সিল্করুট

প্রত্নলেখমালায় সমতটের চন্দ্র রাজবংশ

ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম

শ্রী লড়হচন্দ্রের তাম্রশাসন। ছবি: ময়নামতি জাদুঘর

প্রাচীন বাংলার একটি উল্লেখযোগ্য জনপদ সমতট। সমুদ্র তটের সমান বলেই এর নাম সমতট এবং এটি সংস্কৃত শব্দ থেকে উদ্ভূত। সম্ভবত আর্যদের দ্বারাই এ নাম প্রবর্তিত হয়েছিল। এ জনপদের ইতিহাস অনেক পুরনো। প্রাচীন ভারতের পরাক্রমশালী গুপ্ত বংশের সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ প্রশস্তিতে কামরূপ, নেপাল ইত্যাদি রাজ্যগুলো জয়ের পাশাপাশি সমতটের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীন সাহিত্য বৃহৎসংহিতায় সমতট একটি পৃথক জনপদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ, ইৎ সিঙ এদের বর্ণনায়ও সমতটের পরিচয় পাওয়া যায়। হিউয়েন সাঙের বিবরণ অনুযায়ী কামরূপ (পূর্ব আসাম) থেকে দক্ষিণ দিকে ১২০০-১৩০০ লি (প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার) অতিক্রম করে তিনি সমতট (সান-মো-তট-অ) পৌঁছেন, যার প্রদক্ষিণ পথ ছিল প্রায় ৩ হাজার লি (প্রায় ৮০০ কিলোমিটার)। জনপদটি ছিল সমুদ্রের পাশে অবস্থিত, নিচু ও আর্দ্র। তিনি বৌদ্ধ সংস্কৃতির কেন্দ্র ২০ লি (প্রায় ৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার) আয়তনবিশিষ্ট সমতটের রাজধানীর চিত্রও তুলে ধরেছেন।

সমতটের অবস্থান সম্পর্কে চীনা পর্যটক ইৎ সিঙ বেশকিছু তথ্য দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, চৈনিক শ্রমণ শেং চি সাত শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এ অঞ্চল পরিভ্রমণ করার সময় রাজভট্ট ছিলেন সমতটের শাসক। জ্যোতির্বিদ টলেমিও সমতট অঞ্চলের বিবরণ দিয়েছেন। ঐতিহাসিক মিনহাজ উস সিরাজের লেখায় ‘সকনত/সনকত/সনকানাত’ বলতে সমতটকেই বুঝিয়েছেন বলে ধরা হয়। প্রচলিত অর্থে প্রাচীন সমতট রাজ্য বলতে বর্তমানের বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলকে বোঝাত। সমতট রাজ্যের রাজধানী ছিল রোহিতগিরি বর্তমান নাম শালবন বিহার। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দী থেকে (কারো কারো মতে সপ্তম শতাব্দী) দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এ জনপদের বিস্তৃতি ছিল প্রায় ৫০০ মাইল এবং বর্তমান ভারতের ত্রিপুরা জেলা ছিল সমতটের অন্যতম অংশ। চার-তেরো শতক পর্যন্ত সমতট এ অঞ্চলের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ দীর্ঘকালীন সময়ে সমতটে চন্দ্র বংশের শাসন খুবই উল্লেখযোগ্য।

দশম-একাদশ শতাব্দীতে চন্দ্র বংশের রাজারা সমতটে দীর্ঘদিন এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে শাসন করেছিলেন। চন্দ্র বংশের উল্লেখযোগ্য রাজা ছিলেন ত্রৈলোক্যচন্দ্র (৯০০-৯৩০ খ্রি.), শ্রীচন্দ্র (৯৩০-৯৭৫ খ্রি.), কল্যাণচন্দ্র (৯৭৫-১০০০ খ্রি.), লড়হচন্দ্র (১০০০-১০২০ খ্রি.) ও গোবিন্দচন্দ্র (১০২০-১০৫০ খ্রি.)। ধর্মের দিক থেকে চন্দ্র রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। প্রাচীন বাংলার এ রাজবংশের শাসন মূলত দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার সমতট অঞ্চল ও উত্তর আরাকান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল বলে ধারণা করা হয়। তবে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় যখন চন্দ্র রাজবংশের উদ্ভব ঘটে, তখন স্বতন্ত্র হিসেবে হরিকেল রাজ্যের পতন ঘটে। এমনকি সে সময় গৌড়ের পাল রাজারাও ছিলেন অস্তিত্বের সংকটে।

সমতটের চন্দ্র রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ত্রৈলোক্যচন্দ্র ছিলেন হরিকেল রাজার আধার। চন্দ্র রাজবংশের পূর্বপুরুষরা যেমন পূর্ণচন্দ্র, সুবর্ণচন্দ্র সামন্ত বা ভূস্বামী ছিলেন। যতটুকু জানা যায় তারা ‘‌রোহিতগিরির’ ভূস্বামী ছিলেন। রোহিতগিরি কোথায় অবস্থিত তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। ড. আবদুল মমিন চৌধুরী মনে করেন ‘‌রোহিতগিরি’র অবস্থান বাংলার বর্তমান কুমিল্লার নিকটবর্তী ছিল। নলিনীকান্ত ভট্টশালীর মতে, রোহিতগিরি হলো কুমিল্লা জেলার লালমাই পাহাড়। যা-ই হোক, ত্রৈলোক্যচন্দ্রই ছিলেন চন্দ্রবংশের প্রথম রাজা। চৌধুরী ও ভট্টশালীর মতোই অধিকতর গ্রহণযোগ্য। লড়হচন্দ্রের তাম্রশাসনে ত্রৈলোক্যচন্দ্রকে চন্দ্রবংশের প্রতিষ্ঠাতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার গুণাবলির উল্লেখে বলা হয়েছে পরিশুদ্ধিমান (পরিশুদ্ধ), পুণ্যতম (সবচেয়ে পুণ্যবান), অপগতত্রাস (নির্ভিক) ও জগতের প্রীতির পাত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ত্রৈলোক্যচন্দ্রকে বড় রাজাদের আনন্দময় আশ্রয়স্থল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

চন্দ্র বংশের প্রতিষ্ঠাতা ত্রৈলোক্যচন্দ্রের পর তার পুত্র শ্রীচন্দ্র সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার রাজত্বকাল আনুমানিক ৯৩০-৯৭৫ খ্রি.। তিনি চন্দ্র বংশের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী রাজা ছিলেন। চন্দ্রলেখমালায় দেখা যায় শ্রীচন্দ্র পরমেশ্বর পরম ভট্টারক মহারাজাধিরাজ উপাধি ধারণ করেছিলেন এবং তিনি নিজেকে পরম সৌগত মহারাজাধিরাজ শ্রী ত্রৈলোক্যচন্দ্রদেবের পায়ের অনুগ্রহ ছিলেন বলে দাবি করেছেন। এ থেকে বোঝা যায় শ্রীচন্দ্র শৈশব থেকেই উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত ছিলেন। শ্রীচন্দ্র অনেক যুদ্ধবিগ্রহে অংশগ্রহণ করেন এবং সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছিলেন। সমগ্র বঙ্গ অঞ্চল ও উত্তর-পূর্বে কামরূপ পর্যন্ত তিনি চন্দ্র রাজ্য সম্প্রসারণ করেন। ঐতিহাসিক আবদুল মমিন চৌধুরী বলেন, নিঃসন্দেহে সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় শ্রীচন্দ্রের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার আমলে চন্দ্র সাম্রাজ্য প্রতিপত্তি ও উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছিল। নিঃসন্দেহে শ্রীচন্দ্র চন্দ্ররাজবংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ও রাজা ছিলেন। শ্রীচন্দ্র পরম সৌগত পরমেশ্বর পরম ভট্টারক মহারাজাধিরাজ উপাধি ধারণ করেছিলেন।

প্রাচীন বাংলায় শ্রীচন্দ্রের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব ছিল অনেক বেশি অঞ্চলের ওপর বিস্তৃত, কিন্তু সে ক্ষমতার ঘোষণায় তিনি যথেষ্ট বিনয়ের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি গৌড়দের বিরুদ্ধেও অস্ত্রধারণ করেন (খুব সম্ভবত কম্বোজ গৌড়পতি বা পালদের বিরুদ্ধে)। পাল রাজা দ্বিতীয় গোপালের সময় পালদের ক্ষমতা রক্ষাকল্পে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। এ ঘটনাই শ্রীচন্দ্রের পশ্চিম ভাগ তাম্রশাসনের একটি শ্লোকে দ্বিতীয় গোপালকে ‘গোপাল-সংরোপণে মহোৎসবগুরু’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গৌড়ের পাল রাজারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হওয়ায় সমতটের চন্দ্র বংশীয় বৌদ্ধ রাজা হিসেবে শ্রীচন্দ্র এগিয়ে এসেছিলেন বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। এমন হতে পারে চন্দ্র রাজা শ্রীচন্দ্র সমরাভিযান, যশ প্রবৃত্ত লাভ করেছিলেন তার মহিমা গৌড়ের পাল রাজাদেরও অতিক্রম করে গেছে। এটা দেখানোর উপায় হিসেবে এ উক্তি করা হতে পারে। পশ্চিম ভাগ তাম্রশাসনে তিনি নিজেকে পরম সৌগত পরমেশ্বর পরম ভট্টারক মহারাজাধিরাজ বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলার পাল ও সেন রাজারাও একই রকমের উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। এ থেকে অনুমিত হয় যে চন্দ্র রাজারাও পাল সেন রাজাদের মতো স্বাধীন ও সার্বভৌম শাসক ছিলেন।

চন্দ্র রাজাদের তাম্রশাসনের অনুলেখ থেকে জানা যায় শ্রীচন্দ্র বঙ্গ, সমতট ও শ্রী হট্টজুড়ে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। সমতটের পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোয় শ্রীচন্দ্রের একাধিপত্য ও প্রভাব ছিল। লড়হচন্দ্রের রাজত্বকালের ষষ্ঠ বছরে উৎকীর্ণ চারপত্রমুড়া তাম্রশাসনের শ্লোকে শ্রীচন্দ্রের রাজ্য বিজয়ের গৌরবের কথা বলা আছে। ওই লিপিতে বলা হয় শ্রীচন্দ্র প্রাগজ্যোতিষের বধূদের চোখের জল অনবরত ঝরাতেন (প্রাগজ্যোতিষেশ্বর বধূজনলোচনানাং বাষ্পব্যয়তম) এবং গৌড়ের হেরেমের রমণীদের হাসি (গৌড়াবরোধবনিতাধর পল্লবানি চক্রে চ যো বিগলিত স্মিতকুড়ালানি) কেড়ে নিয়েছিলেন। গৌড় রাজাদের পরাজিত করার চিত্র চন্দ্ররাজাদের অনেক তাম্রলিপিতে পাওয়া যায়। শ্রীচন্দ্রের সমতট তাম্রশাসনের শ্লোক থেকে জানা যায় তিনি কামরূপে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন এবং জয়লাভ করেছিলেন। তবে সেখানে রাজ্য বিস্তার করেছিলেন কিনা এ বিষয়ে তথ্য অপ্রতুল।

শ্রীচন্দ্রের তাম্রশাসনের শুরুতে সমতটের চন্দ্রবংশের পরিচয় ও গৌরব তুলে ধরা হয়েছে। অনেক জায়গায়ই চন্দ্রবংশের আদি পুরুষদের রোহিতগিরির ভূস্বামী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পৌণ্ড্রভুক্তির অনেক জায়গায় ব্রাহ্মণদের ভূমি দান করার কথা বলা হয়েছে। এসব দানের উদ্দেশ্য ছিল মাতাপিতাসহ তার নিজের আত্মার পুণ্য ও খ্যাতি বৃদ্ধির জন্য। গোবিন্দচন্দ্রের চারপত্রমুড়া তাম্রশাসনেও শ্রীচন্দ্রের প্রশংসা আছে।

শ্রীচন্দ্রের পুত্র কল্যাণচন্দ্রের ভূয়সী প্রশংসা পাওয়া যায় চন্দ্র লিপিমালায়। লড়হচন্দ্রের লিপিতে কল্যাণচন্দ্রের বহুমুখী প্রশংসা তুলে ধরা হয়েছে। তার শৌর্য-বীর্য, তার দিগ্বিজয়, তার রাজকীয় ও আভিধানিক গুণাবলি, বংশ পরিচয় ইত্যাদি। লিপির প্রশস্তিতে বলা হয়েছে ‘‌তার বিমল ও উজ্জ্বল গুণাবলি ত্রিভুবনালংকারে পরিণত হয়েছে এবং তিনি জাত-স্বভাবেই মহারাজগণের শিরদ্বার উচ্চৈঃ ধৃত ও সেবিত।’ অনুরূপভাবে তার বিজয়াভিযানের প্রশংসায় বলা হয়েছে: ‘‌কল্যাণচন্দ্র ম্লেচ্ছ রমণীদের চোখে সুবিশাল জলধারা বইয়ে দিয়েছিলেন এবং গৌড়ের রমণীদের হাস্য-চন্দ্রিকা বিলীন করে দিয়েছিলেন।’ তার খ্যাতি আট দিকে গঙ্গার স্রোতধারার মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। গোবিন্দচন্দ্রের চারপত্রমুড়া তাম্রশাসনেও কল্যাণচন্দ্রকে ত্যাগে বলী, প্রতাপে রাম, সত্যে যুধিষ্ঠির ও শৌর্যে অর্জুন বলে অভিহিত করা হয়েছে।

চন্দ্র রাজাদের তাম্রশাসনে অনেক ভূমি দানের কথা বলা আছে। তাম্রশাসনগুলো ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্য প্রতিষ্ঠানে ভূমি দানের দলিল। এসব তাম্রশাসনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমতটের কৃষি ও কৃষক শ্রেণীর তথ্য আছে। শ্রীচন্দ্রের কুমিল্লা/ঢাকা (বাংলাদেশ জাতীয়) জাদুঘর তাম্রশাসনে জনপদবাসী ও কৃষকদের তথ্য আছে। লড়হচন্দ্র তার চারপত্রমুড়া তাম্রশাসন দুটির মাধ্যমে লড়হমাধব মন্দিরে ভূমি দান করেন। এসব তাম্রশাসনে ভূমির সঙ্গে জড়িত কৃষি ও কৃষকেরও ইঙ্গিত আছে। যেমন লড়হচন্দ্রের চারপত্রমুড়া তাম্রশাসন-১-এর মধ্যে ডোল্লবায়িকা গ্রাম, সুপকার (পাচক), বোরক (লিপিকার), করবত্তি বোকর (করবত্তি নামক লিপিকার), বন্ধকি (সূত্রধর), গোধানি (গোচারণভূমি), ওড় গোধানি (ওড়ের গোচারণভূমি), জয়লন্ত গ্রাম, বুদ্ধিগঙ্গিনী, বন্ধুরের ভোগদখলকৃত ভূমি, দেবতা শঙ্করের ভূমি, ধৃতিপুর হট্টিকা (হাটবাজার), মহাদেব গ্রাম, কৃষক ও জনপদবাসী, তৃণপুতি গোচর, লবণ, আম-কাঁঠালও নারকেল-সুপারি, দিঘি ইত্যাদি উল্লেখ আছে। ডোল্লবায়িকা গ্রাম, জয়লন্ত গ্রাম, বপ্নসিংহ গ্রাম এবং মহাদেব গ্রামের কোনো কোনোটিতে পাচক, পালকিবাহক, সূত্রধর প্রভৃতি শ্রেণী-পেশার মানুষ বসবাস করত। গ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিল হাটবাজার ও গোচারণভূমি। কোনো কোনো গ্রামে লবণ উৎপাদনের ব্যবস্থাও ছিল, তারও উল্লেখ পাওয়া যায়। কোনো কোনো বিশেষ ব্যক্তির ভোগদখলে কোনো কোনো ভূমি (কৃষিভূমি) এবং গোচারণভূমি ছিল। গোবিন্দচন্দ্রের চারপত্রমুড়া তাম্রশাসনের মাধ্যমে সমতটের মন্দিরে ভূমি দান করা হয়। এ ভূমিতে ঘাস ও তৃণপুতিসহ গোচারণভূমি, আম-কাঁঠাল ও নারকেল-সুপারির গাছগাছালি, লবণ খেত ইত্যাদির সমাহার ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার লড়হচন্দ্রের চারপত্রমুড়া তাম্রশাসনেও এরূপ গ্রামীণ ও কৃষি সমাজের বিবরণ পাওয়া যায়। এ তাম্রশাসনেও তৃণপুতি ও ঘাসযুক্ত গোচারণ ভূমি, আম-কাঁঠাল ও নারকেল-সুপারির গাছগাছালি ও লবণ খেতের উল্লেখ আছে।

দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার এক পরিচিত জনপদ হিসেবে সমতট প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। প্রত্নলিপিমালায় প্রাপ্ত তথ্য হতে দেখা যায়, চন্দ্র রাজাদের সময় সমতট শক্তিশালী রাজ্য হিসেবে প্রাচীন বাংলায় আবির্ভূত হয়। বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও পোড়ামাটির ফলক থেকে দেখা যায় চন্দ্র রাজাদের সময় কুমিল্লা লালমাই অঞ্চলে একটি সমৃদ্ধ জনবসতি গড়ে ওঠার বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। চন্দ্র রাজাদের নামের সঙ্গে পরম সৌগত পরম ভট্টারক পরমেশ্বর মহারাজাধিরাজ প্রভৃতি প্রত্যয় সংযুক্তি দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় তাদের সার্বভৌমত্বের পরিচয় প্রমাণ করে। তবে উপযুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান ও খননের অভাবে সমতট অঞ্চলের ইতিহাস এখনো বিস্তারিতভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। প্রত্ননিদর্শনগুলো বেশি পরিমাণে শনাক্ত করা সম্ভব হলে ওই সময়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস সম্পর্কে আরো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব।


ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম: অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়