‘‌বড় হচ্ছে নিজের ব্যবসা, চাকরি দিচ্ছি অন্যদের’

ফিচার প্রতিবেদক

নিজ কারখানায় ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী টাইলো ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা রাসেল শেখ ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

২০১৯ সালে জীবনের বড় একটি ঝুঁকি নিয়ে বসলাম। পার্টটাইম জব থেকে নিজের জমানো টাকা দিয়ে আরএমজি শার্ট নিয়ে কাজ শুরু করলাম। কিছুদিন যেতেই ব্যবসায় বড় লসের মধ্যে পড়ে আবার চাকরিতে প্রবেশ করি। কিন্তু উদ্যোক্তা জীবন ছেড়ে এসে চাকরিতে আমার আর ভালো লাগছিল না। আবার ব্যবসাটাও ভালো চলছিল না। ২০১৯ সালের শেষের দিকে এসে কিছু সমস্যা ও সমাধান খুঁজে বের করে একটি ফ্যাশন স্টার্টআপ মডেল তৈরি করে ফেললাম। আবারো স্বপ্ন দেখতে শুরু করি বড় হওয়ার। আবার ঘুরে দাঁড়াই। তৈরি পোশাক খাতে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার পেছনের গল্প বলছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন অ্যান্ড অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল শেখ। প্রতিষ্ঠা করেছেন টাইলো (TYLO) নামে এক তৈরি পোশাকের ব্র্যান্ড। 

টাইলো মানে ট্রাস্ট ইউর লাইফস্টাইল অন-আস (টাইলো)। দৈনন্দিন লাইফস্টাইলের সঙ্গী পোশাকের বিশ্বত্ব ব্র্যান্ড হিসেবে মানুষের আস্থা অর্জন করতেই এ নাম। তবে মানুষের আস্থায় এরই মধ্যেই বিস্তৃতি হয়েছে ব্যবসার। গড়ে তুলেছেন ছোট্ট কারখানা, যেখানে কাজ করছেন ১১ জন কর্মী। এছাড়া অফিসে কাজ করছেন আরো ছয়জন। বর্তমানে তার পোশাক কারখানায় তৈরি হচ্ছে সব ধরনের শার্ট, পাঞ্জাবি। ভবিষ্যতে শুধু প্লাস সাইজ মানুষের জন্য একটি আলাদা ব্র্যান্ড করার পরিকল্পনা রাসেলের, যেখানে থাকবে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পোশাক। 

অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগে ভর্তি হওয়ার আগে রাসেল জানতেন না মার্কেট রিসার্চ কীভাবে করতে হয়, মার্কেট ডেমো কেন লাগে, ফান্ড কীভাবে পেতে হয়, ভালো টিম কেন লাগবে, মানি বার্নের ক্ষেত্রে কী স্ট্র‍্যাটেজি ফলো করতে হয়, সাপ্লাই চেইন কেন স্ট্রং করতে হবে। কিন্তু এ বিভাগে পড়তে এসে অনেক কিছুই শিখেছেন রাসেল।  তিনি বলেন, ‘‌বিভাগ থেকে এখনো আমাকে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাওয়ার জন্য মেন্টরিং করা হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসার জন্য ফান্ডিং দিয়েও সহায়তা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে ৬ লাখ টাকার ফান্ড নিয়েছি কিছুদিন আগে কিন্তু ফান্ডিং পাওয়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল দুই বছর আগে বিভাগ থেকে পাওয়া ৪০ হাজার টাকার ফান্ড থেকে। আমার সব থেকে বড় অনুপ্রেরণা হচ্ছে আমি এ বিভাগে এসে এমন একটি পরিবেশ পেয়েছি, যেখানে সবাই উদ্যোক্তা হতে চায়। এ মানুষদের জন্যই আমার পথচলা অনেকটা সহজ হয়েছে।’

একজন উদ্যোক্তা হওয়ায় ব্যবসার পাশাপাশি পড়াশোনাও ঠিকভাবে চালিয়ে যেতে হচ্ছে রাসেলের। বিভাগের নানা সহপাঠমূলক কাজেও যুক্ত রাখেন নিজেকে। ব্যবসার জন্য ম্যাটেরিয়াল সোর্সিং, ফ্যাক্টরি ম্যানেজমেন্ট, ফান্ডিং ম্যানেজমেন্ট, এমপ্লয়মেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও প্রডাক্ট ডেলিভারি সবকিছু মনিটরিং করতে হয় তাকে। পড়াশোনা ঠিক রেখে সফল উদ্যোক্ত হিসেবেই নিজের পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন রাসেল। তিনি বলেন, ‘‌অনেক ভালো লাগে যখন দেখি নিজের ব্যবসার বিস্তৃতি হচ্ছে। অন্যদেরও চাকরি দিতে পারছি। এটি আমার জন্য সত্যি আনন্দের। এখনো অনেকটা পথ বাকি। আমি এমন একটা জায়গায় আমার টাইলো ব্র্যান্ডকে নিয়ে যেতে চাই, যাতে আগামী পাঁচ বছর পর আমি ইন্টারন্যাশনালি আমার বিভাগ, ইউনিভার্সিটি ও দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারি।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন