সেমিনারে ডিসিসিআই সভাপতি

সুদহার আরো বাড়লে ঋণপ্রবাহ কমবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়তে থাকলে মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কমবে। তবে এভাবে সুদহার বাড়লে ঋণপ্রবাহও কমে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ। গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে সংস্থাটির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্বিবার্ষিক পর্যালোচনা: প্রেক্ষিত বেসরকারি খাত শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক . খান আহমেদ সৈয়দ মুরশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেপলমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক . আবু ইউসুফ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (গবেষণা) . মো. সেলিম আল মামুন ওই সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

আশরাফ আহমেদ উল্লেখ করেন, উচ্চ সুদহার, উচ্চ বিনিময় হার, ব্যবসায়িক মূলধনের খরচ বৃদ্ধির কারণে সিএমএসএমই খাতে প্রকৃত ঋণপ্রবাহের কার্যকর হার সংকুচিত করছে, তার পরও দেশের অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ করে সিএমএসএমই খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। মূল্যস্ফীতি সহনীয় হলে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি নমনীয় করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, ‘কর আহরণের হার বৃদ্ধি পেলে সরকারের গৃহীত ঋণের সুদ পরিশোধের সক্ষমতাও বাড়বে। ঢাকা চেম্বার সভাপতি উল্লেখ করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থার উন্নয়ন, পণ্যের পচন হ্রাসে স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বাড়ানো, লজিস্টিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং আধুনিক বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের জোরারোপ করেন। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আস্থার পরিবেশের উন্নয়ন হলে দেশে স্থানীয় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্প্রসারণ হবে। এছাড়া নিরবচ্ছিন্নভাবে পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে রফতানি অব্যাহত রাখার পরামর্শ প্রদান করেন ডিসিসিআই সভাপতি, যার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার আহরণ বাড়বে। সেই সঙ্গে তৈরি পোশাকের পর ইলেকট্রনিকস সেমিকন্ডাক্টর খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।   

ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, ‘দেশের এসএমই খাতে ঋণের সংকট রয়েছে। খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো দরকার। আবার ফরেন ট্রেড ক্রেডিটের পরিমাণও কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন বড় আকারে হবে না। টাকার বড় বড় দরপতনের পরিবর্তে ছোট ছোট দরপতন হবে, এটা একটি স্বস্তির বিষয়। রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য আমাদের অনেক পথ খোলা রয়েছে। দেশের ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন ঋণ ফেরত দেয়ার সক্ষমতা বাড়াতে ট্যাক্স রেভিনিউ বাড়াতে হবে। দেশের ৫০টি ব্যাংক ভালো থাকলে ১০টির অবস্থা তুলনামূলক খারাপ। এগুলো রিকোভারি করতে হবে, আমানতকারীর আমানতের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

আশরাফ আহমেদ আরো বলেন, ‘যখন কোনো ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন ছোট ছোট ঋণগ্রহণ ক্ষতিগ্রস্ত হন। বড় বড় গ্রাহক চাইলে অন্য ব্যাংকে যেতে পারেন, ছোটরা সেটা পারেন না। আবার তারল্য সংকটের মতো কোনো সংকটে পড়লে ছোটদের ঋণেই সুদহার বাড়ানো হয়। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ চাই।

. খান আহমেদ সৈয়দ মুরশিদ বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক বহির্ভূত অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তাই স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা বাড়ানোর মাধ্যমে বেসরকারি খাতের আস্থা বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর ওপর নজর দিলেই হবে না, সুশাসন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্বাস্থ্য শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়ার সময় এসেছে। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা, নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষা কার্যক্রমের সংস্কারের ওপর তিনি জোরারোপ করেন। বিশেষ করে শিল্প-কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে জ্বালানি মূল্য নির্ধারণে নীতিমালা প্রণয়ন বাস্তবায়নের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। 

. আবু ইউসুফ বলেন, ‘কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নে খাতভিত্তিক পরিসংখ্যানের কোনো বিকল্প নেই, যেখানে আমাদের ঘাটতি রয়েছে এবং সময় এসেছে বিশেষ করে অর্থনীতিভিত্তিক পরিসংখ্যানগুলোর স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের। তিনি উল্লেখ করেন, চামড়া শিল্পে শুধু কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা সম্ভব হলে খাত থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানি সম্ভব। তিনি আরো বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করছি, শুল্ক হ্রাস করা হলেও বাজারে পণ্যের মূল্য হ্রাসে তেমন প্রভাব পড়ছে না, এক্ষেত্রে মুদ্রানীতি, বাজেট এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর তিনি জোরারোপ করেন। সেই সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখাই অর্থনীতির জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।  

. মো. সেলিম আল মামুন বলেন, ‘মুদ্রানীতি বিনিময় হার পণ্যের সাপ্লাই চেইনে অস্থিতিশীলতা এবং সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অপ্রত্যাশিত বন্যা আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। চলমান সংস্কার কার্যক্রমের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ হলো আর্থিক খাতের সংস্কার বাস্তবায়ন, যেখানে এতে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের নিম্ন আয়ের মানুষকে মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে রেহাই দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে, মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে আবার টাকার প্রবাহ বাড়বে এবং বেসরকারি খাত সুফল পাবে। স্বল্প সময়ের জন্য বেসরকারি খাতকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা চেম্বারে ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরাসহ সরকারি-বেসরকারি খাতের আমন্ত্রিত অতিথিরা সময় উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন