নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন, ক্রয়াদেশ সংকট, কারখানার ত্রুটি সংশোধন, সর্বোপরি আর্থিক অসচ্ছলতা—এসব কারণে চলতি বছর প্রায় ৬০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। একই সময়ে কার্যক্রম শুরু করেছে, এমন পোশাক কারখানার সংখ্যা ৫৮। এসব তথ্য পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ)।
জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৬০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। বিজিএমইএর সদস্য এসব কারখানায় কাজ করতেন ২৯ হাজার ৫৯৪ জন শ্রমিক, যারা চাকরিচ্যুত হয়েছেন। অন্যদিকে বিজিএমইএর সদস্যপদের তথ্যে পাওয়া গেছে নতুন ৫৮টি কারখানার নাম। এসব কারখানা পূর্ণ সক্রিয় হলে কর্মসংস্থান হবে ৫১ হাজার ৩৫৯ শ্রমিকের। নতুন সদস্য হওয়া কারখানার মধ্যে বিদ্যমান পোশাক কারখানা মালিক আছেন ৩৩ জন। আর নতুন কারখানার মালিক ২৫ জন।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বণিক বার্তাকে বলেন, যে নতুন কারখানাগুলো হয়েছে, সেগুলো নতুন এবং পুরনো উদ্যোক্তা মিলিয়ে। তারা মোটামুটিভাবে কেউই দেড় থেকে দুই বছরের আগে উৎপাদনে আসতে পারবে না। কারণ এগুলোর নতুন ভবন সবে নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদের কাছ থেকে প্রভিশনাল মেম্বারশিপ না নিলে তারা বিভিন্ন লাইসেন্স পান না, এ কারণে প্রভিশনাল মেম্বারশিপ দিতে হচ্ছে। কাজেই নতুন কারখানা হলেও যে শ্রমিকরা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের জন্য এ কারখানাগুলো কোনো প্রভাব ফেলবে না।
জানা গেছে, দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় ত্রুটি সংশোধনে ব্যর্থতায় ক্রয়াদেশ পাচ্ছে না অনেক কারখানা। পণ্যের কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পাওয়ার কারণেও ক্রয়াদেশ নিতে পারছে না কেউ কেউ। ফলে বাধ্য হয়ে ব্যবসা থেকে সরে যেতে হচ্ছে এসব কারখানাকে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোরও অনেকে ব্যয়সংকোচনে উৎপাদন ইউনিট কমিয়ে আনছে। পোশাক খাতে এ ঘটনা বেশি ঘটলেও কারখানা বন্ধ হচ্ছে কম-বেশি অন্য খাতেও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন খাতের ২০৯টি কারখানা বন্ধ হয়েছে।
পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সামগ্রিকভাবে কারখানাগুলোয় ক্রয়াদেশ অনেক কম। এখানে বৈশ্বিক চাহিদা কমার বিষয়টি যেমন আছে, একইভাবে আছে বড় কারখানাগুলোর সক্ষমতা বাড়ার বিষয়টিও। ক্রেতারা ক্রয়াদেশের ক্ষেত্রে সবসময় বড় কারখানাকেই অগ্রাধিকার দেয়। বড়রা মূল্য কমিয়েও ক্রয়াদেশ নিচ্ছে। এতে সমস্যায় পড়ছে অপেক্ষাকৃত কম সক্ষমতার কারখানাগুলো।
শিল্পোদ্যোক্তাদের দাবি, ব্যয় যেভাবে বাড়ছে, এর সঙ্গে খাপ খাওয়ানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে পণ্যের মূল্য না বেড়ে বরং কমেছে। অনেকেই আর ভার বহন করতে পারছেন না। ফলে তারা দায় এড়ানোর পথে হাঁটছেন। কারখানা বন্ধ করাকেই এক্ষেত্রে বেছে নিচ্ছেন