বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরাই কম্পিউটার প্রশিক্ষক জাহেদুলের ছাত্র

মো. রবিউল ইসলাম

জাহেদুলের প্রতিষ্ঠিত গ্লোবাল আইটি ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণার্থীরা ছবি: রবিউল ইসলাম 

কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়েই নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একসময় টিউশন করাতেন, একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের প্রশিক্ষকও ছিলেন। কিন্তু এসবে তার মন টেকেনি। নিজেই কিছু একটা করবেন এমন আগ্রহ কাজ করত সবসময়। ফ্রিল্যান্সিং করেছেন এবং ইউটিউবেও ভিডিও তৈরি করেছেন কিছুদিন। সর্বশেষ নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন গ্লোবাল আইটি ইনস্টিটিউট নামে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। বলছিলাম বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাহেদুল ইসলাম আহনাফের কথা। ছাত্রজীবনে উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়ে জাহেদুল জানান, নিজেই কিছু একটা করবেন এমন মনোভাব থেকেই ছাত্র অবস্থায়ই উদ্যোক্তা হওয়া তার।  ছোট থেকেই আইটির প্রতি ছিলেন প্রবল আগ্রহী। ২০১৭ সালে এইচএসসি শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং করার সময় থেকেই শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। কিন্তু এতে মন বসেনি তার। ২০১৯ সাল থেকে নিজেই নিজের খরচ চালাতে শুরু করেন টিউশন ও কোচিংয়ে ক্লাস নিয়ে। একটি কম্পিউটার প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক হিসেবে ক্লাস নেয়ার সময়ে উপলব্ধি করেন তিনি পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। প্রশিক্ষণ দেন তিনি কিন্তু তাকে ক্লাসপ্রতি সামান্য কিছু টাকা দেয়া হলেও মোটা একটা অংশ যায় মালিকের পকেটে। তখন থেকেই ভাবতে শুরু করেন নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে প্রশিক্ষণ দেবেন। নিজের স্বাধীনতাও থাকবে এবং নিজের শ্রমের যথার্থ পারিশ্রমিক পাবেন তিনি।

২০২০ সালে করোনাকালে তিনি নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়টি বেশি উপলব্ধি করেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালে গ্লোবাল আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যাংকের লোন ও নিজের সঞ্চয় করা মোট ৩ লাখ টাকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি ভাড়া রুমে ছয়টি ডেস্কটপ দিয়ে শুরু করেন তিনি। ছয়জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা করলেও এক বছর পর বর্তমানে সাতটি ব্যাচে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৪০ জন। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি থেকে মোট ১০০-এর অধিক শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকেই তিনি মাসিক প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করেন। প্রতিষ্ঠানের আয় দিয়েই স্বাচ্ছন্দ্যে চলছেন তিনি। 

ছাত্র অবস্থায় উদ্যোক্তা হওয়া বেশ চ্যালেঞ্জের একটি বিষয় বলছিলেন তিনি। পড়াশোনা ঠিক রেখে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আলাদা একটা সময় বের করা বেশ কঠিন। সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক একটা বিষয়ও থাকে এখানে। পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সাপোর্ট না থাকলে বিষয়টা আরো বেশি চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়ে। তবে সবকিছু গুছিয়ে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পড়াশোনা ঠিক রেখেও সফল উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব—এমনটাই বলছিলেন জাহেদ। বর্তমানে জাহেদের গ্লোবাল আইটি ইনস্টিটিউটে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেল, মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট, সিভি রাইটিং ও বেসিক ফ্রিল্যান্সিংসহ মোট ১০টি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‌উদ্যোক্তা হতে হলে প্রথমে সুষ্ঠু একটি পরিকল্পনা ও পূর্বানুমান জরুরি।  এমন বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে যাতে ঝুঁকি কম। কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারলে সফলতা আসবে বলে আমার বিশ্বাস।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন