পিরিয়ড নিয়ে এখনো অনেক ভুল ধারণা ও নানা কুসংস্কার প্রচলিত। পিরিয়ড নিয়ে সঠিক তথ্য এখনো সবখানে সবসময় পাওয়া যায় না। অনেকেই পিরিয়ড নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে চায় না, নিজেরাই ধারণা করে নেন কোনটি ঠিক আর কোনটি ভুল। পৃথিবী যত এগিয়ে যাক না কেন, পিরিয়ডের বেলায় এ ভ্রান্ত ধারণাগুলো যেন আগের মতোই আছে। মেয়েদের পিরিয়ডের সময় কতক্ষণ পর পর স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলানো উচিত তা নিয়েও নানা ধারণা প্রচলিত। অনেকের ধারণা, এটি নির্ভর করে মেয়েদের কোনো গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যা আছে কিনা তার ওপর। আবার অনেকে মনে করেন দীর্ঘ সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করলে জরায়ুতে সমস্যা হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলছেন, এসব ধারণার পেছনে আদৌ কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়নি। নেই কোনো প্রমাণও। তবে কিছু স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্র্যান্ড দাবি করে, ৪-৫ ঘণ্টা পর পর স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবর্তন করা স্বাস্থ্যসম্মত। তবে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, মেয়েদের দিনের অর্ধেক সময় ঘরের বাইরে কাটাতে হয়। তাদের স্কুল-কলেজে যেতে হয়। অফিসে, ফিল্ড ওয়ার্কে বা লম্বা সময়ের জন্য ভ্রমণে থাকতে হয় অনেককে। এছাড়া দেশে মেয়েদের জন্য পাবলিক টয়লেটের খুব ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই বেশির ভাগ সময়ই ৪-৫ ঘণ্টা পর পর ন্যাপকিন বদলানো সম্ভব হয় না, ব্যাপারটা সহজও না। এতে দেখা যায়, টানা ১০-১২ ঘণ্টা একটি স্যানিটারি ন্যাপকিনই ব্যবহার করতে হয়। এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক জানান, একজন কত ঘণ্টা পর স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলাবেন সেটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে তার পিরিয়ডের ফ্লোয়ের ওপর। কারো প্রথম কয়েক দিন অনেক ফ্লো থাকে, আবার কারো সাধারণ ফ্লো থাকে। অনেক হেভি ফ্লোয়ে দিনে চার-পাঁচটি ন্যাপকিনও লেগে যেতে পারে, আবার রেগুলার ফ্লোয়ে সাধারণত দু-তিন ন্যাপকিনেও চলে যায়। বদলানোর বিষয়টা ন্যাপকিনের শোষণ ক্ষমতার উপরেও নির্ভর করে। ন্যাপকিনের ভালো শোষণ ক্ষমতা থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে তা বদলানোর দরকার পড়ে না। মেয়েদের কোনো ধরনের গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যার সঙ্গে বেশি সময় ধরে ন্যাপকিন ব্যবহারের কোনো সম্পর্ক নেই। কিংবা দীর্ঘ সময় পরে থাকলে ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন হতে পারে বলে যে ধারণা প্রচলিত, তারও কোনো ভিত্তি নেই। সম্প্রতি স্যানিটারি ন্যাপকিনের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড সেনোরা নতুন ওয়েটলক টেকনোলজির সঙ্গে নতুন প্যাকে বাজারে এসেছে। এখন এটি আরো উন্নত, আরো অ্যাডভান্সড টেকনোলজিতে, যেটি খুব দ্রুত তরল শোষণ করতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লাটফর্মে সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সাররা এ প্রডাক্টের রিভিউ দিয়েছেন। একই সঙ্গে এর ওয়েটলক টেকনোলজি পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন। এছাড়া এখানে বলা হয়েছে, সেনোরা কনফিডেন্স ১২ ঘণ্টার নন-স্টপ প্রটেকশন দেয়। যেহেতু এটি দ্রুত শোষণক্ষম, এর অ্যাডভান্সড ওয়েটলক টেকনোলজি আছে, তাই এটি সহজেই ১২ ঘণ্টার প্রটেকশন নিশ্চিত করতে পারে। সাধারণত নারীদের পিরিয়ড সাইকেলে ৮০ মিলিলিটার পর্যন্ত রক্তক্ষরণ হয়, যা সেনোরা কনফিডেন্সের একটি ন্যাপকিন শোষণ করার ক্ষমতা রাখে। তাই একটি সেনোরা কনফিডেন্স স্যানিটারি ন্যাপকিন সহজেই ১২ ঘণ্টার সুরক্ষা দিতে পারে, এতে স্বাস্থ্যের কোনো ঝুঁকিও নেই। ন্যাপকিন বদলানোর বিষয় নিয়ে কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। এদের মধ্যে একজন দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক জারিয়া। তিনি বলেন, আমি নিজের সুবিধার কথা চিন্তা করেই ন্যাপকিন বদলাই। যখনই ভেজাভাব চলে আসে, লিকেজ হয় বা অস্বস্তি অনুভূত হয়, তখন ন্যাপকিন বদলিয়ে ফেলি। আবার রিপোর্ট করার জন্য প্রায়ই বাইরে থাকতে হয়, তখন বারবার ন্যাপকিন বদলানো সম্ভব হয় না। প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত রিয়া জানান, ন্যাপকিন কোয়ালিটি ও শোষণ ক্ষমতা ভালো হলে এবং ড্রাইনেস নিশ্চিত করলে দেখা যায় দিনে দুবার ন্যাপকিন পরিবর্তন করলেই হয়ে যায়। গৃহিনী সিনথিয়া জানান, লম্বা জার্নিতে থাকা অবস্থায় সুযোগ না থাকলে দীর্ঘ সময়ের জন্য ন্যাপকিন পরে থাকতে হয়, যখনই সুযোগ পাই তখনই ন্যাপকিন বদলে ফেলি। এতে আসলে আমার তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। অর্থাত্, একটি ন্যাপকিন যদি ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত প্রটেকশন দিতে পারে, লিক না করে, ভেজাভাব সৃষ্টি না করে তাহলে সেটি দীর্ঘ সময় পরে থাকতে ব্যবহারকারীদের সমস্যা হয় না। বরং বারবার ন্যাপকিন বদলের ঝামেলার হাত থেকে রক্ষা পান তারা।
পিরিয়ড নিয়ে এখনো অনেক কথা বলা হয় কেবল ধারণা থেকে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নির্ভরযোগ্য মতামত সবসময় সবখানে পাওয়া যায় না। তাই ব্র্যান্ডগুলো পিরিয়ডের এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সামনে তুলে ধরতে চায়, যাতে মানুষ সঠিক তথ্যটা জানতে পারে।
