টিউশনিতে হাঁপিয়ে উঠে শখের ‘‌কায়া’য় সাফল্য

নাজমুল হাসান

হৃদিকা চন্দ পৃথা ছবি: লেখকের সৌজন্যে

কথায় আছে শখের তোলা আশি টাকা। অনেক পয়সাকড়ি খরচ করে যেমন শখকে ঘরে তোলা যায়, তেমনি শখ বিক্রি করেও অর্থ আয় করা যায়। শখের কাজ করে উপার্জন করার মতো পৃথিবীতে সন্তুষ্টির কী আছে আর?  হৃদিকা চন্দ পৃথা চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) মেকাট্রনিক্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন অনলাইন শপ ‘‌কায়া’। বিক্রি করছেন নিজের ডিজাইন করা কাঠের গয়না, চাবির রিং, হ্যান্ড পেইন্টেড পাঞ্জাবি, রিকশা পেইন্টেড সানগ্লাস, ফেসলেস পোর্ট্রেট অন ক্যানভাস, হ্যান্ড পেইন্টেড টি-শার্ট, হ্যান্ড পেইন্টেড টোট ব্যাগ প্রভৃতি। শুরুতে চুয়েটকেন্দ্রিক বিক্রি শুরু করলেও বর্তমানে তার কাজের চাহিদা চুয়েটের গণ্ডি পেরিয়ে দেশজুড়ে। 

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ব্যবসা শুরু করেন পৃথা। একটি হাতে আঁকা টি-শার্ট ছিল তার বিক্রি করা প্রথম পণ্য। শুরুর দিকের ক্রেতাদের প্রায় সবাই ছিলেন পরিচিত মানুষজন ও সহপাঠীরা। তখন সাড়া কম থাকলেও গত দুর্গাপূজার পর বিক্রি বহু গুণে বেড়ে যায়। এখন এত অর্ডার আসে যে মাঝে মাঝে অনেক অর্ডার নেয়াও সম্ভব হয়ে ওঠে না। আঁকাআঁকিতে পৃথার হাতেখড়ি ছোটবেলায়ই। প্রাথমিকে পড়তেন চট্টগ্রামের ফুলকি সহজপাঠ বিদ্যালয়ে। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিদিন আঁকাআঁকি অনুশীলন করানো হতো এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করা হতো। বড় হয়ে ইনস্টাগ্রাম ও পিন্টারেস্টে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ দেখেও অনুপ্রেরণা পান পৃথা।

চুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আর দশটা শিক্ষার্থীর মতো টিউশনি শুরু করেন তিনি। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠিন কারিকুলামের মধ্যে থেকে নিয়মিত টিউশনি করাতে গিয়ে একসময় হাঁপিয়ে ওঠেন পৃথা। এরপর টিউশনির বিকল্প কিছু একটা খুঁজতে থাকেন। তখন তার বড় বোন পরামর্শ দেন, যেহেতু শখের কাজটা থেকে আয় করা সম্ভব তাহলে এটা দিয়েই শুরু হোক। সেই থেকেই শুরু।

কায়া শব্দের আভিধানিক অর্থ শরীর বা দেহ। পৃথা যেসব পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন তার সবই পরিধানযোগ্য বা ক্যানভাসে আঁকলেও তা শারীরিক অবয়বকে কেন্দ্র করে, এজন্যই কায়া নামকরণ। কায়ার মালিক এবং ডিজাইনার সবই পৃথা। চুয়েটের মধ্যে পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছার কাজটা তার এক বন্ধু করে দেয়। আর সারা দেশে কুরিয়ারের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করেন পণ্য।

সফলতার পথে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক পথ। সবচেয়ে বেশি কষ্টদায়ক ছিল মানুষের অনুৎসাহিত করা কথাবার্তা। অনেকে হাতের কাজের যথার্থ মূল্যায়ন করতে চায় না। সেক্ষেত্রে পণ্যের কম দাম দিতে চান। আবার অনেকে বলেছেন, শিক্ষাজীবনে চর্চায় থাকার জন্য টিউশনি করানো সবচেয়ে ভালো উপায়, তাই এসবের চেয়ে টিউশনি করানো উচিত। পৃথার ইচ্ছে আপাতত স্নাতক শেষ করা। আর একই সঙ্গে কায়াকে এগিয়ে নেয়া। যারা ভবিষ্যতে পৃথার মতো কিছু করতে চায় তাদের পরামর্শ দিয়ে তিনি জানান, যদি কাঁচামালের জোগান হাতের নাগালে থাকে, তাহলে সাতপাঁচ না ভেবে নিজের শখটাকে কাজে লাগান। আর্থিক লাভের পাশাপাশি মানসিক শান্তিও পাবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন