ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে পোশাক শিল্প

অস্থিরতায়ও ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করেনি আন্তর্জাতিক ক্রেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা তৈরি হয়। আন্দোলন চলাকালেও বেশকিছু প্রতিন্ধকতার মুখে পড়ে খাত। ফলে আশঙ্কা দেখা দেয় বাংলাদেশ থেকে ক্রয়াদেশ অন্য কোনো দেশে সরিয়ে নিতে পারে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা। তবে অস্থিরতায়ও ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করেনি আন্তর্জাতিক ক্রেতারা। ওই সময়ে কোনো ব্র্যান্ড বা কোম্পানি জরিমানাও করেনি কারখানা মালিকদের। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রিসোর্স সেন্টারের (বিএইচআরআরসি) চলতি সেপ্টেম্বরেই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিএইচআরআরসি আন্তর্জাতিক ২০ ক্রেতা কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। এসব ক্রেতা কোম্পানির মধ্যে ক্রয়াদেশ স্থানান্তরের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ১২টি কোম্পানি। স্থানান্তরসংক্রান্ত কোনো তথ্য দেয়নি একটি কোম্পানি (গেপ) বাকি সাতটি ব্র্যান্ড বা কোম্পানি ওই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।

প্রতিবেদনে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের উদ্ধৃতিতে বলা হয়, আন্দোলনের সময় অন্তত সাড়ে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে খাতে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, দেরিতে পণ্য ডেলিভারি, পরিবহন খরচ এবং ঝুঁকি বৃদ্ধি, সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন, অতিরিক্ত সময় ধরে গুদামজাত। পণ্য সরবরাহের সময় বেড়ে যাওয়ায় ক্রয়াদেশ বাতিলের ঝুঁকিতে পড়েন কারখানা মালিকরা। সেই ঝুঁকি এড়াতে শ্রমিকরা বাড়তি কাজ করেন এবং তাদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে আলাদা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা পরিবহনের ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার মজুরির দায় মেটানোও ছিল মালিকদের জন্য চ্যালেঞ্জের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শীর্ষ ১৫ আন্তর্জাতিক ক্রেতার পাশাপাশি পাঁচটি স্ট্র্যাটেজিক কোম্পানির কাছে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওই প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে ২০টি ব্র্যান্ডের সঙ্গেও যোগাযোগ করে প্রতিষ্ঠানটি। তার মধ্যে ১১টি ব্র্যান্ড দুটি কোম্পানি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে।যোগাযোগ করা ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে অ্যাডিডাস, অ্যাসডা, সিঅ্যান্ডএ, এইচঅ্যান্ডএম, ইন্ডিটেক্স, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, নেক্সট, পুমা, পিভিএইচ করপোরেশন, টেস্কো, প্রাইমার্ক এবং দুটি কোম্পানি হচ্ছে ওয়ালমার্ট গেপ। আর সাতটি ব্র্যান্ড বা কোম্পানি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এর মধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠান সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছে এবং বিএইচআরআরসিকে জানিয়েছে অস্থিরতার সময়ে বাংলাদেশে থেকে ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করেনি তারা। ওই সময়ে কোনো ব্র্যান্ড বা কোম্পানি জরিমানাও করেনি কারখানা মালিকদের। আর একটি প্রতিষ্ঠান সব প্রশ্নের জবাব দিলেও স্থানান্তর সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেয়নি।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান বিএইচআরআরসিকে জানিয়েছিলেন, পণ্য সরবরাহে দেরি হওয়ার কারণে বেশকিছু ব্র্যান্ড মূল্য ছাড় দাবি করেছে, যা মিটিয়েছেন উৎপাদকরা। যার পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি টাকা। আবার সরবরাহের সময় ঠিক রাখার জন্য বাড়তি পরিবহন খরচ, জরুরিভাবে পণ্য পাঠানোর জন্য উচ্চ বিমান ভাড়া গুনতে হচ্ছে উৎপাদকদের। অন্যদিকে কারখানা মালিকরা ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছেন, যাতে পণ্য সরবরাহে দেরির জন্য জরিমানা করা না হয়।

অন্যদিকে, কোটা সংস্কার সরকার পতনের আন্দোলন ঘিরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে হওয়া ক্ষতি পোষাতে সরকারের কাছে এক বছরের জন্যসফট লোন চেয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় জুলাইয়ের শুরুতে। পুলিশ সরকারদলীয় কর্মীদের হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেই আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের এক দফায়। ওই আন্দোলন আগস্টের তারিখে সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সফল হয়।

সরকার পতনের পর নিরাপত্তাহীনতা এবং সরকারের শীর্ষ পদধারী গার্মেন্টস মালিকরা পালিয়ে যান। এতে করে তাদের মালিকানাধীন পোশাক কারখানাগুলোয় অস্থিরতা শুরু হয়। অন্যদিকে শ্রমিকরাও নিজেদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এতে করে পোশাক শিল্পে অস্থিরতা বাড়তে থাকে। দেশজুড়ে আন্দোলনের কারণে জুলাইয়ের ১৫ থেকে আগস্টের তারিখ সরকার পতন পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়। সরকার পতনের পর পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব থেকে সরে গেলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে দেশজুড়ে। পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয় ধীরে ধীরে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন