অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কারা অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) বজলুর রশীদকে গতকাল গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। সেই সঙ্গে গতকালই তার বিরুদ্ধে অসাধু উপায়ে অর্থ উপার্জনের অভিযোগে একটি মামলা করেছে দুদক।
কমিশনের সম্মিলিত ঢাকা জেলা কার্যালয়-১-এ দুদক উপপরিচালক সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে দুদক আইনের ২৭ (১) ধারায় মামলাটি করেন। মামলায় তার বিরুদ্ধে সোয়া ৩ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী রোডে রূপায়ন হাউজিংয়ের স্বপ্ন নিলয় প্রকল্পের ২ হাজার ৯৮১ বর্গফুট আয়তনের একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন বজলুর রশীদ। এর দাম হিসেবে পরিশোধ করা ৩ কোটি ৮ লাখ টাকার কোনো বৈধ উৎস তিনি প্রদর্শন করতে পারেননি। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য রূপায়ন হাউজিং এস্টেটের সঙ্গে বজলুর চুক্তি করেছিলেন। এরপর ২০১৮ সালের ৭ জুন পর্যন্ত ৫৪ হাজার টাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে চেকে পরিশোধ করেন। আর বাকি ৩ কোটি ৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা নগদে পরিশোধ করেন।
দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন বজলুর রশীদ। কিন্তু তিনি অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়সংক্রান্ত কোনো তথ্য আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেননি। ফ্ল্যাট কেনার অর্থের উৎসের বিষয়ে যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। ফলে তার এ পরিশোধিত ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।
ডিআইজি প্রিজন বজলুর রশীদের ঘুষ লেনদেন নিয়ে সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, বিপুল পরিমাণ ঘুষের টাকা স্থানান্তর করতে বজলুর রশীদ অভিনব এক পন্থা বেছে নিয়েছেন। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে শতাধিক ধাপে তিনি পাঠিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। টাকা তুলেছেন তার স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহার। এজন্য প্রকৃত ঠিকানা গোপন করে স্ত্রীর নামে সিম তোলা হয়েছে এবং সরাসরি নিজে টাকা না পাঠিয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির মাধ্যমে ওই টাকা পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
এদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্প্রতি বজলুর রশীদ ও অন্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বে একটি দল এ কাজের দায়িত্বে রয়েছে। দলের অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক মো. নাসিরউদ্দিন ও মো. সালাহউদ্দিন।
কারা ক্যাডারের ১৯৯৩ ব্যাচের কর্মকর্তা বজলুর রশীদ এখন ঢাকায় কারা সদর দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছেন। ডিআইজি হিসেবে এর আগে সর্বশেষ রাজশাহীতে ছিলেন। জেল সুপার পদে বরগুনায় কর্মজীবন শুরু করে একই পদে সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়ি এবং জ্যেষ্ঠ জেল সুপার হিসেবে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মরত ছিলেন তিনি।