ঢাকায় কোরবানির কাঁচা চামড়ার পাইকারি বাজার

গরুর চামড়ার দাম দাম ২০০-৯০০ টাকা, ছাগলের ১০

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

লবণযুক্ত ছাগলের চামড়ার দাম সরকার এবার গত বছরের চেয়ে ২ টাকা বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুট ২০-২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। একটি ছাগলের যদি ৫-৬ বর্গফুট চামড়া হয়, লবণ দেয়ার পর সেটির দাম পাওয়ার কথা ১০০-১৫০ টাকা। যদিও এবার পশুটির চামড়া বিক্রি করে মিলেছে কেবল ১০ টাকা। কেউ কেউ আবার আশানুরূপ দাম না পেয়ে বিনা পয়সায় তা রেখে যান বলে জানা গেছে। কোরবানির গরুর চামড়াও আকার ভেদে বিক্রি হয়েছে ২০০-৯০০ টাকা পর্যন্ত। ঢাকায় কাঁচা চামড়ার প্রধান বাজার পুরান ঢাকার পোস্তায় ক্রেতা- বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ট্যানারি স্থানান্তর, পুঁজি কমে যাওয়া, জায়গাস্বল্পতাসহ নানা সংকটে চামড়ার ঐতিহ্যবাহী বাজারের জৌলুস হারিয়েছে ঢাকার পোস্তা। চামড়া নিয়ে একসময় ওই এলাকায় ২৯৭ প্রতিষ্ঠানের কর্মযজ্ঞ থাকলেও এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ৪২টিতে। লক্ষ্যমাত্রাও কমেছে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের। এখানকার আড়তদাররা যদিও দাবি করছেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি চামড়া সংগ্রহ করেছেন তারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সাধারণ সম্পাদক মো. টিপু সুলতান বলেন, ‘এবার আমরা ১ লাখ ২০ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করেছি। প্রতিটি চামড়ার দাম গড়ে ৮০০ টাকা পড়েছে।

ঈদে পশু কোরবানির পর পরই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে শুরু হয় কাঁচা চামড়ার বেচাকেনা। গত কয়েক বছর এর চাহিদা ও দাম কমার কারণে মজুরিসহ অন্যান্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রতি পিস চামড়া সংরক্ষণের ব্যয় ৩০০ টাকার ওপরে পড়ে যাবে। তাই কাঁচা চামড়ায় বেশি দাম দেয়া যায়নি।' সর্বশেষ ২০১৩ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার ভালো দাম পাওয়া গেছে। সেবার গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ছিল ৮৫-৯০ টাকা। এর পর থেকে বিভিন্ন কারণে ধারাবাহিকভাবে দাম কমতে থাকে। ২০১৯ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে বড় ধরনের ধস নামে। ন্যূনতম দাম না পেয়ে সে বছর কোথাও কোথাও চামড়া নদীতে কিংবা সড়কে ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটে। কেউ কেউ মাটিতেও পুঁতে ফেলেন। এতে প্রায় ২৪২ কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হয়। পরের বছর সরকার এ বিষয়ে তৎপরতা বাড়ায়। তবে দাম কমে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম নির্ধারণ হয় ৩৫-৪০ টাকা। গত তিন বছর সরকার নির্ধারিত দাম কিছুটা বাড়লেও কোরবানির চামড়া বিক্রি হয়েছে সেই দরের চেয়ে কমেই। গত বছরও পুরান ঢাকার পোস্তায় মাঝারি আকারের গরুর একেকটি চামড়া বিক্রি হয়েছে ৭০০-৮৫০ টাকায়। ঢাকার বাইরে দাম ছিল আরো কম । যেমন সিলেটে গরু যতই বড় হোক না কেন, চামড়া বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায়। বগুড়ার শেরপুরে মাঝারি আকারের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৪০০-৫০০ টাকায়।

এ বছর থেকে লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু এর প্রভাব কাঁচা চামড়া বিক্রিতে পড়েনি বলে অভিযোগ করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

এ বছর ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, গত বছর যা ছিল ৫০-৫৫ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় বর্গফুটপ্রতি চামড়ার দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ টাকা। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৫-৪৮ টাকা। এক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হয়েছে সর্বোচ্চ ৭ টাকা। এছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ২০-২৫ ও বকরির চামড়া ১৮- ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ঢাকায় মাঝারি আকারের ২৫ বর্গফুটের লবণযুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ৩৭৫ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এ হিসাব থেকে লবণ, মজুরি ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২৫০ টাকা বাদ দিলে ওই চামড়ার আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ১২৫ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা। অথচ ঈদের দিন সোমবার বিকালে পোস্তায় গরুর কাঁচা চামড়া প্রতি পিস সর্বোচ্চ ৮০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তুলনামূলক আকারে ছোট গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০০-৪০০ টাকায়। এছাড়া খাসির কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে প্রতি পিস ১০ টাকায়।

পোস্তা এলাকার আড়তদার মো. শাহাদত হোসেন বলেন, ‘এবার শ্রমিকের হিসাবেই আমরা দাম দিয়েছি।'

বিএইচএসএমএর সাধারণ সম্পাদক মো. টিপু সুলতান অবশ্য দাবি করছেন, সরকার নির্ধারিত দামেই আড়তদাররা চামড়া কিনেছেন এবার । বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, 'সরকার লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমরা কিনেছি লবণবিহীন চামড়া। একটা চামড়া লোড-আনলোড ও লবণ লাগানোসহ পুরো প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩০০ টাকার মতো লাগে। আমরা সে টাকা বাদ দিয়ে চামড়া কিনেছি। সরকারি

এদিকে কয়েক দিন পরই লবণজাত চামড়া প্রক্রিয়া শুরু হবে সাভারের হেমায়েতপুরের শিল্পনগরীতে। অনেক প্রতিষ্ঠানই কমপ্লায়েন্সে এগোচ্ছে বলে পর্যবেক্ষণ শিল্প মন্ত্রণালয়ের। এ বিষয়ে শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা জানান, আগের চেয়ে মান অনেকটাই ভালো অবস্থানে রয়েছে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি)। এবার বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর সিইটিপি পুরোপুরি প্রস্তুত ও কার্যকর করা হয়েছে। এর সব মডিউলকে ওভারহোলিং তথা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মেরামতপূর্বক ঢেলে সাজানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দিয়ে তরল বর্জ্য পরিশোধন করা হয়েছে। তাছাড়া বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা চালু রয়েছে। প্রাথমিক পরিশোধন ছাড়া যাতে কোনো ট্যানারির বর্জ্য সিইটিপিতে আসতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করা হয়েছে । নতুন আরেকটি সিইটিপি নির্মাণের মাধ্যমে বছরব্যাপী চামড়া প্রক্রিয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পরিকল্পনা নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয় । ঈদ মৌসুমে প্রায় ছয় লাখ চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘সাভারের ট্যানারিগুলোয় ছয় লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল। এখন পর্যন্ত চার লাখের বেশি চামড়া এসেছে। আরো চামড়া আসছে। ব্যবস্থাপনা উন্নত করায় এবার কোনো আড়তেই অরাজকতা হয়নি।'

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন