খেলায় স্পন্সরশিপ

জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে ব্যয় ৫.৬ বিলিয়ন ডলার

জলবায়ু উষ্ণায়ন প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার আন্দোলন জোরদার হচ্ছে।

জলবায়ু উষ্ণায়ন প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। এতে চাপে পড়েছে খাতসংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো। এমন অবস্থায় ব্যবসা পরিচালনার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পেতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশ্বব্যাপী প্রায় দশমিক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে তারা। জলবায়ুবিষয়ক থিংকট্যাংক নিউ ওয়েদার ইনস্টিটিউটের (এনডব্লিউআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মোটরস্পোর্টস, ফুটবল, গলফ বরফের খেলায় এসব অর্থ স্পন্সর করা হয়েছে। খবর গার্ডিয়ান।

এনডব্লিউআই বলছে, বড় পরিসরে আয়োজিত কোনো খেলাই জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর পৃষ্ঠপোষকতার বাইরে যায়নি। ২০০টিরও বেশি স্পন্সরশিপ চুক্তির সন্ধান পেয়েছে তারা। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি, টাইসন ফিউরি অ্যান্থনি জোশুয়ার মতো তারকারাও মধ্যপ্রাচ্যে ধরনের চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর অনুসরণ করা পন্থাস্পোর্টসওয়াশিং নামে পরিচিত। স্পোর্টসওয়াশিং এমন প্রক্রিয়া, যেখানে সুনাম প্রতিষ্ঠা বা ফিরিয়ে আনার জন্য খেলাধুলায় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে জনসাধারণ বা ভোক্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়। অজনপ্রিয় রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে পন্থা অবলম্বনের চর্চা বেশ পুরনো।

২০২৩ সালে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছিলেন, স্পোর্টসওয়াশিংয়ের মাধ্যমে জিডিপি শতাংশ বাড়লে আমরা তা চালিয়ে যাব।

এনডব্লিউআইয়ের ডার্টি মানি প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরবের জাতীয় তেল কোম্পানি আরামকো ছিল স্পোর্টস স্পন্সরশিপে সবচেয়ে বড় একক বিনিয়োগকারী। ১০টি চুক্তির মাধ্যমে প্রায় ১৩০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে কোম্পানিটি। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আইনিওস নামক পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি, যার স্পন্সরশিপ চুক্তির পরিমাণ ৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এছাড়া ব্রিটিশ বহুজাতিক কোম্পানি শেল ৪৭ কোটি এবং ফ্রান্সের শীর্ষ তেল কোম্পানি টোটালএনার্জিস ৩৪ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি স্পন্সরশিপ চুক্তি হয়েছে ফুটবলে। এতে হওয়া মোট ৫৯টি চুক্তির মূল্য প্রায় ১০০ কোটি ডলার। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অর্থ আকর্ষণ করেছে মোটরস্পোর্টস। এতে ৪০টি চুক্তির মাধ্যমে ২২০ কোটি ডলার স্পন্সর করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর দ্বারা সংঘটিতে বায়ুদূষণের ফলে প্রতি বছর ৫০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। অথচ কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যকে খেলাধুলার বিশাল সামাজিক মূলধন স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। একসময় তামাক কোম্পানিগুলো একইভাবে খেলাধুলায় স্পন্সর করেছিল, যা পরে নিষিদ্ধ করা হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোও একই প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে। নিজেদের পণ্যকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপন এবং কোটি কোটি ক্রীড়াভক্তের চোখে এসব কার্যক্রমকে স্বাভাবিক করে তোলাই তাদের লক্ষ্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ধরনের স্পন্সরশিপ চুক্তি জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম চালানোর জন্যসামাজিক লাইসেন্স প্রদান করে। এর মাধ্যমে জলবায়ু সংকট তৈরিতে তাদের ভূমিকা এবং মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতি থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করা হয়।

আরও