নতুন বাংলাদেশ গড়তে বিদেশী বন্ধুদের সহযোগিতা চাইলেন ড. ইউনূস

বাসস

নিউইয়র্কে ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজে (বাঁ থেকে) প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথি, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, হাইড্রোকো+ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিন রাজিন ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যুবসমাজের জীবন উৎসর্গ এবং অদম্য নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটেছে। একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে তারা জীবন দিয়েছে। তরুণদের এ স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিদেশী বন্ধুদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

নিউইয়র্ক সময় ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বিদেশী বন্ধুদের উদ্দেশে আরো বলেন, ‘তরুণদের আত্মত্যাগ আমাদের সামনে বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আমরা এই সুযোগ হারাতে চাই না। বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে তরুণরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়। এটি বাস্তবায়নে আপনাদের সবার সমর্থন প্রয়োজন।’

জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপ্রাপ্তির ৫০তম বছর উদযাপন উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে।

সংবর্ধনা আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আরো ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ।

অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলম শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণ অভ্যুত্থানের ঘটনাগুলো নিয়ে লেখা দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। যারা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল আমরা তাদের হতাশ করতে চাই না।’

প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি নতুন নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তার সরকার কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।  

ড. ইউনূস বলেন, ‘যুবসমাজের সামনে কোনো স্বপ্ন ছিল না। স্বৈরাচার তাদের স্বপ্ন ও ভব্যিষৎকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। তাই তারা স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে বুলেটের সামনে দাঁড়াতে পিছপা হয়নি।’

বিদেশী বন্ধুদের উদ্দেশে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণরা যে সাহস ও প্রত্যয় দেখিয়েছে, তা আমাদেরকে অভিভূত করেছে। বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে তারা পঙ্গুত্ব বরণ করতে পিছপা হয়নি। তরুণদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গড়তে আমরা আপনাদের পাশে চাই।   

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশে নিউইয়র্ক সফররত প্রধান উপদেষ্টা গতকাল ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি আরো কয়েকটি বৈঠক ও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ফাঁকে ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠান মঞ্চে তিনি তার দীর্ঘদিনের বন্ধু সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথার ফাঁকে সফরসঙ্গী তিনজনকে পরিচয় করিয়ে দেন। মঙ্গলবার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা তার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের নেপথ্য কারিগর হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। বাকি দুজনের একজন বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথি, অন্যজন হাইড্রোকো+ এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিন রাজিন।

তরুণ নেতারা মঞ্চে গেলে ড. ইউনূস বলেন, ‘তারা যেভাবে কথা বলে, সেভাবে আমি কাউকে কোনোদিন বলতে শুনিনি। নতুন বিশ্ব গড়তে, নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে তারা প্রস্তুত। আপনাদের অনুরোধ করছি তাদের পাশে থাকবেন, যেন তাদের এ স্বপ্ন পূরণ হয়। আমাদের সবারই এ দায়িত্ব নিতে হবে। এ সময় ক্লিনটনের হাত ধরে ইউনূস বলেন, ‘তুমি তো আমাদের সঙ্গে থাকবেই।’

ইউনূস আরো বলেন, ‘তাদের (তরুণ নেতা) দেখতে আর দশটা মানুষের মতোই লাগবে আপনাদের। কিন্তু তাদের কথা শুনলে, তাদের কাজ দেখলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন। তারা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য থেকে পিছপা হয়নি। তাদের বক্তব্য ছিল, মেরে ফেললেও আমরা পথ ছাড়ব না।’

আন্দোলনটা খুব সুশৃঙ্খল ছিল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা হঠাৎ করে হয়েছে এমন কিছু নয়। খুবই গোছানো আন্দোলন। এছাড়া এত বড় আন্দোলন হয়েছে, মানুষ জানত না কে আন্দোলনের লিডার? যার ফলে একজনকে আটক করা যেত না। বলাও যেত না যে একজনকে আটক করলে আন্দোলন শেষ।’

মাহফুজকে দেখিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘তার কথা শুনলে সারা পৃথিবীর যেকোনো তরুণ অনুপ্রাণিত হবে। তারা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করবে। তাদের সফলতার জন্য আপনারা প্রার্থনা করবেন। তাদের জন্য হাততালি হোক।’ এ সময় বিল ক্লিনটনসহ সবাই হাততালি দিয়ে সম্মান জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন