হিলির পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ নেমে এসেছে ১৪০ টাকায়

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, হিলি

দিনাজপুরের হিলিতে আরেকদিনের ব্যবধানে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা। একদিন আগেও প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন তা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। আর দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি দরে যা গতকাল ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।

হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত দুদিন থেকেই পেঁয়াজের বাজার নিন্মমুখি অবস্থায় রয়েছে। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম কম বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। বর্তমানে হিলি বাজারে খুচরাতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে যা একদিন আগে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল।

হিলি বাজারে মাহবুব হোসেন নামে এ পেঁয়াজ ক্রেতা জানান, বাজারে যে হারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে তা আর বলার মতো আমাদের ভাষা নেই। সকালে একদামে বিক্রি হচ্ছে বিকেলে আর এক দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে কোনধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই সরকারের। সেই সাথে নেই কোন মনিটরিং যার কারণে ব্যবসায়ীরা যে যার ইচ্ছে মতো পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। একই বাজারে একেকজনের কাছে একেক দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে এতো দামে পেঁয়াজ কিনতে আমাদের সাধারণ মানুষদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘গত দুদিন থেকে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে, কিন্তু তারপরেও এক কেজি পেঁয়াজ আমাদের কিনতে হচ্ছে দেড়শো টাকা দিয়ে তাহলে আমরা অন্য বাজার করবো কীভাবে। একারণে পেঁয়াজ খাওয়াই কমিয়ে দিয়েছি আমরা।’ পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রনে দ্রুত সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। 

হিলি বাজারের পাইকারী পেঁয়াজ বিক্রেতা মনিরুল আলম বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় দেশের বাজারে পণ্যটির সরবরাহ কম থাকার কারণে হিলিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজের দাম উর্ধ্বমুখি হয়ে ওঠে। এমন অবস্থায় পেঁয়াজের মুল্যবৃদ্ধি রুখতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করছে প্রশাসন। এতে করে অনেকেই মজুদ করা পেঁয়াজ ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ আগের চেয়ে খানিকটা কম লাভে বাজারে ছাড়ছেন। এতে করে বাজারে আগের তুলনায় পেঁয়াজের সরবরাহ খানিকটা বাড়ছে।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে বাজারে দেশীয় পাতা পেঁয়াজও উঠতে শুরু করেছে। এছাড়াও হিলির আশেপাশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে চোরাইপথেও পেঁয়াজ আসছে। এই বিক্রেতার ধারণা, প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড়হাজার কেজি পেঁয়াজ আসছে; যার কারণে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে।

সরবরাহ বাড়ায় বিক্রেতারা কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন বলেই কম দামে বিক্রি করছেন বলেও জানান এই ব্যবসায়ী। পেঁয়াজের সরবরাহ এমন থাকলে পেঁয়াজের বাজার আরো কমে আসবে বলে তিনি জানিয়েছেন। 

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলম জানান, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে দেশে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মাঝখানে দেশের কোন কোন স্থানে ২শ বা তার অধিক দামে বিক্রি হয়েছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি করেছি। ব্যবসায়ীরা যেন ক্রয় মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পেঁয়াজ বিক্রি করে সেটাও দেখা হচ্ছে।

কেউ যেন পেঁয়াজ মজুদ করতে না পারে এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পেঁয়াজের মুল্য বৃদ্ধি না করতে পারে এজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘সেই সাথে ব্যবসায়ীদের সাথে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছি, সরেজমিন বাজার পরিদর্শন করেছি, সেই সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে বাজারে পেঁয়াজের দর সম্পর্কে খোজখবর নিয়েছি। এতে করে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও অভিযানের ফলে বর্তমানে মোটামুটি একটা পর্যায়ে রয়েছি, এখন তারা যে দামে পেঁয়াজ ক্রয় করছেন এর সাথে পরিবহন ও দুই একটাকা লাভ মিলিয়ে যে মূল্য হয় সেভাবে বিক্রি করছেন। এর ফলে হাকিমপুরে কোন মজুতদার বা অন্যকোন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। সারাদেশে পেঁয়াজের মূল্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলেও হাকিমপুরে পেঁয়াজের মূল্য তুলনামুলক সবসময় কম ছিল।’ বর্তমানে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে তা ধীরে ধীরে আরো কমবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন