ঈদযাত্রা : রেল-সড়ক দুই পথেই ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রেলপথে একের পর এক শিডিউল বিপর্যয়। আর মহাসড়কে তীব্র যানজট। যানবাহন চললেও খুবই ধীরগতিতে। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ও মহাসড়কের যানজট স্বস্তি দিচ্ছে না ঈদে ঘরমুখী মানুষদের। সময়মতো বাস-ট্রেন না পৌঁছানোয় কাউন্টার ও স্টেশনে কাটাতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়।

আগের দুই দিনের মতো গতকালও অতিরিক্ত গাড়ির চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিন দুপুর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইলের পাকুল্যা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ৪০ কিলোমিটারে গাড়ি চলেছে খুবই ধীরগতিতে।

যানজট হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম মহাসড়কেও। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম গোলচত্বর এলাকা থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে স্বাভাবিক সময়ে যেখানে ২০-২৫ মিনিট লাগে, সেখানে গতকাল লেগেছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীরা। এছাড়া এ মহাসড়কের নলকা ব্রিজের উপরিভাগের বিটুমিন ও পাথরের মিশ্রণের স্তর ফুলে উঠেছে। দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে থাকা ব্রিজটিতে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ধোপাকান্দি ব্রিজটি সরু হওয়ায় এখানে এসে যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে, যা যানজট বাড়িয়ে দিচ্ছে।

পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপের কারণে রাত থেকে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, তবে সেটা স্থায়ী নয়। এছাড়া হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে রাজশাহী, বগুড়া ও পাবনাগামী মহাসড়কে মাঝেমধ্যে যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে।

যানজটপ্রবণ পয়েন্টগুলোর অন্যতম টাঙ্গাইল বাইপাস। এর বাইরে করটিয়া, বোর্ডঘর বাজারসহ হাট-বাজার ও ইন্টারচেঞ্জগুলো যানজটকে তীব্রতা দিয়েছে। এছাড়া সড়কটিতে ঘটেছে তিনটি দুর্ঘটনা। জানমালের তেমন ক্ষতি না হলেও দুর্ঘটনায় গাড়িগুলো মহাসড়কে যানজট বাড়িয়ে দিয়েছে।

মহাসড়কে এ যানজটের কারণ হিসেবে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপকেই বড় করে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাব বলছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ হাজার ৩৩৭টি যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়েছে, যা এ যাবত্কালের সর্বোচ্চ। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত কোনো গাড়ি দ্রুত চলতে পারছে না।

যানজটের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে ভোগান্তির মাত্রাও বেড়েছে ঘরমুখী মানুষের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন যাত্রীরা। ফিরতি লেন অবরোধ করে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেন ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে টাঙ্গাইল বাইপাস অংশে ঘটে এ ঘটনা। পরে হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

যদিও আগের দুই দিনের তুলনায় ঈদযাত্রা মোটামুটি স্বস্তিদায়ক হচ্ছে বলে দাবি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের। গতকাল তিনি বলেন, তীব্র যানজট নেই। তবে মহাসড়কে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। এ কারণে সময়মতো গাড়ি পৌঁছাতে পারছে না। যাত্রীরা টার্মিনালে বসে কষ্ট পাচ্ছেন। কিছুটা দুর্ভোগ যে নেই, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে আগের দুই দিনের তুলনায় ঈদযাত্রা মোটামুটি স্বস্তিদায়ক হচ্ছে।

এদিকে দুই ফেরিঘাটেই যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ায় চার শতাধিক গাড়ি পদ্মা পারের অপেক্ষায় ছিল। একই অবস্থা পাটুরিয়া ফেরিঘাটেও। সেখানেও গতকাল দুপুরের দিকে ফেরি পারের অপেক্ষায় কয়েকশ যানবাহনকে দণ্ডায়মান থাকতে দেখা যায়।

স্বস্তি মিলছে না রেলপথের যাত্রীদেরও। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখী মানুষদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা কমলাপুর স্টেশনেই কাটাতে হচ্ছে। কোনো কোনো ট্রেন ছাড়ছে নির্ধারিত সময়ের ১০-১২ ঘণ্টা পর। রাজশাহীগামী পদ্মা এক্সপ্রেসের ঢাকা ছাড়ার কথা ছিল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায়। কিন্তু ছেড়েছে গতকাল সকাল ১০টায়। এ পুরো সময় যাত্রীদের বসে থাকতে হয়েছে প্লাটফর্মে।

রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সুন্দরবন এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা শিডিউল বিপর্যয় ডেকে এনেছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে যেসব ট্রেন যায়, তার সবগুলোই কম-বেশি বিলম্বে ছাড়ছে। রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস গতকাল সকাল ৬টায় ঢাকা ছাড়ার কথা থাকলেও সূচি পিছিয়ে বেলা আড়াইটায় নতুন সময় নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল এদিন সকাল ৬টা ২০ মিনিটে। সেটিও পিছিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা করা হয়। চিলাহাটীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে বিকাল সাড়ে ৪টায় করা হয়। রংপুর এক্সপ্রেসের ঢাকা ছাড়ার কথা ছিল সকাল ৯টায়। এটি ছাড়ার নতুন সময় নির্ধারণ করা হয় রাত ৯টা।

নীলসাগর এক্সপ্রেসের অপেক্ষায় স্টেশনে বসে ছিলেন কামাল হোসেন। বিরক্তি নিয়ে তিনি বলেন, ট্রেন ছাড়ার কথা সকাল ৮টায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছে রাতে ছাড়বে। তাতেও ভরসা রাখতে পারছি না।

এছাড়া লালমনি এক্সপ্রেসের কমলাপুর স্টেশন ছাড়ার কথা ছিল সকাল সোয়া ৯টায়। এ ট্রেনেরও ঢাকা ছাড়ার নতুন সূচি নির্ধারণ করা হয় রাত সাড়ে ১০টায়। পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেসের কমলাপুর স্টেশন ছাড়ার কথা ছিল সকাল ১০টায়। এ সূচি বদলে করা হয় ১১টা ২৫ মিনিট।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন