অভিবাসন না হলে সংকুচিত হবে সিঙ্গাপুরের জনসংখ্যা

বণিক বার্তা ডেস্ক

সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির বড় একটি অংশ অভিবাসীনির্ভর ছবি: রয়টার্স

বছর দশকের মধ্যে সিঙ্গাপুরে জন্মহারকে ছাড়িয়ে যেতে পারে মৃত্যুহার। সেক্ষেত্রে অভিবাসী ছাড়া দেশটির জনসংখ্যা প্রয়োজনীয় স্তরে ধরে রাখা সম্ভব হবে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, জনসংখ্যার পতন দেশটির শ্রমবাজার অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। বদলে যেতে পারে সামাজিক কাঠামো। খবর দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ইন্দ্রানি রাজা সম্প্রতি সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে জনসংখ্যার বর্তমান প্রবণতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘২০৩০-এর দশকের প্রথমার্ধের মধ্যে দেশের জন্মহারকে ছাড়িয়ে যেতে পারে মৃত্যুহার।

বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য হাজেল পোয়ার প্রশ্নের জবাবে তথ্য জানায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। হাজেল পোয়ার প্রশ্ন ছিল, গত এক দশকে সিঙ্গাপুরে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং কোন সালে গিয়ে জন্মহারের চেয়ে মৃত্যুহার বেশি হবে?

জবাবে ইন্দ্রানি রাজা জানান, ২০২৩ সালে সিঙ্গাপুরে ২৪ হাজার ৭২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ২০১৪ সালের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি। ওই বছর মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৬৯১।

জন্মহারের ক্ষেত্রে চিত্রটা বিপরীত। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এক মুখপাত্র জানান, ২০২৩ সালে সিঙ্গাপুরে জন্ম (সিটিজেন বার্থ) হয় ২৮ হাজার ৮৭৭ জনের, যা ২০১৪ সালের চেয়ে ১৩ শতাংশ কম। ২০১৪ সালে জন্মগ্রহণ করে ৩৩ হাজার ১৯৩ জন।

সিটিজেন বার্থ বলতে সেসব শিশুকেই বোঝায়, যাদের মা-বাবার অন্তত একজন সিঙ্গাপুরের নাগরিক। ধরনের নবজাতক সিঙ্গাপুরেরজন্মগত নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হয়।

জনসংখ্যা সংকোচনের সমস্যা নিয়ে এজেন্সি ফর সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পটেনশিয়ালের সমাজবিজ্ঞানের পরিচালক অধ্যাপক জিন ইয়ুং বলেন, ‘কোনো দেশে দীর্ঘদিন ধরে জন্মহারের চেয়ে মৃত্যুহার বেশি থাকলে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো মৃত্যুহার কখন জন্মহারের চেয়ে বেশি হবে? এটা মূলত নির্ভর করে গর্ভধারণের হার কমে যাওয়ার গতির ওপর।

সিঙ্গাপুরে ৩০ বছর ধরে গর্ভধারণের হার কমছে। এর মধ্যে কমতে কমতে ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো গর্ভধারণের হার -এর নিচে নেমে যায়। গত বছর হার ছিল দশমিক ৯৭। যদিও জন্মহার বাড়ানোর জন্য সিঙ্গাপুর সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বেবি বোনাস হিসেবে নগদ অর্থ, মাতৃ পিতৃকালীন ছুটি বাড়িয়ে দেয়া এবং বয়স্ক নারীদের গর্ভধারণসংক্রান্ত চিকিৎসায় সহায়তা করা।

সিঙ্গাপুরে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এরই মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। ২০১০ সালে দেশটির ১০ শতাংশ মানুষের বয়স ছিল ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি। ২০৩০ সালে হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রক্ষেপণ সঠিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, চীন, জাপান ইতালির মতো বেশ কয়েকটি দেশে এরই মধ্যে জন্মহারের চেয়ে মৃত্যুহার বেড়ে গেছে। এর মধ্যে জাপানে টানা ১৫ বছর ধরে জনসংখ্যা কমছে। ২০২৩ সালে দেশটিতে লাখ ৩০ হাজার শিশুর জন্ম হয়। মৃত্যু হয় ১৫ লাখ ৮০ হাজার মানুষের। চীনে জনসংখ্যা কমছে টানা দুই বছর ধরে। ২০২৩ সালে দেশটিতে মৃত্যু হয় কোটি ১১ লাখ মানুষের। জন্ম নেয় ৯০ লাখ ২০ হাজার শিশু। যদিও এসব দেশ নানা উপায়ে জনসংখ্যার হ্রাস ঠেকানোর চেষ্টা করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সিঙ্গাপুরে জনসংখ্যাগত চ্যালেঞ্জ অভিবাসনের হারকে প্রভাবিত করবে। একই সঙ্গে জাতিগত জাতীয় পরিচয় এবং সামাজিক সংহতির ওপর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠতে পারে।

নানয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সোশ্যাল কোহেসন রিসার্চ প্রোগ্রামের প্রধান . লিওং চ্যান-হুং বলেন, ‘সিঙ্গাপুর সরকার জনসংখ্যাগত চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণেই কয়েক দশকে প্রতি বছর সিঙ্গাপুরে সতর্ক বাছাইয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংখ্যক অভিবাসী যুক্ত হয়েছে।

গত বছরে জুন পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের জনসংখ্যা ছিল ৫৯ লাখ ২০ লাখ, যা আগের বছরের ৫৬ লাখ ৪০ হাজারের তুলনায় শতাংশ বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন