লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাতের ময়দান

মুসলিম বিশ্বের কল্যাণ কামনা

বণিক বার্তা ডেস্ক

শুক্রবার শুরু হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। গতকাল ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ মিনা থেকে আরাফাত ময়দানে উপস্থিত হন। হজযাত্রীরা এদিন জাবালে রহমত পাহাড়ে ওঠেন। এ পাহাড়ে উঠেই বিদায়ী হজের ভাষণ দিয়েছিলেন শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) ছবি: এপি।

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ আরাফাতের ময়দানে গতকাল আত্মশুদ্ধি ও পাপমুক্তির আকুল বাসনা নিয়ে এভাবেই নিজেদের উপস্থিতি জানান দেন সারা বিশ্ব থেকে সমবেত মুসলিমরা। 

হজ মহান আল্লাহর একটি বিশেষ বিধান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান সব মুসলিম পুরুষ ও নারীর ওপর যা ফরজ। জিলহজ মাসের নির্দিষ্ট দিনে (মূলত ৯ জিলহজ) নিয়তসহ ইহরাম পরিধান করে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা এবং পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করাই হজ। 

আরাফাতের ময়দানে বা এর পাশের ক্ষমার পাহাড়ে (জাবালে রহমত) অবস্থান নিয়ে খুতবাহ শুনেছেন, তিলাওয়াত-তাসবিহাত পড়েছেন, আদায় করেছেন নামাজ। মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে জানিয়েছেন শত আর্জি। আরাফাতের ময়দানে এ অবস্থান হজের প্রধান ফরজ।

হজের খুতবায় আহ্বান জানানো হয় শান্তির পথে মুসলমানদের এক থাকার। অনৈক্য থেকে সরে গিয়ে একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে বিশ্ব গড়ার। বিভেদ-হানাহানি ভুলে এক হয়ে পথ চলার। খুতবায় মুসলিম বিশ্বের কল্যাণ কামনা করা হয়।

হজের খুতবায় ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য বিশেষভাবে দোয়ার আহ্বান জানান মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়েখ মাহের আল মুয়াইকিলি। ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের মুসলমানরা যুদ্ধের কবলে। তারা বিপর্যস্ত। তাদের খাওয়ার পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই, পৃথিবীর সব ধরনের আরাম ও সুখ থেকে তারা বঞ্চিত। তাদের জন্য দোয়া করুন। বিশ্ব মুসলিমের কাছে এটা তাদের পাওনা।’

খুতবায় শায়েখ মাহের আল মুয়াইকিলি আরো বলেন, ‘যারা ফিলিস্তিনিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন, অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহযোগিতা করছেন তারাও দোয়ার হকদার। এছাড়া যারা হজযাত্রীদের সেবা করছেন তারাও দোয়ার হকদার।’

তিনি বলেন, ‘তাকওয়া মানুষকে সফলতা ও মুক্তি দেয়, তাকওয়া অবলম্বনকারীরা কিয়ামতের দিন দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্ত থাকবেন। যে তাকওয়া অবলম্বন করবে আল্লাহতায়ালা তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দেবেন যেখান থেকে সে কল্পনাও করতে পারবে না। যে তাকওয়া অবলম্বন করবে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে তাকে প্রতিদান দেবেন।’

আরাফাতের ময়দানে সমবেত মুসল্লিরা মসজিদে নামিরায় আদায় করেছেন জোহর ও আসরের নামাজ। ১ লাখ ১০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এ মসজিদ ও এর ৮০ হাজার বর্গমিটার চত্বর ছাপিয়ে রাস্তা ও আশপাশের বাগানেও নামাজে দাঁড়িয়ে যান মুসল্লিরা। বিকালে মুসল্লিরা পা বাড়ান প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরের মুজদালিফার পথে। মাগরিব ও এশার নামাজ সেখানে পড়েন তারা। সেখানেই রাতে খোলা আকাশের নিচে ছিলেন, যা ওয়াজিব।

এ সময়েই তারা প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাথর সংগ্রহ করেন, যা মিনার জামারায় প্রতীকী শয়তানকে উদ্দেশ করে ছোড়া হবে। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর হাজিরা কেউ ট্রেনে, কেউ বাসে, কেউ হেঁটে মিনায় ফিরে নিজ তাঁবুতে ফিরবেন।

মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিয়ে মাথার চুল ছেঁটে (ন্যাড়া) গোসল করবেন। এরপর কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। এটি হজের আরেকটি ফরজ। কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাঈ (সাতবার দৌড়ানো) করবেন। মিনায় তারা যতদিন থাকবেন, ততদিন প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারবেন। সবশেষে কাবা শরিফ বিদায়ী তাওয়াফের (ওয়াজিব) মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

বিশ্বের প্রায় ১৬০টি দেশের ২৫-৩০ লাখ হজযাত্রী এখন হজ পালনের লক্ষ্যে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ থেকে গেছেন ৮৫ হাজার। এর মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন