বিক্ষোভ করা ৫৭ বাংলাদেশীকে ক্ষমা করল আমিরাত

অধ্যাপক ইউনূসের কৃতজ্ঞতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করা ৫৭ বাংলাদেশীকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান গতকাল তাদের ক্ষমা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশী এসব প্রবাসীকে অবিলম্বে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা এমিরেটস নিউ এজেন্সি (ডব্লিউএএম) এ খবর জানিয়েছে।

ক্ষমা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও। গতকাল দেশের প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি এ তথ্য জানান। 

বাংলাদেশী প্রবাসীদের ক্ষমা করে দেয়ায় ‘গভীর কৃতজ্ঞতা’ জানিয়ে আমিরাতের প্রেসিডেন্টকে একটি বার্তাও পাঠিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এতে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করা ৫৭ বাংলাদেশীকে ক্ষমা করে দেয়ায় আপনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাদের টেলিফোন কথোপকথনের পর এ ক্ষমাশীলতা শুধু আপনার সহানুভূতিশীল নেতৃত্বই তুলে ধরে না, একই সঙ্গে তা আমাদের দুই দেশের ভ্রাতৃত্বের স্থায়ী বন্ধনকে শক্তিশালী করার বার্তাও বহন করে।’

গত ২০ জুলাই দুবাই, শারজাহ ও আজমানের বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করার সময় এসব বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর করে এবং একজনকে দেয়া হয় ১১ বছরের কারাদণ্ড। এরপর বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা সুবিধা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার ঘোষণা দেয় আমিরাত সরকার।

দায়িত্ব গ্রহণের পরই এসব প্রবাসীকে মুক্ত করার বিষয়ে কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গত ১১ আগস্ট জানান, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দণ্ডিত বাংলাদেশীদের মুক্তির বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। পরের দিন (১২ আগস্ট) ৫৭ বাংলাদেশীর মুক্তির জন্য ওলোরা আফরিনকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ সরকার। এছাড়া ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৫৭ বাংলাদেশী শ্রমিককে তারাও আইনি সহায়তা দিচ্ছে। ওই সময় ফ্লাড চেয়ারপারসন ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফাওজিয়া করিম অভিযোগ করেন, ‘৫৭ প্রবাসীকে গ্রেফতারের সময় বাংলাদেশ দূতাবাসের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দুবাইকে জানিয়েছিলেন, এদের সবাই সন্ত্রাসী, স্বাধীনতাবিরোধী, এদের গ্রেফতার করলে আপত্তি নেই। এ কারণে আটক ব্যক্তিরা কোনো আইনি সহায়তা পাননি।’

এর মধ্যে গত ২৮ আগস্ট আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপ হয় অধ্যাপক ইউনূসের। এরই ধারাবাহিকতায় ৫৭ জনের ক্ষমা পাওয়ার বিষয়টি সামনে এল। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট ৫৭ বাংলাদেশী প্রবাসীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।’

বাংলাদেশ সরকারের নিয়োগ করা আইনজীবী ওলোরা আফরিন গতকাল বিকালে বিবিসিকে বলেন, ‘আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই ৫৭ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো যাবে বলে আমরা আশা করছি। তবে দু-একদিন কম-বেশি হতে পারে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন