ফ্রিজ রফতানির পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি

ছবি : বণিক বার্তা

দেশের রেফ্রিজারেটরের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি কেমন?

অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও আবহাওয়ার দিক থেকে বিবেচনা করলে দেশের ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজার বেশ অনুকূলে রয়েছে। ইলেকট্রনিক পণ্য এখন আর বিলাস পণ্যের তালিকায় নেই; নিত্যপণ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে গ্রাহক তার প্রয়োজনের তাগিদে ইলেকট্রনিক পণ্য কিনছেন। এছাড়া দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, নগরায়ণের ফলে একক পরিবারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা নেয়ার আকাঙ্ক্ষা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতির কারণে ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজার বিকশিত হচ্ছে। রেফ্রিজারেটর এখন সাশ্রয়ী দামেই পাওয়া যাচ্ছে। আশা করছি ঈদ ঘিরে ফ্রিজের বাজারের আরো প্রসার ঘটবে। বিগত বছরগুলোয় আমরা দেখেছি, ঈদ ঘিরে ফ্রিজ বিক্রি ১০-১৫ শতাংশ বাড়ে। এবার আরো বাড়বে বলে আশা করছি। 

ডলারের উচ্চ মূল্য ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ফ্রিজের দামে কেমন প্রভাব ফেলছে? 

আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালরে মূল্যবৃদ্ধি, জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়া ও ডলারের মূল্য সমন্বয়ের কারণে পণ্যের দাম কিছুটা সমন্বয় করা হয়েছে। তবে আমাদের সঠিক উৎপাদন পরিকল্পনা, ব্যয় ব্যবস্থাপনা ও ক্রেতার ক্রয় সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করায় ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব রেফ্রিজারেটরে খুবই সীমিত। ভোক্তাদের ক্রয় সক্ষমতা পরিবর্তন এবং সঠিক মূল্য সমন্বয়ের কারণে বাজারে ফ্রিজের চাহিদায় কোনো প্রভাব পড়েনি। 

আপনারা নিজস্ব কারখানায় বাংলাদেশের মাটিতে কনকা-হাইকো ব্র্যান্ডের ফ্রিজ তৈরি করছেন। আপনাদের কারখানা এবং এর সক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চাই। 

আমরা ১৯৮০ সাল থেকে ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসায় আছি। ১৯৯৮ সাল থেকে আমরা কনকা, হাইকো ও গ্রি ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করছি। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে আমাদের অ্যাসেম্বলিং কারখানার যাত্রা শুরু হয়। ২০১৫ সালে আমরা দেশেই সম্পূর্ণরূপে ফ্রিজ উৎপাদনের কার্যক্রম হাতে নিই। ২০১৮ সাল থেকে কনকার সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে উৎপাদন শুরু করি। ২০১৮ সাল থেকেই আমরা আমাদের সব পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদন করছি। এ কারখানা করতে গিয়ে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। আমাদের কারখানার বিশেষত্ব হলো এখানে আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ইউরোপ ও এশিয়ার উন্নত দেশ থেকে আনা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। অর্থাৎ আমাদের উৎপাদিত পণ্য যেন আন্তর্জাতিক মানের হয়, এ কথা মাথায় রেখেই কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছি। এছাড়া আমাদের কারখানায় আন্তর্জাতিক মানের নতুন নতুন প্রযুক্তি ও কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। 

বর্তমানে কোন ধরনের ফ্রিজের চাহিদা বেশি?

আমাদের ৬৩০ লিটারের ফ্রিজও আছে। উচ্চবিত্তদের মধ্যে এসব ফ্রিজের চাহিদা বেশি। তবে আমাদের দেশে মূলত ১৬৫ থেকে ৩১৫ লিটারের ফ্রিজের চাহিদা বেশি। এসব ছোট ফ্রিজও আমাদের রয়েছে।

আপনারা ফ্রিজে প্রযুক্তিগত কী কী নতুনত্ব এনেছেন?

দেশের মানুষের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের পণ্য উপহার দিতে কনকা প্রতিনিয়ত কাজ করছে। যোগ করা হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। আমাদের রয়েছে ফেস-আপ ফোমিং টেকনোলজি। এর কারণে ফোমিংয়ের মান ভালো হয় এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। এটি খাবার দীর্ঘ সময় সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে। 

আমাদের অ্যাক্টিভেটেড কার্বন ডিওডোরাইজার প্রযুক্তি রয়েছে। এ প্রযুক্তি ব্যাকটেরিয়াকে ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত ডিঅ্যাক্টিভ করে খাবারের গুণগত মান ধরে রাখে। এক খাবারের গন্ধ আরেক খাবারে যায় না। কনকার ওয়াইডেস্ট ও ডিপেস্ট ডিজাইনের ফ্রিজগুলোয় অনেক জায়গা থাকে। এছাড়া রয়েছে হিউমিডিটি কন্ট্রোলার। এটি ফ্রিজের বক্সে সংরক্ষিত সবজি দীর্ঘদিন সতেজ রাখে।

বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের ভোল্টেজ ওঠানামার কারণে ফ্রিজে নানা সমস্যা দেখা যায়। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে কনকা ফ্রিজে ওয়াইড ভোল্টেজ রেঞ্জ যোগ করা হয়েছে, যেন ১২৫-২৬৫ ভোল্টেজ পর্যন্ত ইলেকট্রিসিটি আপ-ডাউন করলেও আলাদা করে ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজারের প্রয়োজন না হয়। 

এর বাইরে আমাদের প্রতিটি ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলো তৈরিতে ১০০ শতাংশ ফুড গ্রেডেড প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। তাই খাবারের বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে। আমাদের ফ্রিজের অভ্যন্তরে থাকা বক্সগুলোও শতভাগ ফুড গ্রেডেড। কনকা ফ্রিজে ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ডোর গ্যাসকেট সমন্বয় করা হয়ছে, যার কারণে দরজায় কোনো ফাঙ্গাল হয় না। এটি শতভাগ এয়ারটাইট হওয়ার কারণে বাইরের বাতাস ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না এবং ভেতরের বাতাসও কোনোভাবে বাইরে যেতে পারে না। কনকার ভিটামিন ফ্রেশ টেকনোলজি ফ্রিজের মধ্যে ২০ দিন পর্যন্ত সবজি ও ফলের পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ রাখে। 

পাশাপাশি বাংলাদেশে কনকাই প্রথম ফ্রিজের মধ্যে ডোর অ্যালার্ম টেকনোলজি নিয়ে এসেছে। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুরা ফ্রিজের দরজা খুলে রেখে দেয় বা নিজেদের ভুলেও অনেক সময় দরজা খোলা থাকে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে কনকা ফ্রিজে এ নতুন প্রযুক্তি যোগ করা হয়েছে। ৩০ সেকেন্ডের বেশি সময় ফ্রিজ খোলা থাকলে দরজা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সচেতনতামূলক অ্যালার্ম দেয়া হবে, যাতে অতিরিক্ত কুলিং লস হওয়া থেকে বিরত থাকা যায়। ফলে ফ্রিজ দীর্ঘদিন ভালো থাকে।

কনকা-হাইকো ফ্রিজ কতটা বিদ্যুৎসাশ্রয়ী?

কনকা-হাইকোর সব ফ্রিজ আমাদের আশপাশের পরিবেশ, গ্রাহকের আকাঙ্ক্ষা ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই প্রস্তুত করা হয়। সেজন্য আমাদের স্মার্ট টেকনোলজি বা ইনভার্টার টেকনোলজি প্রচুর বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। আমাদের ফ্রিজ বিএসটিআইয়ের ফাইভ স্টার এনার্জি রেটিংসমৃদ্ধ, যা ৭১ শতাংশ বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সহায়ক। এ প্রযুক্তি শব্দদূষণ রোধ ও দ্রুত ঠাণ্ডা হওয়ার জন্যও ব্যবহার করা হয়।

ভবিষ্যতে ফ্রিজ রফতানির কথা বলেছেন। এ লক্ষ্যে কতটা অগ্রসর হতে পেরেছেন?

আমরা যখন বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করলাম, তখন থেকেই পরিকল্পনা ছিল দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমাদের পণ্য রফতানি করা হবে। আশা করি, গার্মেন্ট শিল্পের পর ইলেকট্রনিকস খাতও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি অংশ হবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। শিগগিরই আমরা আশপাশের দেশে পণ্য রফতানি করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। বর্তমানে এ খাতের জন্য সরকারের নীতিমালা ইলেকট্রনিকস শিল্পে বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপনে যথেষ্ট অনুকূল বলেই আমরা বিশ্বাস করি। আশা করি, স্বল্প সময়ের মধ্যেই মেড ইন বাংলাদেশ ট্যাগে আমরা পণ্য রফতানি করব। 

আপনাদের ফ্রিজ ইএমআই বা কিস্তিতে কেনার সুযোগ আছে?

আমরা সবসময় চিন্তা করি, কীভাবে গ্রাহককে আরো সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায়। আমাদের শোরুম ও ডিলার শপগুলোয় ইএমআই সুবিধা রয়েছে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে জিরো ইন্টারেস্টে গ্রাহক ২৪ মাস পর্যন্ত কিস্তিতে আমাদের ফ্রিজ কিনতে পারবেন। এছাড়া আমাদের নিজস্ব  ১২ মাসের সহজ কিস্তির ব্যবস্থা আছে। 

সামনে ঈদুল আজহা। ক্রেতারা নানা ধরনের ফ্রিজ কেনেন এ সময়ে। ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের কোনো বিশেষ সুবিধা দিচ্ছেন কি?

আমরা সব উৎসবেই গ্রাহকদের জন্য কোনো না কোনো অফার রাখি, যেন গ্রাহক স্বচ্ছন্দে আমাদের পণ্য কিনতে পারেন। আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে আমাদের রয়েছে বিশেষ স্ক্র্যাচ কার্ড অফার। এ অফারে একজন ক্রেতা কনকা ও হাইকো ব্র্যান্ডের ফ্রিজ, এলইডি টিভি, ওভেন ও ওয়াশিং মেশিন কিনলে একটি স্ক্র্যাচ কার্ড পাবেন, যার মাধ্যমে তারা জিতে নিতে পারেন গোল্ড জুয়েলারি ও কনকার এলইডি টিভিসহ অসংখ্য আকর্ষণীয় পুরস্কার।  

সাক্ষাৎকার শাকেরা তাসনীম ইরা 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন