নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের
সেমিফাইনালের মঞ্চ তৈরি। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকাল সাড়ে ৬টায় ত্রিনিদাদে
প্রথম সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান। একই দিন রাত সাড়ে ৮টায়
গায়ানায় দ্বিতীয় সেমিতে লড়বে ইংল্যান্ড ও ভারত।
সুপার এইটে নিজেদের শেষ
ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম বলেছেন,
তারা সেরা ক্রিকেট এখনো খেলেননি! তার মানে, আফগানিস্তানকে সর্বস্ব নিংড়ে দিতে হবে।
যদিও প্রোটিয়াদের জন্য ভয় হলো ইতিহাস। ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি কোনো বিশ্বকাপেই সেমিফাইনালের
গন্ডি কোনোদিন পেরোতে পারেনি তারা। তাদের এই রেকর্ডই হয়তো খানিকটা আশা দেখাবে আফগানদের।
এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত
পাঁচটি জয় পেয়েছে আফগানিস্তান, যার মধ্যে চারটিই এসেছে আগে ব্যাটিং করে। এর মধ্যে প্রতিপক্ষই
তিনবার তাদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে। তারা শুধু বাংলাদেশের বিপক্ষে সুপার এইটের শেষ
ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়েছে। অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে শেষ পর্যন্ত তারাই ৮ রানের জয়ে
সেমিতে নাম লেখায়।
আবার পরে ব্যাটিং করা
দুটি ম্যাচেই হেরেছে আফগানিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টস জিতে বোলিং নেয় আফগানরা
এবং ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে টস হেরে বোলিং পায় তারা। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে যে ম্যাচটিতে
তারা আগে ফিল্ডিং করেও জিতেছে, সেটির ভেন্যু এই ত্রিনিদাদ। এরপরও তারা আগেই ব্যাটিং
করতে চাইবে। তাই ত্রিনিদাদে কাল টসটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
ভারতের পর দ্বিতীয় দল
হিসেবে এই বিশ্বকাপে অপরাজিত দক্ষিণ আফ্রিকা। তারা টানা সাত ম্যাচে জিতেছে। ভারত ছয়টি
জিতেছে, একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়।
প্রোটিয়ারা চার ম্যাচে
আগে ব্যাট করে ও তিন ম্যাচে রান তাড়া করে জিতেছে। মার্করাম টস জিতলে আফগানদের রান তাড়া
করার আহ্বান জানালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
আফগানদের আগে ব্যাটিং
দিলে বিপদ হতে পারে, সেটি নিশ্চয়ই জানা আছে প্রোটিয়াদের। কেননা রহমানউল্লাহ গুরবাজ
ও ইব্রাহিদ জাদরানের ওপনিং জুটি এই বিশ্বকাপের সেরা। তারা জুটি বেধে সর্বোচ্চ ৪৪২ রান
করেছেন প্রায় ৭৪ গড়ে। দ্বিতীয় সেরা ওপেনিং জুটি ইংল্যান্ডের জস বাটলার ও ফিল সল্ট ২৮৬
রান করেছেন ৫৭.২০ গড়ে।
রান চার্টেও গুরবাজ (২৮১)
শীর্ষে, জাদরান (২২৯) তিনে। বিদায় নেয়া অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড ২৫৫ রান করে দুইয়ে
আছেন। সেমিতে টিকে থাকা দলগুলোর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি নন ১৯৯ রান, ভারতের
রোহিত শর্মা ১৯১ রান, ইংল্যান্ডের জস বাটলার ১৯১ রান ও একই দেশের ফিল সল্ট ১৮৩ রান
করেছেন।
গুরবাজ ও জাদরান জুটির
কথা ভেবে হলেও আফগানিস্তানকে আগে ব্যাটিং করার সুযোগ দেবে না হয়তো প্রোটিয়ারা। কেননা
এই জুটি অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশকে হারানোর নায়ক। সর্বশেষ অজিদের বিপক্ষে ১৫.৫ ওভার
ব্যাট করে ১১৮ রান ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০.৪ ওভার ব্যাট করে ৫৯ রান তুলে দলের জয়ের
ভিত গড়ে দেন দুজন।
আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সে
খেলা গুরবাজ চলতি বিশ্বকাপে মারমুখী ব্যাটিং করেছেন, অপরপ্রান্তে তার পার্টনার জাদরান
তুলনামূলক ধৈর্যশীল ইনিংস খেলে উইকেট ধরে রাখেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে উইকেট কিপিং করার
সময় হাঁটুতে চোট পান গুরবাজ। তিনি যদি সেরে না ওঠেন, তবে সেমিফাইনালে তাকে পাবে না
আফগানিস্তান। আর যদি ফিট হয়ে তিনি খেলেন, তাহলে তাকে থামানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে
প্রোটিয়া বোলারদের।
দুই দলই ইতিহাস লিখতে
মরিয়া। প্রোটিয়ারা বিশ্বের অন্যতম সেরা দল হয়েও কখনো বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। ওয়ানডেতে
পাঁচবাব ও টি-টোয়েন্টিতে দুবার সেমিফাইনাল খেলেও কখনো ফাইনালে ওঠা হয়নি তাদের। এবার
মার্করামের হাত ধরে নতুন ইতিহাস লিখতে পারবে কি প্রোটিয়ারা? এই ২০১৪ সালে মার্করামের
নেতৃত্বে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।