ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন মোড়

বণিক বার্তা ডেস্ক

রুশ সীমান্তে ইউক্রেনের সামরিক বহর ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে দ্রুতগতিতে ইউক্রেনীয় বাহিনী অনুপ্রবেশের ঘটনা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রায় আড়াই বছর ধরে চলতে থাকা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এটিই কিয়েভ বাহিনীর সবচেয়ে বড় আন্তঃসীমান্ত অভিযান। এতে প্রকাশ পেয়েছে রাশিয়ার দুর্বলতা। স্বাভাবিকভাবেই বিব্রত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ইউক্রেনের এ অভিযান হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিককে কুর্স্ক অঞ্চল থেকে পালাতে বাধ্য করেছে। কারণ রুশ বাহিনী আক্রমণ প্রতিহত করতে হিমশিম খাচ্ছে।

ইউক্রেনের জন্য এ আন্তঃসীমান্ত অভিযানের গুরুত্ব বেশি আরো একটি কারণে। অস্ত্র ও জনবলের অভাবে ভুগতে থাকা ইউক্রেনীয় বাহিনীকে যখন এক হাজার কিলোমিটারের ফ্রন্ট লাইনজুড়ে নিরলস রুশ আক্রমণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তখন এ অভিযান তাদের মনোবল ব্যাপকভাবে চাঙ্গা করবে।

কীভাবে এ অভিযান চালাল ইউক্রেন

কিয়েভের সৈন্যরা ৬ আগস্ট বিভিন্ন দিক থেকে কুর্স্ক অঞ্চলে ঢুকে পড়ে। ইউক্রেনের সঙ্গে এ অঞ্চলের ২৪৫ কিলোমিটার সীমান্ত বরাবর হালকা অস্ত্রে সজ্জিত ছিল রুশ সেনারা। যে কারণে কয়েকটি চেকপয়েন্ট ও রক্ষণ দুর্গকে খুব কম সময়ের মধ্যেই পরাস্ত করে কিয়েভের সেনারা।

ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দিয়েছে রুশ স্বেচ্ছাসেবকদের ছোট ছোট দল। কুর্স্ক অভিযানের ক্ষেত্রে সীমান্তজুড়ে এ রকম যুদ্ধের সম্পূর্ণ বিপরীত রণকৌশল নিয়েছে কিয়েভ। বেশকিছু যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ও কঠোর মানসিকতাসম্পন্ন ইউক্রেনীয় সেনা ব্রিগেডের ইউনিট অভিযানটি চালিয়েছে।

রুশ মিলিটারি ব্লগারদের প্রতিবেদনে এসেছে ইউক্রেনীয় ইউনিটগুলোর কাছে বেশ কয়েকটি সাঁজোয়া যান রয়েছে। ইউনিটগুলোর প্রত্যেকটিই রুশ সীমান্তে প্রবেশ করে রুশ রক্ষণব্যুহগুলোকে পরাস্ত করে দ্রুত কয়েক কিলোমিটার এলাকা পাড়ি দিয়ে ফেলেছে। এতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে পুরো অঞ্চলে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক দি ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার বলেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ অঞ্চলটির ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত অনুপ্রবেশে সক্ষম হয়েছে। অভিযানের বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে, সীমান্ত অঞ্চলে রুশ সৈন্যদের সংখ্যা কম হওয়ায় ইউক্রেনীয় বাহিনী ছোট সাঁজোয়া যানগুলো নিয়ে আক্রমণ চালাতে পেরেছে।

রুশ সামরিক যানগুলোকে ব্যাপক হারে আক্রমণ করার জন্য ড্রোন ব্যবহার করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। সেই সঙ্গে রুশ ড্রোনগুলোকে নিষ্ক্রিয় করতে ও সামরিক যোগাযোগ ব্যাহত করতে বিশেষ ইলেকট্রনিক যন্ত্র স্থাপন করেছে।

রুশ বাহিনী যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে

সীমান্ত পাহারার দায়িত্বে থাকা রুশ সৈন্যরা ইউক্রেনীয় আক্রমণের দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যর্থ হয়েছিল। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলে নিয়োজিত ছিল রুশ সেনাবাহিনীর সিংহভাগ। কুর্স্ক সীমান্ত রক্ষার জন্য অল্পকিছু সৈন্যই অবশিষ্ট ছিল। সীমান্ত বরাবর রুশ ইউনিটগুলো এমন সৈন্যদের নিয়ে গঠিত, যাদের প্রশিক্ষণ খুব বেশি নেই। ইউক্রেনীয় এলিট সেনাদের কাছে তারা অল্প সময়েই হার মানে। এ অবস্থায় এলিট স্পেশাল ফোর্স ইউনিট ও ভাগনার গ্রুপের ভাড়াটে যোদ্ধাদের নিয়ে শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করে কুর্স্ক অঞ্চলে আসতে শুরু করে রুশ বাহিনী। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত সুদজা ও সীমান্তের কাছাকাছি অন্যান্য এলাকা থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে পিছু হটাতে ব্যর্থ হয়েছে।

কী বলল ক্রেমলিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ অনুপ্রবেশকে বড় ধরনের উসকানি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পুতিনের নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ইউক্রেনীয় অভিযানের ফলে মস্কো ইউক্রেনের আরো বড় অংশ দখলের চেষ্টা করবে। এর মধ্যে থাকবে কিয়েভ, ওডেসার কৃষ্ণ সাগর বন্দর ও অন্যান্য প্রধান শহর।

পূর্ব সীমান্তে যখন রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ধুঁকছে ইউক্রেনীয়রা, তখন এ অভিযান রুশ ভূখণ্ড দখল করার ক্ষমতা দেখাল। তবে প্রাথমিক সাফল্য সত্ত্বেও রাশিয়ায় অভিযানে ইউক্রেনের সবচেয়ে শক্তিশালী কিছু ইউনিটে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। এতে দোনেৎস্কে ইউক্রেনীয় বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির সুযোগ নাও থাকতে পারে।

সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের অভিযানের লক্ষ্যগুলো কী এবং কুর্স্ক অভিযানে কতজন সৈন্য রয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

কার্নেগি এনডাওমেন্টের সামরিক বিশ্লেষক মাইকেল কফম্যান বলেছেন, ইউক্রেনের ভাণ্ডারে কী আছে এবং রুশ ফেডারেশন কত দ্রুত এ আঘাত মোকাবেলা করে সংগঠিত হয় তার ওপর অভিযানের অনেক কিছুই নির্ভর করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন