দেশে স্টার্টআপ বিনিয়োগ

২০২১ সালে ৪৩ কোটি ডলার এলেও ২০২৩ সালে নেমেছে ৭ কোটিতে

আরফিন শরিয়ত

ছবি : বণিক বার্তা

দেশের স্টার্টআপ খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের ধারা দুই বছর ধরে নিম্নমুখী। দেশের ইতিহাসে এ খাতে সর্বোচ্চ ৪৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ আসে ২০২১ সালে। কিন্তু দুই বছরের ব্যবধানে ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৬ কোটি ডলার কমে দাঁড়ায় ৭ কোটিতে। সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের বিশেষ তহবিল ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ লিমিটেড’ ও ‘লাইট ক্যাসল বিডি’ এক যৌথ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার (ইনোভেটিভ আইডিয়া) অভাব, স্থানীয় মুদ্রার দরপতন ও বিনিয়োগের প্রত্যাশিত পরিবেশ না থাকার কারণে এ খাতে অর্থ কম এসেছে। 

‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২৩’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে দেশে স্টার্টআপ খাতে ৪৬টি চুক্তির বিপরীতে বিনিয়োগ আসে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। পরের বছর ৪৩ কোটি ডলারের বেশি অর্থ আসে ৯৮টি চুক্তির বিপরীতে। দেশের ইতিহাসে এক বছরে এ খাতে এটাই সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। এর মধ্যে ৪২ কোটি ৪৮ লাখ ডলার বিদেশী বিনিয়োগ, বাকিটা আসে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এরপর ২০২২ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ১২ কোটি ৫১ লাখ ৩৭ হাজার ডলারে। ৬৪টি চুক্তির বিপরীতে এ বিনিয়োগ আসে। ২০২৩ সালে ৫৫টি চুক্তির বিপরীতে এ বিনিয়োগ আরো কমে দাঁড়ায় ৭ কোটি ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ডলারে। 

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৮ সালের পর বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়তে থাকে। কভিডের সময়ও বিনিয়োগ ঊর্ধ্বমুখী ছিল। কভিড-পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হলে তার রেশ স্টার্টআপ খাতেও পড়ে। এ সময় বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগ কমে যায়। 

‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট’ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বে স্টার্টআপ খাতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৩৮ শতাংশ কম। তবে বাংলাদেশে কমে যাওয়ার হার আরো বেশি। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বাংলাদেশে স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৪২ শতাংশ। 

স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান শপ-আপের চিফ অব স্টাফ মো. জিয়াউল হক ভূইয়া বলেন, ‘দেশে বিনিয়োগ কমে যাওয়া কিংবা স্টার্টআপ উদ্যোগ সফল না হওয়ার পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি কারণকে প্রাধান্য দেয়া যায়। প্রথমত, আমাদের এখানে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নেই। দ্বিতীয়ত, মুদ্রার দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা অর্থ খাটাতে চাইছেন না। তৃতীয়ত, আমাদের এখানে এখনো আয়বৈষম্য রয়েছে। আবার আমাদের এখানে ইনোভেটিভ আইডিয়া কম। ইনোভেটিভ আইডিয়া না পেলে বিনিয়োগকারী আগ্রহ পান না।’

স্টার্টআপ বাংলাদেশ ও লাইট ক্যাসলের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে বর্তমানে সক্রিয় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৫০০। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, আর্থিক, লজিস্টিকস, ই-কমার্স, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে স্টার্টআপের হাত ধরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। গত ১৪ বছরে দেশে ৯৬ কোটি ১০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ আসে স্টার্টআপ খাতে। এর মধ্যে বিদেশী বিনিয়োগ ৮৮ কোটি ৭০ লাখ ও স্থানীয় বিনিয়োগ ৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। মোট চুক্তি হয় ৪০৬টি। 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মাথাপিছু স্টার্টআপ বিনিয়োগ অনেক কম। দেশে মাথাপিছু বিনিয়োগ দশমিক ৭৩ ডলার। অন্যদিকে পাকিস্তানে মাথাপিছু ১ দশমিক ৫১, ভারতের ১৪ দশমিক ৮২, চীনে ৩৩ দশমিক ২৮ ও সিঙ্গাপুরের ১ হাজার ২০৬ ডলার বিনিয়োগ হয়। 

স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ বলেন, ‘বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ২০২২ ও ২০২৩ সাল বৈশ্বিক স্টার্টআপের জন্য অনিশ্চয়তার সময় ছিল। বৈশ্বিক স্টার্টআপ ৩৮ শতাংশ কমে যায়। তার তুলনায় নতুন ইকোসিস্টেম নিয়ে বাংলাদেশ অনেক ভালো করেছে। দেশী উদ্যোক্তাদের আমরা আকর্ষণীয় ও সাহসী উদ্যোগ নিতে দেখেছি। আর স্টার্টআপ বাংলাদেশ সেসব উদ্যোগে উদারভাবে সহযোগিতাও করেছে। আশা করছি আগামীতে এ খাতে বিনিয়োগ আরো বাড়াতে পারব।’

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার কারণে আমাদের স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগ কমেছে। আশা করছি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা আরো বেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসতে পারব। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০১৩ সালে দেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরি হয়। তখন থেকে আমরা ৯৬ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ আনতে পেরেছি।’ 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন