েছে গণধর্মঘট। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর প্রস্তাবিত পেনশন সংস্কার বিলকে কেন্দ্র করে রাস্তায় নেমেছেন হাসপাতাল কর্মী, শিক্ষক, পুলিশ অফিসারসহ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোয় দেখা দিয়েছে কর্মী সংকট। খবর বিবিসি।

মাখোঁর পেনশন সংস্কার প্রস্তাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অনেকগুলো শ্রমিক সংগঠন। এসব সংগঠন সরকারি-বেসরকারি খাতে কয়েক কোটি কর্মীর প্রতিনিধিত্ব করে। পেনশন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর নতুন বিল কর্মীদের আগের চেয়ে দীর্ঘদিন কাজ করতে বাধ্য করবে বলে জানিয়েছেন এসব সংগঠনের নেতারা। এছাড়া নতুন নিয়ম অবসর ভাতা কমাবে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। 

দেশটিতে বর্তমানে যে পেনশন ব্যবস্থা রয়েছে, তাতে ৪২টি প্রকল্প রয়েছে। সরকারি বেসরকারি খাতের জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা বেশ জটিল। অবসরের বয়স সুবিধা অনুযায়ী এসব অবসর ভাতা একেকটি একেক রকম। মাখোঁর প্রস্তাবিত পেনশন সংস্কার বিল এসব ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প ভেঙে সবার জন্য একটি অভিন্ন ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে চায়।

দেশটির বর্তমান ব্যবস্থা অনুযায়ী বেসরকারি খাতের ক্ষেত্রে কর্মীদের অবসরে যাওয়ার পূর্ববর্তী ২৫ বছরের সর্বোচ্চ বেতনের ভিত্তিতে পেনশন নির্ধারণ করা হয়। আর সরকারি খাতের ক্ষেত্রে তা হিসাব করা হয় কর্মীর অবসরে যাওয়ার আগের ছয় মাসের বেতন। মোটাদাগে পেনশন ব্যবস্থাটা এমন হলেও বিস্তারিত ব্যবস্থাটি এতটা সহজ নয়।

এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্টের নতুন পরিকল্পনা অনুসারে কর্মীদের দৈনিক কাজের ভিত্তিতে অবসর ভাতা নির্ধারণ করা হবে। এটিকে বলা হচ্ছেআর্নিং পয়েন্টপেনশন ব্যবস্থা। এতে সরকারি বা বেসরকারি খাতের কর্মীদের দৈনিক আর্নিং পয়েন্টের ভিত্তিতে অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হয়েছে।

জটিলতা হচ্ছে, নতুন পেনশন ব্যবস্থায় দৈনিক কাজের ভিত্তিতে পয়েন্ট হিসাব করার বলা হয়েছে, যা তাড়াতাড়ি অবসরে যাওয়া কর্মীদের অবসর ভাতা কমাবে। প্রসঙ্গত, দেশটিতে অবসরে যাওয়ার বয়স ৬২ বছর, যা উন্নত দেশগুলোর সংগঠন অর্থনৈতিক সহযোগিতা উন্নয়ন সংস্থাভুক্ত (ওইসিডি) দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।

নতুন পেনশন ব্যবস্থায় কর্মীরা নির্ধারিত সময়ের আগে অবসরে গেলে তার অবসর ভাতা আর্নিং পয়েন্টের অনুপাতে হ্রাস পাবে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো কর্মী ৬৩ বছরে অবসরে গেলে আর্নিং পয়েন্টের ভিত্তিতে তার অবসর ভাতা শতাংশ কমবে। উল্লেখ্য, মাখোঁর ব্যবস্থায় অবসরে যাওয়ার বয়স বাড়ানো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা কর্মীদের দীর্ঘদিন কাজ করতে বাধ্য করবে বলে আশঙ্কা করছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। 

তবে সব শ্রমিক সংগঠন মাখোঁর প্রস্তাবিত সংস্কারের বিরোধিতা করছে, এমন নয়। দেশটির বৃহত্তম শ্রমিক সংগঠন ফ্রেন্স ডেমোক্রেটিক কনফেডারেশন অব লেবার (বিএফডিটি) মাখোঁর সংস্কারের সঙ্গে বিরোধ দেখছে না। বর্তমান পেনশন ব্যবস্থা টেকসই না হওয়ায় প্রস্তাবিত সংস্কার দরকার বলে মনে করেন সংগঠনটির নেতার। প্রস্তাবিত বিল কর্মজীবী নারীদের অবসর ভাতা বাড়াবে বলেও জানিয়েছে সংগঠনটি। এছাড়া নতুন ব্যবস্থায় অসুস্থতা বা মাতৃত্বকালীন ছুটির বিপরীতে আর্নিং পয়েন্ট কাটা হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে সংস্কার বিলে। স্মরণীয়, সংগঠনের অধিকাংশ সদস্য বেসরকারি খাতের।

এদিকে চলমান ধর্মঘট নিয়ে এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৬৯ শতাংশ মানুষ ধর্মঘটের পক্ষে, যাদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৪-এর মধ্যে।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী ইদুয়ার্দে ফিলিপের অফিস কর্তৃক নভেম্বরে পরিচালিত এক সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশটির বর্তমান পেনশন ঘাটতি ২০২৫ সাল নাগাদ হাজার ৭২০ কোটি ইউরোতে ( হাজার ৯০০) দাঁ??

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন