বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ইতিবাচক ও গঠনমূলকই থাকবে —এস জয়শঙ্কর

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ‘ইতিবাচক ও গঠনমূলকই’ থাকবে। এ সম্পর্ক নিয়ে আগে থেকে কিছু ভেবে নেয়া ঠিক হবে না। তেমন ভাবনা কারো ভাবা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ মন্তব্য করেন জয়শঙ্কর।

তিনি বলেন, ‘সম্পর্ক নিয়ে আগাম কোনো ধারণায় উপনীত না হওয়ার অনুরোধ আমি সবাইকে করব। বিষয়টা এমন নয় যে ভারত তার সব প্রতিবেশী দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এভাবে চলেও না। এমনটা হয়ও না। এটা শুধু আমাদের (ভারত) নয়, সবার জন্য সমান সত্য।’

এশিয়াটিক সোসাইটি ও নিউইয়র্কের এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউট গতকাল ‘ইন্ডিয়া, এশিয়া অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেখানে অংশ নেন এস জয়শঙ্কর। জয়শঙ্কর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সেখানেই।

জয়শঙ্করকে একজন বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকাকে ভারত শর্তহীন সাহায্য করেছে। ঋণ দিয়েছে। কিন্তু সেখানকার নতুন পরিবর্তিত সরকার মনে হচ্ছে ভারতবিরোধী। এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দিনের শেষে প্রতিটি প্রতিবেশীই তার নিজস্ব গতিতে নিজস্ব চিন্তাধারায় চলবে। আমরা তাদের বলব না যে তোমাদের প্রবাহ আমাদের পছন্দ অনুযায়ী হোক। তেমন বলা আমাদের ইচ্ছাও নয়। আজকের দুনিয়ায় এটাই সত্য। প্রতিটি দেশই নিজের পছন্দ অনুযায়ী নীতি ঠিক করে। অন্যদের সেইমতো বোঝাপড়া করতে হয়। সেইভাবে এগোতে হয়।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কথা উঠে আসে। জয়শঙ্কর বলেন, ‘অন্যদের থেকে বাংলাদেশের বিষয়টি একটু আলাদা। এক দশক ধরে আমরা ওই দেশে বহু প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সেসব প্রকল্প দুই দেশের পক্ষেই মঙ্গলজনক ও ফলদায়ী। তাতে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। অবকাঠামোরও উন্নতি হয়েছে।’ জয়শঙ্কর এ কথা বলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর। বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো ওই বৈঠককে কার্যকর, ইতিবাচক ও গঠনমূলক হিসেবে বর্ণনা করেছে।

জয়শঙ্কর বলেন, ‘প্রতিটি দেশের নিজস্ব একটা গতি থাকে। পছন্দ থাকে, প্রয়োজন থাকে। নিজস্ব ডায়নামিকস থাকে। কূটনীতিতে তা বুঝতে ও শিখতে হয় এবং সেইমতো সাড়া দিতে হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দিন শেষে পারস্পরিক নির্ভরতা, একে অন্যের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে থাকা, পারস্পরিক উপকারের বাস্তবিকতা আমরা প্রতিবেশীরা সবাই উপলব্ধি করতে পারব। এতেই সবার স্বার্থ নিহিত। বাস্তবিকতাই সম্পর্কের গতি-প্রকৃতি ঠিক করে দেয়। ইতিহাসের শিক্ষা তেমনই।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেন, ‘কয়েক বছর অন্তর আমাদের এ অঞ্চলে কিছু না কিছু ঘটে থাকে। তখন মনে হয় যা-ই ঘটছে, তা অলঙ্ঘনীয়। অথচ দেখা যায়, পরিবর্তন এল। শোধরানোর পালা শুরু হলো। নতুন কিছু ঘটল। এ আলোতেই আমি বর্তমান ঘটনাবলি দেখি। আমি নিশ্চিত, দুই ক্ষেত্রেই (বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা) আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে যাবে ইতিবাচক ও গঠনমূলকভাবে।’

শ্রীলংকা প্রসঙ্গে জয়শঙ্কর জানান, তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের সময় কেউ যখন এগোয়নি, তখন ভারত এগিয়ে গিয়েছিল। সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য করেছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্তু তাদের ওপর কোনো রাজনৈতিক শর্ত চাপাইনি। প্রতিবেশী হিসেবে করেছিলাম। আমরা চাইনি আমাদের কোনো প্রতিবেশী দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাক।’ সে দেশের রাজনীতিতে যা ঘটেছে, তার রাজনৈতিক মোকাবেলা তাদেরই করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন