৫০ শিশুশিল্পীর তুলিতে গ্রামীণ খেলাধুলার চিত্র

জান্নাতে নাঈম

ছবি: লেখক

‘যদি পৌঁছাতে চাও আগে, তবে সময় থাকতে ঘুরে হাঁটা ধরো অন্য পথে’—মুরব্বিদের বলা এ উক্তির দায়িত্ব এখন গুগল ম্যাপের ওপর। কেননা ঢাকার নাগরিকরা এখন গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়ে রাস্তায় চলাচল করে। ২৫ মে বিকালবেলা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে বাড্ডা রামপুরার রাস্তা দিয়ে ফেরার সময় তীব্র যানজটে আটকা পড়ি। ১ ঘণ্টায় বাস বাড্ডা লিংক রোড পৌঁছায়নি। তাই কাজ নেই তো খই ভাজ। কৌতূহল থেকে মোবাইল থেকে গুগলে লোকেশন সার্চ করলে চোখে পড়ে চ ৭২/১/ডি, এজে হেইটস ভবনে অবস্থিত অবিন্তা চারুকলা চিত্রশালার নাম। প্রগতি সরণিতে এমন একটি জায়গা আছে! অথচ জানি না। বাস থেকে নেমে নির্দেশমতো গিয়ে এ চিত্রশালার দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে উঠল। এ যেন পাখিকুঞ্জ। কিচিরমিচির শব্দে মেতে উঠেছে প্রাঙ্গণ। আর হবেই না বা কেন! বিশাল ঘরজুড়ে বসেছে শিশু-কিশোরদের মিলনমেলা। সঙ্গে তাদের অভিভাবকরা তো আছেন। এমন উৎসবঘন পরিবেশে এলে তখন কি আর জ্যামে আটকে থাকা বিরক্তিকর পরিস্থিতির কথা মনে থাকে! উৎফুল্ল মনে দেখতে লাগলাম দেয়ালজুড়ে ঝুলে থাকা বাংলাদেশের গ্রামীণ খেলাধুলা নিয়ে আঁকা চিত্রকর্ম। প্রত্যেকটি ছবির বিষয় এক এবং কোনো শিল্পকর্মের ওপরে আঁকিয়ের নাম লেখা না থাকায় বোঝা গেল, প্রতিযোগিতা চলছে।

গ্যালারিতে স্থান পাওয়া কয়েকটি ছবিতে ফুটে উঠেছে নৌকাবাইচের দৃশ্য। আঁকিয়েরা চিত্রভাবনায় তুলে এনেছেন গ্রামীণ বাংলার জনপ্রিয় এ উৎসব, যা নদীমাতৃক বাংলাদেশের পরিচয় বহন করে। এছাড়া রঙ-তুলিতে তুলে এনেছেন ফুটবল, ক্রিকেট, ইচিং বিচিং, ওপেন টু বায়োস্কোপ, কড়ি খেলা, কানামাছি, লাঠি খেলা, কাবাডি, কুতকুত, গোল্লাছুট, ষাঁড়ের লড়াই, বউ-ছি, বলী খেলা, জোল্লাভাতি/টোপাভাতি, ডাংগুলি, দাড়িয়াবান্ধা, নোনতা খেলা, পিঠ ফাটান্তিজ, নৌকাবাইচ, রুমাল চুড়ি, পুতুল বৌ, ফুল টোক্কা, বাঘ-ছাগল, মার্বেল, মোরগ লড়াই, লাটিম, লুডু, ষোলোগুটি, এক্কা দোক্কা, রস-কসসহ নানা রকম গ্রামীণ খেলার ছবি।

প্রদর্শনী ঘুরে দেখছিলেন দর্শনার্থী ফারজানা কুইন। এ আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চিত্রকর্মগুলো ছোট ছোট শিক্ষার্থীর আঁকা হলেও তাদের চিত্রগুলো আমাকে এক মুহূর্তের জন্য ছোটবেলায় ফিরিয়ে নিয়ে গেল।’

মিরপুর এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইমরুল কায়েস রাফসানের আঁকাও এখানে প্রদর্শিত হয়েছে। অনুভূতি জানতে চাইলে সে জানায়, ‘সারা দেশ থেকে আসা ছবির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি।’

এ প্রদর্শনীর আয়োজক সুপার কিডস ইনিশিয়েটিভসের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও তানজিল হাসানের সঙ্গে এ উদ্যোগ নিয়ে কথা হলে তিনি জানান, ‘এটি মূলত ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড আর্ট ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক ইভেন্টের ২০২৫ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় সপ্তম আন্তর্জাতিক আর্টস অলিম্পিয়াডের বাংলাদেশ অধ্যায়। প্রায় ৭০০ ছবি জমা পড়ে। সেখান থেকে বাছাই করে নির্বাচন করা হয় প্রদর্শনীর এ ৫০টি ছবি।’

শুক্র ও শনিবার ২৪-২৫ মে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানে পাবনার ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী শ্রীময়ী বসাক, বগুড়ার মো. হামিম-উজ-জামান, ঢাকার প্রার্থনা মণ্ডল, দিনাজপুরের আরিসা হোসেন ও ঢাকার আহনাফ ওহি তাজদিদের আঁকা পাঁচটি শিল্পকর্মকে মনোনীত করা হয়, যা বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন