সিল্করুট

কিতাব আত তাসরিফ

শল্যচিকিৎসায় পথ দেখিয়েছে যে বই

নিজাম আশ শামস

কিতাব আত তাসরিফের ত্রয়োদশ শতাব্দীর পাণ্ডুলিপি। সূত্র: চেস্টার বেটি লাইব্রেরি

মধ্যযুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের লাগাম ছিল মুসলমানদের হাতে। জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় মুসলিম মনীষী ও বিজ্ঞানীরা রেখেছেন উল্লেখযোগ্য অবদান। বর্তমান বিজ্ঞানের অনেক শাখা তাদের হাত ধরে যাত্রা করেছে। চিকিৎসাক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ সার্জারি (শল্যচিকিৎসা)। এ বিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন আবুল কাসিম খালাফ ইবনে আব্বাস আল জাহরাভি। তাকে বলা হয় আধুনিক সার্জারির জনক। 

সার্জারির প্রথম পূর্ণাঙ্গ বই তার লেখা। ১০০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রের ওপর ত্রিশ খণ্ডের একটি বিশ্বকোষ রচনা করেন। নাম দেন ‘কিতাব আত তাসরিফ’ (চিকিৎসাবিজ্ঞান পদ্ধতি)। জীবনের পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ব্যয় করে তিনি রচনা করেছেন তার চিকিৎসা মহাকাব্য। বিভিন্ন ধরনের রোগ, ক্ষত, চিকিৎসা ও সার্জারির পদ্ধতি নিয়ে গবেষণালব্ধ জ্ঞান এখানে মলাটবন্দি করেছেন তিনি। বিশ্বকোষটির সর্বশেষ খণ্ডে তিনি সার্জারি নিয়ে আলোচনা করেছেন। শল্যচিকিৎসার ক্ষেত্রে এটিই প্রথম যুক্তিসংগত, পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তৃত রচনা। বর্তমান লেখাটি সর্বশেষ খণ্ড তথা সার্জারিকে কেন্দ্র করেই এগিয়েছে।

সার্জারির বিভিন্ন কৌশল, পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে তিনি এ অংশে আলোচনা করেছেন। এ খণ্ডের ভূমিকাটি গুরুত্বপূর্ণ। সমকালীন অন্যান্য চিকিৎসক থেকে তার স্বাতন্ত্র্য বুঝতে ভূমিকাটি পাঠককে সাহায্য করবে। সার্জারিতে তার কতটা দখল ছিল, তাও স্পষ্ট হবে। ভূমিকায় তিনি জানান, তার সময়ে বিস্মৃতির অতলে চাপা থাকা সার্জারির জ্ঞানকে পুনরুদ্ধার করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। হিপোক্রেটিস ও গ্যালেনের মতো প্রাচীন চিকিৎসাবিদদের সার্জারি-সংক্রান্ত রচনা তিনি মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন। তাদের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে খুঁটিয়ে গবেষণা করেছেন। ব্যাপক পঠন ও গবেষণালব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তার সময়ে যারা নিজেদের চিকিৎসক বলে দাবি করতেন, তাদের অধিকাংশই এক্ষেত্রে আকাট মূর্খ ছিলেন। তাদের কোনো পড়াশোনা ছিল না। কেবল অনুমানের ভিত্তিতে তারা চিকিৎসা করতেন। পরিণতিতে রোগীদের সুস্থ করে তোলার পরিবর্তে অধিকতর জটিলতার দিকে ঠেলে দিতেন। একটি অংশে তিনি লিখেন, ‘চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাস বেশ পুরনো। চিকিৎসা শুরুর আগে একজন চিকিৎসককে শারীরবিদ্যায় পারদর্শী হতে হবে। গ্যালেন (গ্রিক চিকিৎসাবিদ) এমনটাই বলেছেন। তাকে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার, আকার এবং প্রকৃতি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ওয়াকিবহাল হতে হবে। এগুলো পরস্পরের সঙ্গে কীভাবে সংযুক্ত এবং কীভাবে তারা বিচ্ছিন্ন হতে পারে সে সম্পর্কে তার যথাযথ জ্ঞান থাকতে হবে। মানুষের শরীরে হাড়, তন্তু ও মাংসপেশির সংখ্যা ও তাদের সংযুক্তি সম্পর্কে একজন চিকিৎসকের স্পষ্ট ধারণা থাকা বাধ্যতামূলক। শিরা ও ধমনি এবং উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের জ্ঞান তার নখদর্পণে থাকতে হবে।’ একপর্যায়ে হিপোক্রেটিসের একটি উক্তি তিনি উদ্ধৃত করেন, ‘নামধারী চিকিৎসক অনেকেই আছেন। কিন্তু প্রকৃত চিকিৎসকের সংখ্যা খুবই কম। সার্জারির ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি সত্য।’ 

জীবনে আল জাহরাভি এমন অনেক ঘটনা দেখেছেন, যেখানে শারীরবিদ্যায় যথাযথ দক্ষতা না থাকার কারণে অনেক হাতুড়ে চিকিৎসক ভুল করে রোগীদের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ভূমিকার একটি অংশে তিনি লিখেন, ‘আমি এমন অনেককে দেখেছি, যারা সার্জারির জ্ঞান আছে বলে দাবি করে এবং তা নিয়ে গর্ব করে। অথচ এ বিষয়ে তাদের না কোনো জ্ঞান আছে, না আছে কোনো অভিজ্ঞতা। একবার এক মূর্খ চিকিৎসক এক নারীর গলার টিউমার কাটতে গিয়ে শিরা কেটে ফেলেছিল। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে সে নারী মারা যান।’ সমসাময়িক চিকিৎসকদের চরম মূর্খতা ও অজ্ঞতার এমন অনেক ঘটনা তার কলমে উঠে এসেছে। তার মতে, একজন প্রকৃত শল্যচিকিৎসকের বুঝতে হবে, কখন অস্ত্রোপচার করতে হবে, আর কখন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ করে তিনি লিখেন, ‘আমি এক ডাক্তারকে দেখেছিলাম, যে এক বয়স্ক রোগীর মূত্রাশয়ে জমা পাথর অপসারণ করার চেষ্টা করেছিল। পাথরটি আকারে বড় ছিল। সে না বুঝে অস্ত্রোপচার করেছিল। আর তা করতে গিয়ে পাথরের সঙ্গে সঙ্গে মূত্রাশয়ের একটি অংশও বের করে নিয়ে এসেছিল। বৃদ্ধ লোকটি তিন দিনের মধ্যেই মারা যান। এর আগে সে বৃদ্ধের চিকিৎসা করার জন্য আমাকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু পাথরের আকার এবং লোকটির বয়স দেখে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে অস্ত্রোপচার করলে পরিণামে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।’ এ ভূমিকায় চিকিৎসাবিদ্যার ছাত্রদের উদ্দেশে উপদেশস্বরূপ তিনি লিখেন, ‘ছেলেরা, তোমাদের জানা প্রয়োজন যে শল্যচিকিৎসার ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করার সময় দুটি দিক মাথায় রাখতে হবে। এক. অস্ত্রোপচার রোগীর স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। দুই. অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি ঝুঁকিপূর্ণ। এ বইয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের বর্ণনাগুলো আমি আলাদাভাবে চিহ্নিত করেছি। এটি তোমাদের এ ধরনের অস্ত্রোপচার সম্পর্কে সতর্ক করবে এবং তা এড়িয়ে যেতে সাহায্য করবে। যদিও মূর্খরা তোমাদের নিন্দা করবে এবং তোমাদের নামে অপবাদ দেবে, এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। সেক্ষেত্রে, তোমরা নিজেদের প্রতি সচেতন ও যত্নবান হবে এবং রোগীদের প্রতি উদারতা ও ধৈর্যশীলতা প্রদর্শন করবে। সর্বোত্কৃষ্ট পথটি বেছে নাও, যা সুস্বাস্থ্য ও ভালো ফলাফলের দিকে নিয়ে যায়। দুরারোগ্য বা অস্ত্রোপচার করলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়তে পারে, এমন রোগগুলোর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার এড়িয়ে যেতে হবে। তোমাদের ধর্মীয় ও দুনিয়াবি জীবনে সংশয়ের সূত্রপাত ঘটাতে পারে, এমন যেকোনো কিছু থেকে নিজেদের বিরত রাখবে। এটি তোমাদের সুনামকে চিরস্থায়ী করবে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে তোমাদের ভাগ্যকে প্রসন্ন করবে।’

আবুল কাসিম আল জাহরাভির সার্জারি-সংক্রান্ত খণ্ডটি আবার তিনটি ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগে আছে অনেকগুলো অধ্যায়। প্রথম ভাগে তিনি শল্যচিকিৎসার বিশেষ একটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। ইংরেজিতে এটি কটারাইজেশন নামে পরিচিত। বাংলায় বলা যেতে পারে দহন। এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে শরীরের রোগাক্রান্ত অংশকে পোড়ানো হয়। রক্তপাত বন্ধ করা, ক্ষত সারানো, সংক্রমণ প্রতিরোধ কিংবা যেকোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রোগীকে আরোগ্য করতে আক্রান্ত স্থান দগ্ধ করা হয়। দহন দুই ভাবে করা যায়। সরাসরি আগুনের মাধ্যমে কিংবা কস্টিক নামক এক প্রকার রাসায়নিক দ্রব্যের সাহায্যে। সরাসরি আগুন দিয়ে দহন করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি হিসেবে লৌহদণ্ড বা অন্য কোনো ধাতুর তৈরি শলাকা ব্যবহার করা হয়। মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের চিকিৎসায় দহন প্রক্রিয়ার গুরুত্ব ধারাবহিকভাবে আল জাহরাভি প্রথম ভাগের বিভিন্ন অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন। শরীরের কোন জায়গায় দহনের ক্ষেত্রে কী আকারের যন্ত্রপাতি লাগবে তার চিত্রও তিনি এঁকে দেখিয়েছেন। প্রথম ভাগের ভূমিকায় তিনি দহন প্রক্রিয়া নিয়ে একটি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন, ‘কটারি (দহন প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি) ব্যবহারের দীর্ঘ প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন না থাকলে কারো দহনের চেষ্টা করা উচিত নয়। মানুষের বিভিন্ন দৈহিক প্রকৃতি নিয়ে তাদের পূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে এবং রোগের কারণ, উপসর্গ ও মেয়াদ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।’ তার মতে, আগুনের মাধ্যমে দগ্ধ করা কস্টিকের সাহায্যে দগ্ধ করার চেয়ে উত্তম। তিনি লিখেন, ‘আগুনের মাধ্যমে দগ্ধ করলে, ঠিক যে অংশে পোড়াতে হবে, তার পার্শ্ববর্তী অংশে তা ন্যূনতম কোনো প্রভাব ফেলে না। কিন্তু কস্টিকের সাহায্যে দগ্ধ করলে পোড়া অংশ থেকে বহুদূর পর্যন্ত এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া পোড়ানো অংশে এ রাসায়নিক দ্রব্য নতুন অনেক দুরারোগ্য ও মারাত্মক রোগের উদ্ভব ঘটাতে পারে।’ দহনের উপযুক্ত সময় নিয়েও তিনি আলোচনা করেছেন। তিনি লিখেন, ‘ছেলেরা, তোমরা এটাও জেনে রাখো যে প্রাচীন চিকিৎসকরা বসন্তকালকে দহন প্রক্রিয়ার জন্য সর্বোত্কৃষ্ট সময় বলে রায় দিয়েছেন। আমার মতে, সবসময়ই দহন করা যায়।’ দহন প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি আরো লিখেন, ‘হাতুড়ে ও অজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি ধারণা আছে যে দহনের মাধ্যমে যেসব রোগ আরোগ্য করা হয়, তা আর কখনো ফিরে আসে না। ছেলেরা, তোমরা এ ধারণায় আটকে থেকো না। তারা যা ভাবে, বিষয়টি তেমন নয়। দহন ওষুধের মতোই। যা রোগ সারিয়ে তোলার পাশাপাশি নতুন কিছু শারীরিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। তবে সাফল্য, শক্তি এবং ক্ষমতার দিক দিয়ে তা ওষুধের চেয়ে ভালো কাজ করে।’ 

প্রথম ভাগে মোট ছাপ্পান্নটি অধ্যায় আছে। এসব অধ্যায়ে তিনি পর্যায়ক্রমে মাথাব্যথা, কানের রোগ, বেঁকে যাওয়া মুখ, বিভিন্ন অঙ্গের বিকৃতি, দুর্বলতা ও উদ্যমহীনতা, পক্ষাঘাত, মৃগীরোগ, বিষণ্নতা, চোখের বিভিন্ন রোগ, নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ, ঠোঁটকাটা রোগ, মুখগহ্বরে সৃষ্ট ক্ষত, দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা, টিউমার, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, ফুসফুসের পীড়া, পাকস্থলীর সমস্যা, যকৃতের রোগ, পিলে রোগ, পায়ের বিভিন্ন সমস্যা, ডায়রিয়া, অর্শ্বরোগ, ফিস্টুলা, কিডনি, মূত্রাশয় ও জরায়ুর রোগ, স্থানচ্যুত কটিদেশ, বাত ব্যথা, পিঠে ব্যথা, কুঁজ অপসারণ, গাঁটে ব্যথা, হার্নিয়া, কালশিটে, গোদরোগ, চলত্শক্তিহীনতা, কুষ্ঠরোগ, ক্যান্সার, গ্যাংগ্রিন, ব্রণ ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেছেন। তার গবেষণা ও অভিজ্ঞতায় তিনি দেখেছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব রোগ দহনের (কটারাইজেশন) মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব।

দ্বিতীয় ভাগে তিনি এমন সব রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছেন, যেগুলো দহনের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। এ ভাগের ভূমিকায় তিনি লিখেন, ‘ছেলেরা, এ ভাগে যে চিকিৎসা পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে, তা প্রথম ভাগে বর্ণিত দহন প্রক্রিয়ার তুলনায় অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এসব ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক থাকতে হবে। এ ধরনের অস্ত্রোপচারে প্রায় রক্তপাত ঘটে। যার ওপর মানুষের বেঁচে থাকা নির্ভর করে। এসব ক্ষেত্রে রক্তনালি উন্মুক্ত করা, টিউমার কাটা, ফোড়া বিদীর্ণ করা, ক্ষতের চিকিৎসা করার সময় অনেক অনিশ্চয়তা ও ভয় থাকে। অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে।’ দ্বিতীয় ভাগে মোট সাতানব্বইটি অধ্যায় আছে। এ ভাগে তিনি নবজাতকের ফোলা মাথা, মাথার পেছনের ধমনি কর্তন, চোখ, কান, নাক, গলা, দাঁত ও ঠোঁটের বিভিন্ন সমস্যা, মুখগহ্বরের বিভিন্ন জটিলতা, টিউমার অপসারণ, পুরুষদের স্ফীত স্তন, পেটের সমস্যা, ক্যান্সারের চিকিৎসা, নবজাতকের মূত্রাশয়ে সমস্যা, খতনা, মূত্রনালির বিভিন্ন রোগ, শরীরের বিভিন্ন স্থানে জমা পাথর অপসারণ, হার্নিয়া, খোজাকরণ, নপুংসকতা, নারীদের জননাঙ্গের বিবিধ সমস্যা, স্বাভাবিকভাবে শিশুকে ভূমিষ্ঠ করতে না পারলে করণীয়, মৃত ভ্রুণ বের করা, অর্শ্বরোগ, ফিস্টুলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়া বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। 

তৃতীয় ভাগে তিনি হাড় সংস্থাপন প্রক্রিয়া নিয়ে লিখেছেন। এ অংশের ভূমিকায় তিনি লিখেন, ‘ছেলেরা, তোমাদের জানা উচিত, অজ্ঞ ও হাতুড়ে চিকিৎসক, যারা প্রাচীন চিকিৎসাবিদদের লিখিত বইয়ের একটি পাতাও উল্টিয়ে দেখেনি এবং এ-সংক্রান্ত একটি লেখাও পড়েনি, তারা হাড় সংস্থাপনবিদ্যায় নিজেদের ঔদ্ধত্য জাহির করতে চায়। সে কারণে আমাদের সময়ে বিজ্ঞানের এ শাখাটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমি এক্ষেত্রে দক্ষ কাউকে দেখিনি। এ বিষয়ে আমার যতটুকু দক্ষতা আছে, তা আমি প্রাচীন চিকিৎসাবিদদের লেখা বইগুলো দীর্ঘ সময় পড়া এবং সেখান থেকে জ্ঞানটুকু বের করে আনার জন্য আমার যে তৃষ্ণা, তার মাধ্যমে অর্জন করেছি। তারপর আমার সারা জীবন আমি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি এবং সে আলোকে চিকিৎসা করেছি। এ বিষয়ে আমার অর্জিত সব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আমি এ বইয়ে বর্ণনা করেছি। আমি এটিকে তোমাদের জন্য সহজবোধ্য করেছি এবং বাগ্বাহুল্য থেকে বিরত থেকেছি। এটিকে সংক্ষিপ্ত করেছি এবং প্রতিটি অংশ সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছি। তোমাদের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক যন্ত্রপাতির ছবি এঁকেছি, যা বর্ণনার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে, যেমনটা আমি আগের দুটো ভাগে করেছি। আল্লাহ ছাড়া আর কোনো শক্তি নেই।’

এ ভাগে মোট পঁয়ত্রিশটি অধ্যায় আছে। এসব অধ্যায়ে মানুষের মাথার খুলি থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত শরীরের যাবতীয় হাড় ভাঙা, ফাটল, চিড় ধরা ইত্যাদি সমস্যায় শল্যচিকিৎসার পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে।   

নিজাম আশ শামস: লেখক ও অনুবাদক