সমুদ্রে বিলীনের পথে গল্ফ কোর্সগুলো

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : কবলস্টোনগলফ ডটকম

স্কটল্যান্ডের প্রাচীনতম কয়েকটি গল্ফ কোর্স সমুদ্রে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

সাম্প্রতিক ঝড় এবং ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান গণঅর্থায়নের চেষ্টা করছে।

পূর্ব উপকূলের লিঙ্ক কোর্সগুলো বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছে। শুধু গত বছরেই মন্ট্রোজ গল্ফ ক্লাবের প্রায় সাত মিটার বা ২৩ ফুটের মতো জমি সমুদ্রে বিলীন হয়েছে।

মোট ৩৪টি উপকূলীয় গল্ফ কোর্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে এগুলো ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে সাইক্লোন স্টর্ম ব্যাবেট আঘাত হানার সময় ইনভারনেসের কাছে ব্ল্যাক আইলের ফোর্টরোজ ও রোজমার্কি গল্ফ ক্লাব ফেয়ারওয়ের বিশাল অংশ হারিয়ে ফেলে।

১৭০২ সাল থেকে উপদ্বীপে গল্ফ খেলা হয়েছে। তবে আশঙ্কা রয়েছে, এটি আর ৫০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী নাও হতে পারে।

ক্লাবের চেয়ারম্যান ডগলাস সিম্পসন বলেন, ‘‌সাম্প্রতিক ঝড়ের কারণে আমরা প্রায় ছয় মিটার বা ১৯ দশমিক ৭ ফুট মাটি হারিয়ে ফেলেছি। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা এর আগে কখনো হইনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌গত বছর বা তারও কিছু বেশি সময়ের মধ্যে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। তবে আমরা কখনো এ ধরনের ঝড়ের মুখোমুখি হইনি। ঝড়ের কারণে যে ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা খুই ভয়াবহ।’

গল্ফ কোর্সটি রক্ষার আহ্বান জানিয়ে ডগলাস সিম্পসন বলেন, ‘‌এটি একটি চ্যাম্পিয়নশিপ গল্ফ কোর্স। এটি প্রধান আকর্ষণ। আমাদের সারা বিশ্ব থেকে সদস্য রয়েছে এবং এটি আমাদের রক্ষা করতে হবে।’

উত্তর সাগরের ঢেউয়ের কাছাকাছি অবস্থান করা প্রথম ও দ্বিতীয় টিস রক্ষার জন্য এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। ডগ ওয়াকার ও ডলফিন স্পটাররা সম্প্রতি সমুদ্রসৈকতে খননকারী ও ডাম্পার ট্রাকগুলো ভিড়িয়েছে। পথ রক্ষার জন্য বিশাল পাথরের দেয়াল তৈরি করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় ১ লাখ পাউন্ডের বেশি খরচ হয়েছে। তবে কোর্সটিকে বাঁচাতে হলে আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন।

ডগলাস সিম্পসন বলেন, ‘‌আমি চাই আমার বাচ্চারা, নাতি-নাতনিরা এখানে এসে উপভোগ করুক। কিন্তু আমি কোর্সটির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। ‌যেভাবে সবকিছু চলছে তাতে ১০ বছরের মধ্যে অঞ্চলটি ব্যাপকভাবে পরিবর্তন হতে পারে।’

মন্ট্রোজের উপকূলে এটি একই ধরনের একটি গল্প, একসময় বিশ্বের পঞ্চম প্রাচীনতম এ গল্ফ কোর্সের জন্য গর্ব করা হতো।

তবে গল্ফ কোর্সটির সাবেক চেয়ারম্যান জন অ্যাডামস আশঙ্কা করছেন, টিলাগুলোর ওপর বসে থাকা অন্য টিলাগুলোকে ধুয়ে ফেলার আগে এটি কেবল সময়ে ব্যাপার মাত্র।

তিনি বলেন, ‘‌ধারণা করা হয়েছিল, আমরা প্রতি বছর এক-দেড় মিটার করে হারাব। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি এক বছরে সাত মিটার হারিয়ে ফেলেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌যদি আমরা সাত মিটার করে হারাই তবে এটি খুব শঙ্কার ব্যাপার। এক দশকের মধ্যে এটি ভয়াবহ রূপ নেবে। এটি যদি চলতেই থাকে তবে এটি শহরে গিয়ে ঠেকবে।’

জন অ্যাডামস বলেন, ‘‌তৃতীয়টি সরানো হয়েছিল ২০০৭ সালে। কিন্তু এরই মধ্যে এটি হারিয়ে গেছে। তাই বলা যায়, এখানে যা ঘটছে তা আক্ষরিক অর্থে মানচিত্রটিকে নতুন আকার দিচ্ছে।’

চলতি বছর গল্ফ কোর্সটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে প্রায় ৫ লাখ পাউন্ড বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে স্থানীয় কাউন্সিল কোর্সটিকে ‘‌ম্যানেজড রিট্রিট’ বলে শুরু করার পরামর্শ দিয়েছে।

এদিকে ২০২১ সালের এক তদন্তে দেখা গেছে, স্কটল্যান্ডের ১০৯টি গল্ফ কোর্স উপকূলীয় ক্ষয়ের প্রভাবে ভুগছে কিংবা অদূরভবিষ্যতে ভুগবে এমন শঙ্কায় রয়েছে।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মার্টিন হার্স্ট। তিনি পরিবর্তিত উপকূলরেখা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, ‘‌স্কটল্যান্ডের ক্ষয়যোগ্য উপকূলরেখা আমাদের প্রথম পর্যবেক্ষণের তুলনায় বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যদি বর্তমান খারাপ পরিস্থিত চলমান থাকে, তবে ২০২৫ সালের মধ্যে ৮৫ মিটার বা ২৭৯ ফুট বিলীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ধারণা করি পুরো স্কটল্যান্ডের চারপাশে প্রায় ১২০ কোটি পাউন্ডের সম্পদ উপকূলের কাছে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’

মার্টিন হার্স্ট বলেন, ‘‌এটি অবকাঠামো, কিন্তু উপকূলের কাছাকাছি অনেক মানুষও বসবাস করে। ফলে আমাদের এ হুমকিগুলোকে গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। ভাবতে হবে, আমরা কীভাবে মানিয়ে নিতে পারি, প্রশমিত ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এবং এগিয়ে যেতে পারি।’

বিশ্ব গল্ফ সংস্থা আরঅ্যান্ডএ খেলাধুলায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো দেখার জন্য ২০২০ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কোস্টাল চেঞ্জ অ্যাকশন প্ল্যান হলো গভর্নিং বডির গল্ফ কোর্স ২০৩০ অ্যাকশন প্ল্যানের একটি মূল উপাদান।

এটি ২০১৮ সালে পরিবর্তিত জলবায়ু, সম্পদের সীমাবদ্ধতা, গল্ফ কোর্সের অবস্থা এবং খেলার যোগ্যতার ওপর নিয়ন্ত্রণের প্রভাব বিবেচনা করার জন্য একটি শিল্প উদ্যোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, এ পরিবেশের উপাদানগুলো গ্রিনহাউজ গ্যাস কমাতে পারে, অন্যথায় বিশ্ব উষ্ণায়নে অবদান রাখবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন