ডেঙ্গুর বিস্তার : ঈদের পরদিন ১ হাজার ৮৮০ জন হাসপাতালে ভর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদুল আজহার দিন দেশের হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় কমে এসেছিল। তবে ঈদের পরদিনই বেড়ে গেছে রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ১ হাজার ৮৮০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। ঈদের দিন এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২০০। ঈদের পরদিন ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু রোগী বেশি ভর্তি হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, উল্লিখিত সময়ে ঢাকার হাসপাতালগুলোয় ৭৫৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১২৫ জন ডেঙ্গু রোগী। এর আগের দিন ঢাকার হাসপাতালগুলোয় ৫৯৯ জন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় ৬০১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিল।

চলতি বছরের শুরু থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে সব মিলিয়ে ৪৬ হাজার ৩৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে ৭ হাজার ৮৬৯ জন এখনো দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালগুলোয় ভর্তি আছে ৪ হাজার ১৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৭২৬। আগের দিন দেশজুড়ে হাসপাতালগুলোয় ৮ হাজার ৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল। বছরের শুরু থেকে এ সময় পর্যন্ত দেশজুড়ে ৩৮ হাজার ৪৪২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন।

গত কয়েক দিনের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা অল্প অল্প করে কমে আসছে। ১১ আগস্ট দেশজুড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২ হাজার ৩৩৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। পরদিন এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৯৩ জনে। ঈদের দিন (১৩ আগস্ট) দেশজুড়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ১ হাজার ২০০ ডেঙ্গু রোগী। ঈদের পরদিন তা কিছুটা বেড়ে ১ হাজার ৮৮০ জনে উন্নীত হয়েছে।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক দেশে ডেঙ্গু রোগী কমে আসার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘দেশজুড়ে হাসপাতালগুলোয় ভর্তি থাকা ও নতুন করে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমতির দিকে রয়েছে। এর পেছনে সাধারণ মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি অবদান রেখেছে।’ তবে মন্ত্রীর এ দাবির পরদিনই দেশের হাসপাতালগুলোয় নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় বেড়ে গেছে।

এদিকে সরকারি হিসাব বলছে, চলতি বছর দেশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৪০ জন। এর মধ্যে এপ্রিলে দুজন, জুনে চারজন, জুলাই মাসে ২৪ জন আর চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ১০ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যে এ সংখ্যা শতাধিক।

বণিক বার্তার প্রতিনিধিরা ঢাকার বাইরে থেকে ডেঙ্গু রোগী মৃত্যুর খবর দিয়েছেন। প্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যমতে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে মোসাব্বির হোসেন মাহফুজ (১৮) নামের একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. মেহেদী ইকবাল। মোসাব্বির হোসেন চলতি বছর পাবনার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ঢাকায় কোচিং করছিলেন। তিনি ঢাকাতেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

ঢাকাতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঈদ করতে নিজ জেলা গোপালগঞ্জ গিয়েছিলেন রমনা পার্কের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. রাসেল (৩২)। অবস্থার অবনতি হলে ১১ আগস্ট তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুমেক হাসপাতাল পরিচালক এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ। গত তিনদিনে খুলনা বিভাগে নতুন করে ৩৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা জানিয়েছে।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তানজিদ নামের নয় বছর বয়সী এক শিশুর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতাল পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন