ভিশন জেআইটি

উৎপাদন নেই, তবু রাজস্ব অব্যাহতি সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি

রাশেদ এইচ চৌধুরী, চট্টগ্রাম ব্যুরো

সরকারের নথিতে ইস্পাত প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত ভিশন জেআইটি এন্টারপ্রাইজ রি-রোলিং মিলস। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়মিত রাজস্ব অব্যাহতি দিয়ে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বাস্তবতা হলো চট্টগ্রাম বন্দর বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে আনা কাঁচামাল দিয়ে ইস্পাত পণ্য প্রস্তুত না করে বিক্রি করা হচ্ছে অন্যত্র।

ভিশন জেআইটি এন্টারপ্রাইজ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে দক্ষিণ সোনাইছড়ি ঠিকানায় অবস্থিত। সরেজমিন দেখা গেছে, সেখানে বিশাল আকারের শেড তৈরি করা হয়েছে কিন্তু ইস্পাত উৎপাদনের মতো কোনো মেশিনারিজ স্থাপন করা হয়নি। ফলে উৎপাদন কার্যক্রমও নেই। ভেতর থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সুবিধায় আমদানি হওয়া ইস্পাত কাঁচামাল ট্রাকে করে বের করে নেয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ২০১৭ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মোট ১৩ হাজার ২৩২ টন ইস্পাত কাঁচামাল আমদানি করেছে ভিশন জেআইটি এন্টারপ্রাইজ। রাজস্ব অব্যাহতি পাওয়ায় পণ্য মাত্র আড়াই কোটি টাকার শুল্ক পরিশোধ করে পৌঁছে গেছে কারখানায়। একই সময়ে বেনাপোল বন্দর দিয়েও হাজার ৬৩৯ টন স্পঞ্জ আয়রন (ইস্পাত কাঁচামাল) আমদানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আমদানিসংক্রান্ত ব্যাংকিং (ঋণপত্র) কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সীতাকুণ্ড শাখায়।

যোগাযোগ করা হলে ভিশন জেআইটি এন্টারপ্রাইজের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. শোয়াইব উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা এখনো ইস্পাত পণ্য উৎপাদনে যেতে না পারলেও উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর বিষয়টি পরিকল্পনায় রয়েছে। আমাদের স্থাপনা মেশিনারিজ রয়েছে। উৎপাদনে না থাকলেও তিন বছর ধরে কীভাবে রাজস্ব অব্যাহতি নিয়ে ইস্পাত কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ইস্পাত কাঁচামাল মজুদ করে রেখেছি। উৎপাদনে গেলে ইস্পাত তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তিনি এর চেয়ে বেশি আর কিছু বলতে রাজি হননি।

চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত তিন বছরে ভিশন জেআইটির আমদানির বিপরীতে কোনো মূসক (ভ্যাট) দেয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি হাজার ৫১২ টন কোয়াটজিট পাউডার আমদানিতে এটিভি (অগ্রিম কর) অব্যাহতি সুবিধার পাশাপাশি সাফটা চুক্তির আওতায় শতাংশ আমদানি শুল্ক অব্যাহতি নিয়েছে এনবিআর থেকে। এছাড়া উৎপাদনকারীর সুবিধা নিয়ে ১১ হাজার ৫০০ টন মেল্টাবল স্টিল স্ক্র্যাপ, ২৪৩ টন ফেরো সিলিকন ম্যাঙ্গানিজ হাজার ৬৩৯ টন স্পঞ্জ আয়রন আমদানিতে কোনো মূসক দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

কাস্টমস, এক্সাইজ ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার এনামুল হক প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, উৎপাদন কার্যক্রম নেই অথচ রাজস্ব অব্যাহতি নিয়ে ইস্পাত কাঁচামাল আমদানিতে সক্রিয় আছে, এটা বড় ধরনের অপরাধ। উৎপাদনে না থাকলে এভাবে আমদানির কোনো সুযোগই নেই। ব্যাপারে ভিশন জেআইটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে সরেজমিন অনুসন্ধানে ভিশন জেআইটির পাশাপাশি একই স্থানে ড্রাগন স্টিল প্ল্যান্ট নামে আরো একটি নতুন ইস্পাত কারখানার সন্ধান মিলেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিশন জেআইটির সহযোগী হিসেবে ড্রাগন স্টিলও ইস্পাত কারখানা হিসেবে নতুন করে সরকারি নথিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কাস্টমসের তথ্য সংগ্রহ করে দেখা গেছে, এরই মধ্যে চার মাসে (মার্চ-জুন) প্রায় ১৪ হাজার ইস্পাত কাঁচামাল আমদানি করেছে সহযোগী প্রতিষ্ঠান। আমদানি কার্যক্রমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংকের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখায়। ইন্ডাস্ট্রিয়াল সুবিধা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের পক্ষেও রাজস্ব অব্যাহতি নেয়া হয়েছে, যদিও বাস্তবে ড্রাগন স্টিল প্ল্যান্ট কারখানাতেও কোনো মেশিনারিজ কিংবা উৎপাদন কার্যক্রম নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন